(পর্ব—১৭)
নিরিখ বান্ধরে দুই নয়নে,
ভুইলো না মন তাহারে…
ট্রেন থেকে নামতে নামতে গানের সুরটি এসে শ্রবণে ধাক্কা দিলো আলতো করে। ভাটি অঞ্চলের শৈশব এসব লোকজ সুর শুনেই ঋদ্ধ হয়েছে।
ফেরী পারাপারের জন্যে গোয়ালন্দ ঘাটে যখন এলাম, তখন এমন একটা তুতনীল ভোর-আকাশের সঙ্গে পরিচয় হলো যে, আমার সেই বয়স অবধি এরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম। চার পাশের সব মানুষের শব্দ-কোলাহল ছাপিয়ে পারলৌকিক এক জীবন যেন আকাশ থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। সিনেমা হলের রঙিন বড় পর্দার সামনে দাঁড়ালে যে স্বপ্ন ঘোর, কিংবা নিশিতে পেলে যেমন হয়, আমার মনের অবস্থা তখন তেমনই। মনে হচ্ছিল হঠাৎ বানের ওপরে ভাসা পানা হয়ে উদ্দেশ্যহীন কোথায় যেন চলেছি। সেই মুহূর্তে আবার এমনো মনে হয়েছিল যে, শেকড়হীন পরগাছার মতো যেন ঝুলে আছি ভিন্ন এক সময়ের বাকলে।
আমাদের সঙ্গে দুলাভাইয়ের ভাতিজাও আছে। যার পোশাকি নাম ইনসাফ আলী, কিন্তু ডাকনাম খেজমত। আমি তাকে খেজমত মামা ডাকতাম। বয়সে আমি তার ছোট হলেও সম্পর্কের কারণে সেও আমাকে খালা ডাকতো। মাঝেমধ্যেই সকালের বাজার করতে যেতো খেজমত মামা। এছাড়া, মাঝেমধ্যে ডিটোকে পড়াতো, খেলতে নিয়ে যেতো মাঠে ও পার্কে।
আমিও বিমুগ্ধ হয়ে শুনি আর ভাবি, আহা! আমার এমন একটা জীবন কবে শুরু হবে, কে জানে!
বড়দের দেখাদেখি আমিও সেই সময়টায় কিছুদিন সেলাই-ফড়িতে খুব মেতে উঠেছিলাম। ফুল-লতা-পাতার ছবি ও কবিতার মিশেলে অঙ্কিত এক টুকরো কালো বা শাদা কাপড়কে বলা হতো পিকচার। বিভিন্ন ডিজাইনের এই পিকচার ফেরিওয়ালারাই বিক্রি করতে আসতো বাসায় বাসায়। পছন্দমতো সেই পিকচার কিনে জরি ও নানা রঙের পুঁতি দিয়ে সেলাই করতাম। সেলাই শেষে বাঁধিয়ে সেসব দেয়ালে টাঙিয়ে রাখাও এক ধরনের ফ্যাশন ছিল।
পিকচার সেলাইয়ের জরি ও পুঁতি শেষ হয়ে গেলে এক পর্যায়ে খেজমত মামাকে তার কিছু আনতে দিয়েছিলাম। বাজার ঘুরে এসে জানালেন, পেলাম না খালা। দুলাভাই তাকে ডেকে বললেন, তুই কি মাছের বাজারে জরি ও পুঁতি খুঁজেছিস? পেলি না যে! কিছুক্ষণ পরে মামা হাতে লিখে একটা স্লিপ পাঠিয়েছেন, আমার কাছে, মাছের দোকানে জরি ও পুঁতি পাওয়া যায়, ভারি রহস্য! তার বুদ্ধি-জ্ঞান নিয়ে কাকার এই বিদ্রূপ তাকে বেশ আহত করেছিল বলেই মনে হয়েছিল আমার।
পরে আমিই তাকে সরি বলেছিলাম সেদিন। আজ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট। ট্রেনের মধ্যে বসে খেজমত মামার সঙ্গে যে আলাপ করছিলেন দুলাভাই—তা থেকে বুঝতে পারলাম হঠাৎ এই প্রস্থানের কারণ। ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইস্ট পাকিস্তান, খুলনা শাখা থেকে বড় অঙ্কের এক ঋণগ্রহীতার গোডাউন ইনস্পেকশন করার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল দুলাইয়ের প্রতি। ঋণ গ্রহীতার কথা মতো রিপোর্ট না দিয়ে তিনি তার মতো সঠিক রিপোর্ট দিয়েছেন, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুলাভাইয়ের নামে মিথ্যে কেইস করেছে একদিকে, অন্যদিকে ঋণখেলাপি সেই লোক, দুলাভাইকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সব প্রস্তুতিও নিয়েছে। এই খবর দুলাভাই যখন জানতে পেরেছেন, পরিবার নিয়ে একঘণ্টা সময়ের মধ্যে খুলনা শহর ছেড়ে আপাতত তার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন সেদিন।
গোয়ালন্দ ঘাট পার হয়ে এপারে আরিচা ঘাটে নেমে দুলাভাইয়ের ভাতিজা খেজমত মামার সঙ্গে আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।সন্তানাদিসহ বড়’পাকে নিয়ে চলে গেলেন গয়হাটা গ্রামে। খেজমত মামার মুখে বড়’পা-দুলাভাইয়ের এই দুঃসংবাদ শুনে আব্বা-মাও খুব বিচলিত হলেন। রাতটি আমাদের বাড়িতে থেকে পরের দিন চলে গেলেন তিনি।
এই ঘটনার দিন পনেরো বাদেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে আব্বা নৌকা পথে আপাকে দেখতে গয়হাটা রওয়ানা দিলেন। বেশ বড় একটা বজরা নৌকায় সারা দিনের খাবার দাবার নিয়ে উঠেছেন মা, সঙ্গে আমরা সবাই। বেলা চারটার মতো বাজে, গয়হাটা পৌঁছানোর তখনো আধা ঘণ্টা বাকি। নৌকা চলছে লোকালয়ের পাশ দিয়ে কড়চা বন ছুঁয়ে-ছুঁয়ে। নামা-বর্ষার ছড়ানো-ছিটানো জল চারদিকে। কোথাও গভীর, কোথাও বা ক্ষেত খামারের ৫/৬ ফিট ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পানি। খুব বেশি খরস্রোতা না হলেও সাঁতার না জানা শিশু-কিশোদের জন্যে ঝঁকিপূর্ণ তো বটেই।
আমার সবচেয়ে ছোট ভাই শীতলের বয়স তখন দুই বছর কিংবা তার কিছু কমও হতে পারে। কিছুক্ষণ আগেও সে মায়ের কোলে বসে টুংটাং কথা বলছিল সরোদের সুরে। পরিচ্ছন্নবিলাসী ভাইটি আমার পায়ে ধুলা লাগার ভয়ে ওই বয়সেই খালি পায়ে মাটিতে হাঁটতো না। কেউ তাকে ইচ্ছে করে কিংবা মজা করে মাটিতে নামালে, ধুলা ধুলা বলে চিৎকার করে উঠতো।
মধ্যাহ্নের প্রখর উত্তাপের পরে নিস্তেজ সূর্যের ডুবুডুবু বিকেল, চরাচরজুড়ে বইছে নদীর জল-ছোঁয়া শীতল পরশের সুমধুর হাওয়া। মাদকতাময় সেই হাওয়ার টানে ছইয়ের বাইরে এসে সবে বসেছি। বিভিন্ন প্রকারের আখের কতগুলো টুকরো থেকে হলুদ গ্যাণ্ডারির মধ্যখানের একটা বেছে নিয়ে দাঁতে কামড় দিয়ে খাচ্ছি, শীতল তখন ছইয়ের বাইরে আমার পেছনে বসে আছে। হঠাৎ করেই পানিতে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হতেই তাকিয়ে দেখি পাশে শীতল নেই। জলের মধ্যে ওর শাদা-কালো ডোরা শার্টিটি দেখা মাত্রই আমার হৃদপিণ্ড এত জোরে আর্তনাদ করে ওঠে, আমাকে যেন দুভাগ করে ফেলে দিলো ওই জলের ভেতরেই। জীবন-মৃত্যু জ্ঞান হারিয়ে অদ্ভুত এক সাহস ও শক্তিতে ভর করে আমিও তড়িৎ গতিতে এক লাফেই ওকে ধরে ফেলেছি। ততক্ষণে পানি কিছুটা পেটে গেছে তার। মাঝিও লগি ঠেকিয়ে নৌকা থামালো সঙ্গে সঙ্গে।
পেছনের গুলুই থেকে আরও এক মাল্লাও ঝাঁপ দিয়েছিল। মুহূর্তেই যেন ফিল্মমেকার সত্যজিৎ রায়ের ট্র্যাজিক ছায়াছবির একটিদৃশ্যের চিত্রায়ণ চোখের পলকে ধারণ করা হয়ে গেলো। আব্বা হতভম্ব দর্শক, মা যেন সন্তান হারানো বেদনা থেকে অল্পের জন্যে বেঁচে ওঠা স্তব্ধতার সঙ্গীন। দুজনেই ছইয়ের বাইরে এসে হায় হায় করছে। মা কাঁদছে।
শীতলকে মায়ের হাতে তুলে দিয়ে নৌকায় উঠে কামিজ পাজামা পাল্টে নিলাম আমিও। মা শীতলের মাথা খুব কাঠ কাঠ করে মুছে দিয়ে, হাতের তালুতে সামান্য নুন রেখে আমাদের দুজনকে খাওয়ালেন। ভয় পেলেও তা যেন কেটে যায়। সন্ধ্যা নাগাদ বড়’পার বাড়িতে পৌঁছালাম। দুলাভাই বাড়িতে নেই, তিনি ঢাকায় গেছেন অন্যত্র পোস্টিং করাতে।
তালই সাহেব বেঁচে থাকতেই জমাজমি ভাগ করে দিয়েছিলেন ছেলে মেয়েদের মধ্যে। আদি বাড়িতে ছয় ছেলের সংসার সংকুলান সম্ভব নয়। কাজেই যৌথ সংসার ভেঙে সবাই যার যার মতো আলাদা বাড়ি করে নিয়েছে। আদি বাড়িকে কেন্দ্র করে তার বিশ তিরিশ গজের মধ্যেই বাকি চার ভাই তাদের চাষের জমিতে মাটি ভরাট করে নতুন বাড়ি বানিয়েছে।
তিন সন্তান নিয়ে বড়’পাও মূল বাড়ির উল্টো দিকে পুকুর পারে নতুন বাড়িতে থাকেন তখন। যদিও শাশুড়ি তার সঙ্গেই আছেন। বড়’পা যখন বাড়িতে থাকেন না, তখন তিনি অন্য সন্তানদের সঙ্গে থাকেন। বারো জন সন্তানের এই অসাধারণ মা যেমন ধৈর্যশীল ও মমতাময়ী, তেমনি নিরিবিলি মনের মানুষ তিনি। আমার বোন রানুকে ডাকতেন রানীমা। খুব ছোট্ট বয়সেই কল্পকাহিনির মতো বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্প করতে পারতো রানু। যখন তার কাজ করবার বয়সও হয়নি, সেই সময় মাঐমায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে সে কাজের ফিরিস্তি দিয়ে গল্প করতো।
জানেন, মাঐসাব, আমিই তো বাড়ির সব কাজ করি, রুটি বানাই, বদনা মাজি, আব্বার লাঠিটাও মেজে দেই আমি। এত সরল মানুষ ছিলেন মাঐমা, বড়’পাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ও বৌমা, তোমার ছোট বোন এত কাজ করে? বললো, তোমার আব্বার লাঠিটাও মাইজা দেয়! বড়’পা শুনে তো হেসে পাট পাট। দুলাভাইকে ছাড়া বড়’পাকে কিছুটা অসহায় মনে করে আব্বা মা দুজনেই আমাকে বড়’পার কাছে রেখে বাড়িতে ফিরে গেলেন দুদিন পরেই।
দিন দশেক পরে দুলাভাই ফিরে এলেন, ঢাকাতে তার পোস্টিং হলো না, হলো রাজশাহীতে। তাদের পাশাপাশি পাড়ার প্রবীণ একজন অঙ্কের শিক্ষক রেখে দিলেন আমার জন্যে। বাড়িতে এসে সপ্তাহে পাঁচ দিন অঙ্ক বোঝায় আমাকে। সংখ্যা ও শূন্যের ধারণা তিনি আমাকে প্রথম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সমাজে নারী-পুরুষের মূল্যের ফারাক মেনে। তিনি আমাকে বুবু বলে সম্বোধন করে বলতেন, শোন বুবু মেয়েরা হলো শূন্য মানে জিরো। যেহেতু লেখাপড়া জানে না, আয় রোজগার করে না কাজেই তারা শূন্য। ছেলেরা হলো সংখ্যা। ধরো সবচেয়ে বড় সংখ্যা ৯ তাই না?
তার ডানপাশে যদি শূন্য বসাও কত হবে? বলেই আমার মুখের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসতেন। আমি বলতাম—নব্বই হয়। তাহলে ১-এর পাশে শূন্য বসলে কী হবে? আবার বলতাম, দশ। এখন বুঝতে পারছো শূন্য আর সংখ্যার মূল্যে কত তফাৎ।
প্রশাসন ক্যাডারের একজন পাত্রের মূল্য যদি সর্বোচ্চ সংখ্যা ৯ হয়, তার পাশে যে মেয়েটি বসবে শূন্য হিসেবে, তখন তার মূল্য বেড়ে হয়ে যাবে নব্বই। তাই না। একইভাবে একজন নিরক্ষর কৃষকের সংখ্যা ১ হলে, তার পাশে জিরো হয়ে যে মেয়েটি আসবে, তার মূল্য তখন ১০(দশ) এখন বুঝতে পারছো শূন্য আর সংখ্যার মূল্যে কত তফাৎ।
শূন্যেরও মূল্য আছে যদি সে কোনো বড় সংখ্যার পাশে বসতে পারে। বুঝলা বুবু?
-জ্বি স্যার।
এই প্রবীণ শিক্ষকের জ্ঞানের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল বটে, তবে তার মধ্যে পুরুষতন্ত্র এমন জাকিয়ে বসেছিলো যে, তাকে আমি সমর্থন করতে পারতাম না। মুখ ফুটে কিছু বলিনি। শিক্ষকের মুখে মুখে কথা বলতে বারণ করেছেন আমার মা। তাই তার গল্পগুলো ধৈর্য ধরে আমাকে হজম করতে হতো।
একবার তিনি তার অবিবাহিত কন্যাকে গয়হাটা বাজার থেকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছেন। স্কুলবালিকা মেয়েটির পছন্দ হয়নি বলে বাবাকে শাড়িটি বদলে আনতে বলেছিল। আর যায় কোথা।
-তোকে যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবো, স্বামী হিসেবে তাকে তোর পছন্দ না হলে কি, আবার পাল্টে নিবি। বেত্তমিজ মেয়ে কোথাকার!
এই গল্পটি কন্যার পিতা হিসেবে তিনি নিজেই আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন। স্কুলের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে আমাকে যখন তিনি পড়াতেন তখন তার বয়স ৮০এর মতো হবে। এই বয়সের মানুষের মূল্যবোধে কখনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
কোয়ার্টার মাইল হেঁটে গয়হাটা উদয়তারা (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ইংরেজি ক্লাস করি। টিফিন আওয়ারে স্কুল সংলগ্ন হেডস্যার আলী আজগরের বাসায় এসে বসে থাকি, তার স্ত্রী কাঁথায় ফোঁড় দিতে দিতে তাদের বিবাহিত জীবনের প্রথম দিককার মান-অভিমান এবং রোমান্টিক সব ভালোবাসার গল্প শোনান রসিয়ে রসিয়ে।
আমিও বিমুগ্ধ হয়ে শুনি আর ভাবি, আহা! আমার এমন একটা জীবন কবে শুরু হবে, কে জানে!
দুলাভাইর অনুপস্থিতে বড়’পা কীভাবে কি করবে, সেসব পইপই করে বুঝিয়ে দিয়ে দুলাভাই রাজশাহী গিয়ে চাকরিতে জয়েন করেন। প্রতি মাসে ন্যূনতম একবার বাড়িতে আসেন, সন্তান, মা এবং বড়’পার হাট-বাজারের খোঁজ খবর করে পুনরায় চলে যান কর্মস্থলে।
দুই.
১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই (০২:৫৬) মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন। অ্যাপোলো ১১ প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশ অভিযান, যা চাঁদে অবতরণ করে। এটি অ্যাপোলো প্রোগ্রামের ৫ম মহাকাশ অভিযাত্রাযাতে নভোচারীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই ১৬ তারিখে এই অভিযানের সূচনা হয়। এই অভিযানেঅংশ নেন দলপতি নীল আর্মস্ট্রং কমান্ড মডিউল চালক মাইকেল কলিন্স এবং চান্দ্র অবতরণ যানের চালক বাজ অল্ড্রিন। ২০ জুলাই তারিখে আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিন প্রথম মানুষ হিসাবে চাঁদে পা রাখেন।
খুব বিরক্ত হয়ে উত্তর দিতাম বটে, কিন্তু পছন্দ করতাম না এ ধরনের জ্ঞান জাহিরের বাহুল্য।
ইতোমধ্যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ এর মধ্যে চাঁদের বুকে ছয়বার মানুষের অবতরণ ঘটে এবং অসংখ্যবার মনুষ্যবিহীন অবতরণ ঘটে। তবে, সর্ব প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখার গৌরবে পৃথিবী নামক গ্রহটির আনাচে-কোনাচে ঘটনাটি সেবছর ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল, বিশেষভাবে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের মনেও।
আমাদের ইংরেজির শিক্ষক চাঁদে যাওয়ার কাহিনি ইংরেজিতে লিখে নোট দেন ক্লাসে। ১৯৭০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী আমি, কাজেই এই রচনা আমাকে মুখস্ত করতেই হবে। শিক্ষকদেরও ধারণা এ বছর বাংলা ইংরেজি দুই পরীক্ষায় নীল আর্মস্ট্রংকে নিয়ে নিশ্চয় ইংরেজি এসে এবং বাংলা দ্বিতীয়পত্রে রচনাও থাকবে।
চাঁদের মাটিতে পা রাখবার সন-তারিখ, দিনক্ষণ সবিশেষ মুখস্ত করি খাতায় লিখে লিখে। দুলাভাইর এক চাচাতো ভাই ইদ্রিস গয়হাটা উদয় তারা উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী ছিল। বাড়ি থেকে কোয়ার্টার মাইল দূরে গয়হাটা বাজারের কাছেই ছিল স্কুলটি।
তৎকালীন জমিদার কালিকুমার সেন স্থানীয় অবহেলিত জনগণের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে তার মা ‘উদয় তারা সেনচৌধুরানী’-এর নামে স্থাপন করেছিলেন স্কুলটি।
১৮৭৯ সালে বৃটিশ আমলে স্কুলটি মাইনর স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বিশেষত, দুলাভাই ওসমান গণীর নেতৃত্বে তার বন্ধু রেজাউল করিম মোহন, আলী আজগর, হামিদ আলী, নূর মোহাম্মদ খান শরফত মিলে স্কুলটিকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে উন্নীত করে গড়ে তুলতে প্রয়াসী ছিলেন। পরবর্তী সময় আলী আজগর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন শেষদিন পর্যন্ত। আমি যখন ছাত্রী, তখন থেকেই স্কুলটি ‘গয়হাটা উদয়তারা (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিত। আলী আজগর স্যারকে পেয়েছিলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে। তিনি দুলাভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় সব কিছুতেই আমি স্পেশাল কদরও পেয়েছি তাদের কাছে।
অধিকাংশ দিন ইদ্রিসের সঙ্গেই স্কুলে যাতায়াত করতাম। তালইসাব যখন জীবিত, হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।গুজব রটেছে তিনি মারা গেছেন। গয়হাটা বাজারে বসে সেই খবর পেয়ে ইদ্রিস জোড়-বৈঠা মেরে নৌকা চালিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। দুলাভাইয়ের মেঝো ভাই মোতালেব বেয়াইয়ের উদ্দেশে ইদ্রিস বলতে থাকে, চাচাজান যে আইলাইলো, আমি যে তার কাছে চার আনা পয়সা পাইতাম, তার উপায়ডা কী অইবো? মৃত্যুপথযাত্রী চাচার চেয়ে চার আনা পয়সার যে মূল্য অনেক বেশি, ওই বয়সেই ইদ্রিস তা বুঝতে পেরেছিল। দারিদ্র্যসীমার তলানীতে বাস করলে মনের অবস্থা হয়তো এমনই হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বর্ষাকালের শেষে গয়হাটা গ্রামের কলেরার ছোবলে পড়ে খুব অকালে পৃথিবী পরিত্যাগ করেছিল জীবনবাদী আমার এই সহপাঠী বন্ধুটি। ওর উজ্জ্বল মুখখানা ছিল আমার আশৈশব স্মৃতির উজ্জ্বল সবুজ কলাপাতার মতো।
প্রতিবছর ২৫শে জানুয়ারি তালই সাহেব বড়পীর সাহেব অর্থাৎ আবদুল কাদের জিলানীর ওরস মোবারক পালন করতেন। রাতব্যাপী খাওয়া-দাওয়া, গান-বাজনা, ভজন সাধন চলতো। দূর দুরান্ত থেকে বড়পীর সাহেবের আরও ভক্ত মুরিদানেরা আসতো এই উপলক্ষে। এই সময়টাতে তালই সাবের ছয় ছেলে, ছয় মেয়ের সবাই প্রায় উপস্থিত হতো। সারা বছরে দেখা না হলেও এই সময়ে মেয়েরা আসতো বাপের ভিটায়, তাদের সন্তানাদি ও নাতিপুতিসহ। তাদের সন্তান, কারও বা নাতিনীও আমার বয়সী ছিল। দুলাভাইয়ের সেজো ভাইয়ের ছেলে মোহন, মেয়ে মাজেদা ছিল আমার বয়সী। ওদিকে মোতালেব বিয়াইয়ের বড় মেয়ে আয়েশা সর্বক্ষণ বড়’পার কাছেই থাকতো, ডিটো, লিটন, টিটোর দেখাশোনা, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানোর মতো কাজগুলো আয়েশাই করতো বড়’পার নিজের মেয়ের মতো করে। আয়েশা আর আমি প্রায় সমবয়সী। আমার চেয়ে আয়েশা ২/১ বছরের ছোট হবে হয়তো। খুলনায় যখন ছিলাম তখনো আয়েশা আমার বন্ধুর ভূমিকায় ছিল, যদিও সম্পর্কের জন্যে সে আমাকে খালা ডাকতো। তার সঙ্গে আমার শৈশবের অনেক কৌতূহলী ঘনিষ্ঠ স্মৃতি আছে।
বাড়িজুড়ে গমগমা মানুষ, দুলাভাই সবার ছোট ভাই।
পড়াশোনায় যেহেতু সবার মাথার ওপরে, কাজেই, ভাই-বোন, বেটা-ভাতিজা সবাই তাকে মান্য করে চলে, তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে দেখেছি সবাইকে। এমনকী তার চেয়ে বয়সে বড় বোনেরাও যমের মতো ভয় পেতো ছোট ভাইকে। কেন যে তারা এত ভয় পেতো, বুঝতে পারতাম না। ইতোমধ্যে দুলাভাই রাজশাহী থেকে ঢাকার বদলির অর্ডার করিয়ে যোগদান করেছেন সেখানে। বড়’পা সন্তানাদি নিয়ে তখনো বাড়িতে।
ক্লাস শেষ করে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে আমি আমাদের গড়পাড়া গ্রামে চলে এসেছি কিছুদিন আগেই। ইতোমধ্যে আমার সেজো চাচার বড় ছেলে আফতাব ভাই করাচি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বাড়ি ফিরেছে। চাকরি ও বিবাহের পাত্রী দুটোই খুঁজছিল।
আমার মা তাকে খুব ছোটবেলা থেকেই স্নেহ করতেন, এজন্যে প্রায়ই আমাদের বড় ঘরে এসে বসতেন। মা ও আমাদের ভাই-বোন মিলেই আড্ডা দিতেন। যেদিন লাউ রান্না হতো, সেদিন মা আমাদের লাউ দিয়ে মুড়ি খেতে দিতেন। মানিকগঞ্জ অঞ্চলে শীতকালের সকালে রোদে পিঠ দিয়ে বসে কড়কড়া ঠাণ্ডা ভাতের সঙ্গে মুলা-পুটি মাছের সালুন ও আর একটি প্রিয় খাবার লাউঘণ্টের সঙ্গে মুড়ি। আম-দুধে মুড়ি, কোরবানির মাংসের সঙ্গে মুড়ি, গুড়-মুড়ি, পরিশেষে ডালের সঙ্গেও, কিসে নয়?
একটা বড় পাত্রে মুড়ি, পেয়ালায় থাকতো লাউঘণ্ট, সবাই গোল হয়ে বসে একই পাত্র থেকে তুলে তুলে খেতো যার যার মতো। পরিশেষে চা খেয়ে চলে যেতো আফতাব ভাই। আমি লটকে যেতাম পড়ার টেবিলে। আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা জানার পর থেকে আফতাব ভাই মাঝে মধ্যেই ইংরেজি বানান জিজ্ঞেস করতেন, বলো তো ক্যারেকটার বানান কী? খুব বিরক্ত হয়ে উত্তর দিতাম বটে, কিন্তু পছন্দ করতাম না এ ধরনের জ্ঞান জাহিরের বাহুল্য।
তিন.
দুলাভাই রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় যোগদান করেছেন নতুন করে। কিছু দিন পরেই আরামবাগে বাসা নিয়ে বড়’পাকে নিয়ে এলেন ঢাকায়। অঙ্ক-ইংরেজিতে পাকা নই বলে দুলাভাইয়ের পরামর্শ মতো কিছুদিন পরে গ্রাম থেকে তাদের ঢাকার আরামবাগের বাসায় গিয়ে উঠলাম সর্বশেষ প্রস্তুতির জন্যে।
এরমধ্যে একদিন আফতাব ভাই বড়’পার বাসায় এসে উপস্থিত। লক্ষ্য আমি। আমি তাকে বিয়ে করতে রাজি কি না জানতে এসেছেন। আমি অসম্মতি জানালে অন্য কোথাও মেয়ে দেখবে বিয়ের জন্যে। হা অথবা না-সূচক কথাটি আমার মুখ থেকে জানতে এসেছেন।
ছেলে না হতে পারি, ছেলের মতো দায়িত্ব পালনে তো বাধা নেই!
বড়’পার এই বাসাটায় লম্বা টানা বারান্দার একপাশে একটা চেয়ার-টেবিল পাতা ছিল। সারাদিন সেখানে বসেই পড়তাম। মাত্রসপ্তাহ খানেক বাকি আছে আমার পরীক্ষার। সারাক্ষণ ঘাড় গুঁজে থাকি আমি বইয়ের পাতায়। ছোট ছোট ভাগনেরা ঘর-বারান্দা মিলেই নিজেদের মতো খেলাধুলা করে। আয়েশা ওদের কেয়ারটেকার। বড়’পা রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকে এই সময়টায়। দুলাভাই কাজের লোকের হাতের রান্না পছন্দ করেন না, কাজেই সুস্থ-অসুস্থ যেকোনো শারীরিক অবস্থায়ই বড়’পাকেই রান্না করতে হয়।
সেদিন আমার পাশে বসেছিল ভাগনে ডিটো। ডিটোর সামনে কথাটি বলতে পারছেন না বলে আফতাব ভাই পানি-আনার ছল-ছুতায় বার বার ডিটোকে ভেতরের ঘরে পাঠাচ্ছেন কেবলই। এক সময় সুযোগ বুঝে আমার হাত ধরে বলেই বসলেন, প্লিজ, বলো তুমি, আমাকে বিয়ে করবে কি না।
-না, আফতাব ভাই, প্লিজ আপনি চলে যান। আমি অনার্স, এম.এ পাস করার আগে বিয়ে করবো না। তাছাড়া আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হতে পারে না। চাচাতো হলেও আমরা কিন্তু ভাই-বোন। আপনাকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কিছু ভাবি না।
-কেন, আমেজ, তামেজ ভাই মামাতো বোন খুকি আর হেনা আপাকে বিয়ে করেনি?
-তা, তাদের ইচ্ছে। আপনি বাড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত এসেছেন আমার কাছে জানতে, কাজেই আমার ইচ্ছের কথা আমি বললাম।
আমার না-বাচক কথা শুনে হঠাৎ দপ করে নিভে গেলেন যেন। টেবিলে রাখা চা-বিস্কুট-পানি কিছুই স্পর্শ না করেই চলে গেলেন সেদিন।মাস তিনেকের মাথায় আমাদের পাশের গ্রাম হরগজের গৃহস্থ্যবাড়ির এক স্বল্পশিক্ষিত সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলো তার। বাংলাদেশ বেতারের এক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরির সুবাদে পাওয়া সাভারে রেডিও কলোনিতে কাটিয়েছেন জীবনের অনেক বছর। যে সুখ শান্তির আকাঙ্ক্ষায় মানুষ পরিবার গঠন করে, সেসব সবার ভাগ্যে হয় না, চোরাবালি স্রোতে ভেসে যায় কত স্বপ্ন তার কি শেষ আছে?
খুব অকালেই হার্ট অ্যাটাকে এই ভাইটি চলে গেছেন অনন্তলোকে।
আমার এসএসসি পরীক্ষার স্কুলের সেন্টার ছিল টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী গার্লস হাইস্কুলে। ১৮৮২ সালে টাঙ্গাইল সদরে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য এই স্কুলটির স্বপ্ন দেখেছিলেন এক মহীয়সী নারী। যিনি সন্তোষের (টাঙ্গাইলের) পাঁচ আনির জমিদার শ্রীদ্বারকানাথ রায় চৌধুরীর স্ত্রী এবং সুসাহিত্যিক শ্রী প্রমথনাথ রায় চৌধুরী ও স্যার মন্মথরায় চৌধুরীর মাতা রানী বিন্দুবাসিনী চৌধুরাণী।
নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে এই বিদ্যুৎসাহী রমনী ০.৮২ একর জমিসহ একটি একতলা ভবন দান করেছিলেন স্কুলপ্রতিষ্ঠার জন্যে। প্রতিষ্ঠালগ্নে এটি ছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পর্যায়ক্রমে ১৯২২ সালে মাধ্যমিক স্তরে এবং ১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টিকে ১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর জতীয়করণ করা হয়।
অর্ধ শতাব্দী আগে এই স্কুলের শ্রেণীকক্ষের একটি বেঞ্চে বসে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। সেই ১৯৭০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে। স্কুলের হোস্টেলে থেকেছি, পরীক্ষার পুরো সময়টাজুড়ে।
আমার আব্বা ঢাকা থেকে একদিন পরীক্ষা দেখতে এসেছিলেন। সারাজীবন শাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত একহারা গড়নের আব্বা নিরাভরণ এক সৌম্য মূর্তিরূপে আমাদের মনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সেদিনটিতে প্রথম আব্বা এসেছিলেন প্যান্ট-শার্ট-টাই পরে। মনে হলো খুব আনন্দ তার মনে। তারই এক সন্তান এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, সেই আনন্দে যেন নতুন পোশাকে আব্বা উড়ছিলেন।
কী যে ভালো লাগছিল আব্বাকে দেখতে। লজ্জা ও বিভাবনার কাজল চোখে বার বার তাকিয়ে দেখছিলাম আব্বাকে। এরপর আর কোনোদিন তাকে সেই পোশাকটি পরতে দেখিনি। কোনোদিন অনুরোধও করিনি। তবে, আমি যখন এমএ ফাইনালের ছাত্রী, পাশাপাশি রেডিওতে স্ক্রিপ্ট লিখে আয়-রোজগার করি সামান্য, তখন থেকে খুব ভালো দামি গজ কাপড় কিনে আব্বাকে পাঞ্জাবি বানিয়ে দিয়েছি।
সব সময় প্লাস্টিক জুতা পরতে দেখেছি আব্বাকে, যখন একটু বড় হলাম, আমার খুব খারাপ লাগতো, ভাবতাম, আমার আব্বা কেন এত সস্তা জুতা পায়ে দেবেন। আমি তাকে চামড়ার স্যান্ডেল কিনে দিতাম। তেমনি মাকেও।
প্রথম একটা রাজশাহী সিল্কের শাড়ি তাকে আমিই কিনে দিয়েছিলাম। মায়ের যত ভালো দামি শাড়ি ছিল, সবই কলকাতা থেকে তার বড়বোন রাশেদা খালা কিনে দিতেন। গ্রাম থেকে খুব বেশি বেড়ানো হতো না বলে রেগুলার সুতিশাড়ি আব্বা কিনে দিতেন বেশি। মা নিজেও কখনো শাড়ি বায়না করেনি। আমি কোনোদিন মাকে কিছু চাইতে শুনিনি। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হতো আমার মা মুখে না চাইলেও নিশ্চয় ভালো দামি একটা শাড়ি পেলে তার ভালো লাগবে। এই ভাবনা থেকেই ছাত্রাবস্থায় আমি মা ও আব্বার জন্যে ভেবেছি। বেস্ট জিনিশটি তাদের খাওয়াতে পরাতে চেষ্টা করেছি। তাছাড়া আমাদের মাথার ওপর বড় ভাই নেই বলে, আব্বা-মায়ের মনে যে দুঃখবোধ ছিলো, মনের অজান্তেই আমি যেন তাদের সেই অভাব পূরণে নিজের কাছে নিজে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।
ছেলে না হতে পারি, ছেলের মতো দায়িত্ব পালনে তো বাধা নেই!
চলবে…
বালিকার চরৈবেতি-১৬॥ দিলারা হাফিজ