আসমা সুলতানা শাপলা—কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখছেন। এবার মেলায় তাঁর কোনো বই প্রকাশিত হয়নি তাঁর। বইমেলা ও সমকালীন সাহিত্য চর্চা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বলেছেন কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবারের নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
আসমা সুলতানা শাপলা: নতুন বই সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত। বিশেষ করে বই মেলার। ভীষণ ব্যস্ততায় দুদিন মাত্র মেলায় এসেছি। তাতে ছটি বই আমার কাছে এসেছে। যার দুটির প্রথম কবিতাটি পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে ভালো লেগে যায়। আর তাতেই পুরো বই দুটি পড়ে ফেলি। নতুন বই সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে একটিই কথা বলতে চাই—তা হলো নতুন বই সারাবছর আসুক। পাঠক সারাবছর বই খুঁজুক। আর মিডিয়াটা পাবলিশার্স মিডিয়া না হয়ে রাইটার্স মিডিয়া হয়ে উঠুক।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বইমেলা সম্পর্কে আপনার প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা?
আসমা সুলতানা শাপলা: বইমেলা থেকে প্রাপ্তি হলো প্রতি বছর বই মেলাকে উপলক্ষ করে নবীন ও পুরাতন লেখকরা বেশ কিছু বিশেষ আমাদের জন্য আনেন। তাতে একসঙ্গে অনেক অনেক নতুন বই আমরা পাই। তাতে আবার খেইও হারাই। কোনো নীতিমালা নেইতো। তাই আসলে বই হবার যোগ্যতা আছে কটা লেখার সেটা না ভেবেই অনেক বই চলে আসে মেলায়। এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার কাম্য নয়। আমার অত সময় কোথায় যা তা পড়ে সময় নষ্ট করবো। তাই বই প্রকাশের আগে লেখকেরও দীর্ঘ প্রস্তুতির দরকার। আর পাঠক হিসেবে আমি খুব হিসেবী-চুজি। তাই যা তাতে আমি খরচও করতে ইচ্ছুক নই আবার লেখা ভালো না লাগলে দ্বিতীয় অক্ষর পড়া আমার পক্ষে সম্ভভ নয়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সমকালীন সাহিত্য নিয়ে আপনার চিন্তা–ভাবনা কেমন?
আসমা সুলতানা শাপলা: সাহিত্য বিষয়টাই হলো আবেগের রসের। আর তাতে প্রাণ সঞ্চার করাই হলো পাঠকের সঙ্গে লেখকের যোগের জায়গা। সমকালীন সাহিত্যে আমি খুব এক্সপেরিমেন্ট দেখি। খুব পরিশ্রমী লেখক দেখি। কিন্তু তাতে প্রাণ কম পাই। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারণও আছে। এক্সপেরিমেন্ট আর আবেগ রস আর রসায়ন সবে মিলে দারুণ যৌগ না হলে কোনোই লাভ নেই। ইটের পর ইট গেঁথে বাড়ি হয়। ইটের বদলে ব্লক ব্যবহার করা হয়। বাড়িকে মজবুত করার জন্য। কিন্তু শব্দের পর শব্দ গাঁথলেই কবিতা হয়না।কাব্য কিংবা গল্প হয় না। ছোট ছোট প্রাণের ছোট ছোট ব্যথার দারুণ করুণ রস পাঠকের মনে লাগছে এমন কম পাই। এখানে প্রাণের যোগ আরো বেশি দরকার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বর্তমান লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা ভালো লাগে?
আসমা সুলতানা শাপলা: বর্তমান লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, দারুণ ভালো লিখছেন। তাদের লেখা ভালো লাগে। কবিতার প্রকরণে তাদের বেসিক ধারণাও গভীর। দেখি কতদিন তারা ধরে রাখতে পারেন।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আসমা সুলতানা শাপলা: লিখে যেতে চাই যেমন লিখছি। যা যেমন চলছে চলতে থাকুক। প্রবহমান থাকি যেন চিন্তায় । এই পরিকল্পনা। বিশেষ কিছু নেই। তবে কবিতা থেকে গদ্যের দিকে খানিকটা এগুতে চাই। উপন্যাসের চিন্তা আছে। কিন্তু এর বিশাল আবহকে ভয় পাই। সারাজীবনে একটিই অন্তত ক্লাসিক লেখা লিখতে চাই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্যের কোন শাখা আপনাকে বেশি টানে?
আসমা সুলতানা শাপলা: অবশ্যই কবিতা। কবিতা এবং কবিতা। খুব অল্প সময়ে অল্প পরিসরে বিশাল আবহ ধারণ করতে পারার ক্ষমতা আছে কেবল কবিতারই। কবিতার ছোট্ট শরীরে ধারণ করা এই বিশালতা আমাকে দারুণ টানে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা…
আসমা সুলতানা শাপলা: ভালোবাসা প্রেম-প্রতারণা-বিরহ-ক্ষরণ, অতঃপর দ্রোহ সবকিছুই একান্ত নিজের। দারুণ সম্পদ। এই সম্পদই লেখকের অনুপ্রেরণা। আমার তো সবিশেষ।অশেষ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু?
আসমা সুলতানা শাপলা: সাহিত্যচর্চার সঙ্গে প্রচারণার কোনো যোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এ ভীষণ একার। নিভৃতের। এ ধ্যান। এ নামাজ। এ ইবাদত। এটা নীরবে একাকীই করতে হয়। এর কোনো সাধনসঙ্গী নেই। তবে সাহিত্যকে মানুষের কাছে পৌঁছতে হলে একটা মাধ্যম অবশ্যই চাই। আর সেটা হলো প্রচার। সাহিত্য চর্চায় একজন লেখক খুবই সার্থক হতেই পারেন। কিন্তু প্রচার বিমুখ হলে তা কেউ জানলো না। তবে চর্চাকে গতিশীল রাখবার জন্য অবশ্যই প্রচার প্রসার আর পেট্রোনাইজেশন দরকার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার বই আপনাকে কেমন পুলকিত করে?
আসমা সুলতানা শাপলা: অনেক বছর বই বের হয় না। মানে ইচ্ছে করেই দূরে আছি এই পূলক থেকে। বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে সব অনুভবই বদলায়। দেখি ভবিষ্যতে কেমন পুলক অনুভব করি।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে?
আসমা সুলতানা শাপলা: আসলে লেখালেখিতে তেমন কোনো স্বীকৃত সফলতা আমার নেই। যেটুকু আছে সেটা আমি নীরবে টের পাই। অন্যের ঈর্ষা আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রেরণা দেয় লিখতে। যখন কেউ আমার লেখা পড়ে ব্যক্তি আমাকে আমার জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে তখন আমি বুঝতে পারি হয়তো লেখাটা বেশ হয়েছে। বলতে পারেন বেশ কিছু মানুষ বা লেখকের এই ধরনের অনুপ্রেরণায় এখনো লিখে যেতে পারছি। অসাধারণ এই প্রেরণার স্বাদ।