সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবারের নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
লতিফ জোয়ার্দার: এবারের গ্রন্থমেলায় আমার তিনটি বই বেরিয়েছে। ছোটগল্প—‘ভাত ও ভাতারের গল্প’, উপন্যাস-‘সুগন্ধী রুমাল’ এবং শিশুতোষ ‘ভূত বড় অদ্ভুত’। আমার ছোটগল্প বইয়ে নিম্নবর্গের মানুষের জীবনচিত্রসহ চলমান সময়ের গল্প লেখা হয়েছে। আর উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এক তরুণ কবির জীবন ও তার জগৎ। সঙ্গে এক বিষণ্ন কবিতা পাঠক। যা পাঠকদের অন্যরকম ভাবনায় ফেলবে। আর ‘ভূত বড় অদ্ভুত’ পাঁচটি শিশুতোষ গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। গল্পগুলো শিশু-কিশোরদের অন্য ভুবনে নিয়ে যাবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বইমেলা সম্পর্কে আপনার প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা?
লতিফ জোয়ার্দার: এই দিনের জন্য,এই সময়ের জন্য আমি সারাটা বছর অপেক্ষা করি। কবে আসবে বইমেলা। এই মিলনমেলায় নিজেকে উপস্থিত করার জন্য ব্যাকুল থাকি। নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে আমার। নতুন কবি লেখকের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক তৈরি হয় আমার। বইমেলার দিনগুলো স্বপ্নময় যেন আমার কাছে। আমি তারুণ্যের কাছে ফিরে যাই। সাধ্যমতো প্রিয় বইগুলো বইমেলা থেকে কেনার চেষ্টা করি। তবে লিটলম্যাগ চত্বরে আমার সময় কাটাতে বেশি ভালো লাগে। সেখানে একসঙ্গে অনেক প্রিয় মানুষ পেয়ে যাই। তবে লিটলমাগ্যের জন্য আরও ভাবনা রাখতে পারে বাংলা একাডেমি। বছরের অন্য আরেকটি সমেয় লিটলম্যাগের জন্য মেলার আয়োজন করা যেতে পারে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সমকালীন সাহিত্য নিয়ে আপনার চিন্তা–ভাবনা কেমন?
লতিফ জোয়ার্দার: সমকালীন সাহিত্যচর্চায় একটা বাঁক বদলের চেষ্টা চলছে। মিডিয়ার আধিক্যের সঙ্গে তারুণ্যের জোয়ার লক্ষ করার মতো। তরুণদের অনেকই ভালো লিখছে এই সময়ে। তবে হাতেগোনা গদ্যকার পাচ্ছি। তরুণদের গদ্য সাহিত্যের হাল ধরতে হবে। তবেই আমরা আগামীতে ভালো-ভালো গদ্যকার পাবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বর্তমান লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা ভালো লাগে?
লতিফ জোয়ার্দার: বর্তমান লেখকদের ভেতর অনেকের লেখা ভালো লাগে। তাদের লেখা পড়ে মুগ্ধ হই আর ভাবি তাদের মতো লিখতে না পারার অক্ষমতার কথা।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
লতিফ জোয়ার্দার: ভবিষ্যতে আমি বড় একটা উপন্যাসে হাত দিতে চাই। সেই সঙ্গে নিরীক্ষাধর্মী ছোটগল্প লিখতে চাই। আর প্রতি বছর একটি হলেও শিশুতোষ বই লিখতে চাই। আর কবিতার সংসারে সব সময় থাকতে চাই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্যের কোন শাখা আপনাকে বেশি টানে?
লতিফ জোয়ার্দার: কবিতাই আমার সব ভালোবাসা। তবে ছোটগল্প আমাকে বেশি টানে। সবাই এখন আমার কাছে ছোটগল্পই বেশি চায়। মোট কথা আমি বেশি বেশি গদ্য সাহিত্য রচনা করতে চাই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা…
লতিফ জোয়ার্দার: আমার অনুপেরণা অগ্রজ কবি গল্পকার যারা আছেন। তাদের বই পড়ে আমি অনুপ্রেরণা পেতাম। তবে যার বেশি অনুপ্রেরণায় আমি লিখি, তিনি আমার স্ত্রী তহমিনা জোয়ার্দার মিনু, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু?
লতিফ জোয়ার্দার: শুনুন, প্রচার বিমুখ যারা, নীরবে লিখে যান যারা। আমার মনে হয় সাফল্য তাদের ধরা দেয়। মেধা-মনন-লেখনী শক্তি না থাকলে মাতামাতি করে কোনো লাভ হয় না।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার বই আপনাকে কেমন পুলকিত করে?
লতিফ জোয়ার্দার: আমার বইয়ের আমিই প্রথম পাঠক। জানি আমার ভালো না লাগলে অন্যদেরও ভালো লাগবে না। আমার লেখা থেকেই আমি আমার নতুন লেখার অনুপ্রেরণা পাই সব সময়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে?
লতিফ জোয়ার্দার: কখনো বিব্রত হইনি। ভাবতে ভালোই লাগে। আর কেউ না হলেও ঈর্ষার মানুষগুলো তো আমায় নিয়ে ভাবে।