চিন্তাসূত্র: এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই আসছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
সাইফ বরকতুল্লাহ : এবার বইমেলায় আসছে আমার চতুর্থ গল্পের বই ‘১০টি প্রেমের গল্প’। এটি প্রকাশক করেছে জাগতিক প্রকাশন (স্টল নম্বর ৭২)। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন কাব্য কারিম। গুরুত্বহীন এমন কিছু বিষয়, যা আমাদের দিনযাপনের প্রাত্যহিকতায় ধরা দেয় না, হয়তো আমরা নিজেরাও সেভাবে মনে ঠাঁই দেই না।অথচ বিশেষ কিছু মুহূর্তের অনুষঙ্গে হঠাৎ-ই সেসব মাথার মধ্যে এসে ভিড় করে। রচিত হয় ‘বন্ধুত্ব’। এরপর প্রেম। প্রেমের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। আবার প্রেম অনেক সময় রহস্যময়তারও। এরকম ১০টি গল্প থাকছে এই বইয়ে। এই সংকলনের প্রতিটি গল্পের বিষয় ভাবনা প্রেম। প্রেমে মানুষ অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। প্রেমের অভিজ্ঞতায় ভালো ও মন্দ দুটোই আছে। সবার জীবনেই প্রেম আসে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।তবে এই প্রেমে পড়া বিষয়টি আমি পজিটিভ দেখি। এছাড়া এই গ্রন্থে প্রেমের গল্পগুলোতে রয়েছে বর্তমান সময়ের ব্যক্তিমানুষ ও সমাজের প্রতিফলন।অজস্র টানাপোড়েন সত্ত্বেও কোথায় যেন আমরা সবাই চলমান সময়ের কাছে জানু মুড়ে বসতে বাধ্য।প্রত্যেকটি গল্প আমাদের সবার জীবনেরই অঙ্গ, জীবনের ঘটনাবলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সাইফ বরকতুল্লাহ: বিষয়টিকে খারাপ বলছি না। বইমেলা লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের জন্য উৎসবের মতো। দীর্ঘদিন ধরে বইমেলা চলার কারণে এটা এখন আমাদের উৎসবের অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সাহিত্যের জন্য ভালো। তবে শুধু মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশনার বিষয়টি থেকে অনেকেই বের হচ্ছেন। এখন অনেক প্রকাশক সারা বছরই বই প্রকাশ করছেন। অনেক প্রকাশনা বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বইমেলায় অংশ নিচ্ছে।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
সাইফ বরকতুল্লাহ: এর প্রভাব নানামুখী। বইমেলায় প্রতিদিন পাঠক, লেখক পরস্পরের সান্নিধ্যে আসেন। লেখালেখিকে ঘিরে আড্ডা দেন। আবার বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষ তালিকা করে বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বই কেনেন। বইমেলা ঘিরে লেখক-পাঠকের মিথস্ক্রিয়া আর সাহিত্য বিষয়ক আলাপচারিতাও বাড়ে। গণমাধ্যমে, সামাজিক মাধ্যমে বইয়ের প্রচারে ব্যস্ত থাকেন লেখক-প্রকাশক। এসব ইতিবাচক।
তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে বলব, বইমেলাকেন্দ্রিক গণমাধ্যমকর্মীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা বইমেলা কভার করেন, অনেকেই লেখকদের নাম সঠিকভাবে জানেন না। এক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক লেখক বিব্রত হন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিকমাধ্যমেও অনেক সমালোচনা আমরা দেখি। তাই বলব, বইমেলার সংবাদ প্রচারে গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
সাইফ বরকতু্ল্লাহ: অবশ্যই বইমেলা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আমি দেখেছি বইমেলা ঘিরে বিভিন্ন প্রকাশনী তরুণ লেখকদের পাণ্ডুলিপি আহ্বান করছে এবং অনেক প্রকাশনী তাদের খরচেই তরুণদের বই প্রকাশ করছে, বইয়ের প্রচার করছে। আবার প্রকাশনা শিল্পে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এগিয়ে আসছে এবং তারা বেশ ভালো করছে।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ; বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
সাইফ বরকতুল্লাহ: বইয়ের মান নিয়ে অভিযোগ পুরনো। আমি বলবো, এখন অনেক লেখক-প্রকাশক এ বিষয়ে সচেতন। বিশেষ করে আমাদের মতো যারা সারা বছর লেখালেখির সঙ্গে জড়িত তারা কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস। আমি বলব, যারা নতুন প্রকাশনা জগতে পা রাখবেন, তারা সম্পাদনার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। তাহলে প্রকাশনায় ভালো করতে পারবেন। আরেকটি কথা, এখানে লেখক, প্রকাশক উভয়েরই ভূমিকা আছে বলে আমার মনে হয়। বইয়ের প্রচার-প্রসারের জন্য গালভরা বিজ্ঞাপন না দিয়ে সঠিক ও সত্যভাবে বইয়ের বিষয়বস্তু বা আকর্ষণীয় দিক পাঠকের সামনে তুলে ধরা উচিত।