হেনরী গোমেজ
ঢাকার বাইরের সাহিত্য সংগঠনগুলোর মধ্যে বগুড়া লেখক চক্র, রাজশাহীর কবিকুঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমি ও চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি ইতোমধ্যে সাহিত্যপ্রেমীদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য সাহিত্য সংগঠনের মতো চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমিও শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। ২০১৯ সাল থেকে সংগঠনটি এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। এবার মোট ৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেবে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি। কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধে, সার্বিক সাহিত্য, সংগীতে, শিশুসাহিত্য, বাচিকশিল্প ও শিক্ষা। কিন্তু কারা পাচ্ছেন এবারের পুরস্কার? এই নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনা-কল্পনা। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে আলোচিত হচ্ছে ৩/৪ জনের নাম।
চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি প্রবর্তিত পুরস্কারের মধ্যে কবিতা শাখা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। তবে, একাডেমি সংশ্লিষ্ট ও সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে দুটি নাম। একজন বীরেন মুখার্জী, অন্যজন শামীম হোসেন। তাদের দুজনের সঙ্গে কেউ কেউ প্রত্যয় হামিদের নামও উচ্চারণ করছেন। প্রথম দুজনের কবিতার সঙ্গে বাংলা কবিতার পাঠকমাত্রই পরিচিত। তৃতীয়জন অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত।
কবিতার পরই রয়েছে কথাসাহিত্য পুরস্কার। এই শাখায়ও তিন জনের নাম ঘুরে-ফিরে আলোচনায় এসেছে। তারা হলেন, নাসিমা আনিস, হামিদ কায়সার, নাহিদা আশরাফী। এরমধ্যে নাহিদা আশরাফীর পরিচিতি অপেক্ষাকৃত বেশি। তাহলেও বাকিজনের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাসিমা আনিসের সঙ্গে চাঁদপুরের সম্পর্ক নাড়ির সম্পর্ক। একাডেমির কর্তাব্যক্তিরা হয়তো তাকেই বেছে নেবেন। তবে, হামিদ কায়সারের পাল্লাও একেবারে হালকা নয়। ফলে তার সম্ভাবনাও রয়ে গেছে।
কথাসাহিত্যের পর রয়েছে প্রবন্ধ সাহিত্য। এই শাখায় যার নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি ফারুক সুমন। সাহিত্য সমালোচকদের ধারণা এবারের পুরস্কার তার ঝুলিতেই পড়তে পারে। তবে, সৌম্য সালেক কিংবা জাহাঙ্গীর হোসেনকেও বাদ দেওয়া যায় না। কেউ কেউ বলছেন, বিচারকদের রায় হয়তো সৌম্য সালেকের পক্ষেও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চাঁদপুরের সন্তান হিসেবে জাহাঙ্গীর হোসনকে তারা আপাতত বাদ দিতে চান।
প্রবন্ধ সাহিত্যের পর রয়েছে সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য পুরস্কার। এই ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নাম জামশেদ ওয়াজিদ। এরপরই রয়েছে হুমায়ুন কবীর ঢালীর নাম। সাহিত্যশ্লিষ্টদের ধারণা, এবারের পুরস্কার হুমায়ুন কবীর ঢালীর ঘরেই উঠবে। তবে, কেউ কেউ মনসুর আজিজের নাম বললেও বেশিরভাগেরই ধারণা, তার এই পুরস্কার পাওয়ার সঙ্গত কোনো কারণ নেই। বাকি দুজনের ভাবমূর্তির কাছে তার নামকে যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন না তারা।
৫ নম্বর ক্যাটাগরি সংগীত। এই শাখায় সবচেয়ে আলোচিত নাম তপন বাগচী। নম্বই ভাগেরও বেশি সাহিত্যমোদী-সংগীতপ্রেমীর ধারণা এবারের পুরস্কার নিশ্চতরূপেই পাচ্ছেন তপন বাগচী। তবে, তার সঙ্গে আরও দুজনের নাম কেউ কেউ উচ্চারণ করছেন। তারা হলেন আশিক কবির ও মীর শাহবুদ্দীন।
এরপর রয়েছে শিশুসাহিত্য। এই শাখায় তিনজনের নাম প্রায় সমানভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। তারা হলেন রানা জামান, প্রণব মজুমদার ও মকবুল হামিদ।
বাচিকশিল্পকে এখন স্বতন্ত্র শিল্প হিসেবে গণ্য শুরু হয়েছে। তাও বেশ কয়েকবছর ধরে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমিও এই শাখায় পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এবার এই পুরস্কারের তালিকায়ও তিনজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। তারা হলেন, তানজিনা তাবাস্সুম, নূরে-ই আলম ও মাসুদ রহমান।
কেবল শিল্প-সাহিত্য নয়, শিক্ষাকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে একাডেমি। আর এবার এই পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আজমল হক চৌধুরী, ইলিয়াস বকুল ও ওয়াহেদুল ইসলাম।
তবে, এসবই শিল্প-সাহিত্যমোদীদের মধ্যে চলা আলোচনার সারাংশ। শেষপর্যন্ত হয়তো এই সংক্ষিপ্ত তালিকার কেউ না-ও পেতে পারেন। এই ৮ শাখায় হয়তো সম্পূর্ণ অনালোচিত ৮ জনই পেতে পারেন চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার। এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামও ঘোষণা হবে পুরস্কার প্রদানের দিন। সেই দিনটিও আপাতত সম্ভাব্য পুরস্কারজয়ীদের নামের মতোই রহস্যাবৃত। ততদিন অপেক্ষায়ই থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি প্রবর্তিত প্রথমবারের (২০১৯) পুরস্কার পেয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন কবিতায় স্বপন রক্ষিত (মরণোত্তর), কথাসাহিত্যে শামস সাইদ, গবেষণা সাহিত্যে নূরুল ইসলাম ফরহাদ ও লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনায় ম. নূরে আলম পাটওয়ারী।