চিন্তাসূত্র: এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই আসছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
কাজী লাবণ্য: বইমেলায় ‘আয়োলিতার পুরুষ’ নামে আমার একটি গল্পগ্রন্থ আসছে। এটি প্রকাশ করেছে চলন্তিকা প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত।
নামগল্প ছাড়াও এই বইয়ে সংসার, হাজারমুখী রোদসী, ধূসর জোসনা, লিজার ট্রাংক প্রমুখ নামে মোট ১৩টি ছোটগল্প রয়েছে। সমাজ, সংসার, সম্পর্কের টানাপোড়েন, বেকারত্ব, ধর্মীয় সংশয়, প্রভৃতি বিষয়কে উপজীব্য করে এগিয়েছে গল্পগুলোর আখ্যান।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
কাজী লাবণ্য: প্রকৃতিতে যেমন মৌসুম আছে, সত্যি বলতে কি, সবকিছুরই একেকটা মৌসুম থাকে। লেখকরা মেলার মৌসুমে বই প্রকাশ করবেন, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আবার চাহিদামাফিক একসঙ্গে বিপুল বইয়ের প্রাপ্তিস্থানও তো মেলাই। তাইবলে বছরের অন্যসময় করবেন না, তা নয়। যেকোনো বিষয়ে প্রতিযোগিতা থাকা ভালো কিন্তু সেটা অসুস্থ হলে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
কাজী লাবণ্য: একটি মেলা তার বিভিন্নরকম বৈশিষ্ট্য নিয়ে সব ধরনের মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু তা সাহিত্যের ক্ষেত্রে কোনো বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে না বলে মনে হয়। তবে মানুষকে বিশেষ করে শিশুদের বইমুখী করে তোলার ক্ষেত্রে বইমেলার অবদান অনস্বীকার্য।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
কাজী লাবণ্য: অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। তা একদিকে যেমন ইতিবাচক, তেমনি নেতিবাচকও বটে। শিক্ষিত তরুণরা; বিশেষত যারা বই ভালোবাসেন, তারা তাদের বেকারত্ব ঘোচাতে এই শিল্প নিয়ে কাজ করতে পারেন। তবে মনে রাখা দরকার, ‘প্রকাশনা একটি শিল্প’। হরেদরে লোক এই শিল্পে ইচ্ছামতো আসবে আর যা খুশি করবে হতে পারে না! জাতির মেধা, মননের জায়গা হচ্ছে মানসম্মত বই, বইয়ের লাইব্ররি। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা, কোলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে যে বইমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন, আজ তা আমাদের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, সাড়ম্বরপূর্ণ অমর একুশে বইমেলায় পরিণত হয়েছে।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ, বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন? বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
কাজী লাবণ্য: আমি আগেই বলেছি, যে এটি একটি ‘শিল্প’। কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে চলবে না। এখানে মানসম্মত একটি বই করার জন্য অনেক ধরনের কাজ করা দরকার। যেমন সম্পাদনা, প্রুফরিডিং; এসব করার দায়িত্ব প্রকাশকের। কাজেই ইচ্ছা করলেই কেউ কেবল বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির কাজটি করতে পারে না।