পর্ব—১০
নিরুদ্দেশ যাত্রা
এক.
প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির সময় আমার নাম ছিল দিলরুবা সুলতানা। মা-ই রেখেছিলেন। বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পাঠ করা আমার মা, দিলরুবার সঙ্গে সুলতানা জুড়ে দিতে বাদ রাখেননি। ফারসি ‘দিলরুবা’র বাংলা অর্থ হৃদয়গ্রাহী, হৃদয়হরণকারী বা মনোমুগ্ধকর। আরেক অর্থ প্রেমিকা। সে যাই হোক, আমার স্বপ্নবাদী মা নিজে যা হতে পারেননি, সন্তানের ভেতরে তার উজ্জীবন খুঁজেছেন প্রতিনিয়ত।
আমাদের সব ভাই-বোনের ডাকনাম কিংবা পোশাকি নাম—সবই তার নিজের মনের মতো করে নির্বাচন করেছেন। মায়ের দেওয়া ‘দিলরুবা সুলতানা’নামের অধিকারী ছিলাম আমি সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত। সপ্তম শ্রেণীর ঘাত-প্রতিঘাতের পরে ডাবল প্রমোশনে এক ধাক্কায় নবম শ্রেণীতে উঠে গেলাম। এই পরিকল্পনার প্ল্যানার ছিলেন বড় দুলাভাই ওসমান গণী।
বড় দুলাভাই ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের এম.এ। চাকরি করতেন ব্যাংকে। বড়’পাকে নিয়ে তখন থাকতেন খুলনায়। আমরা তাকে ডাকতাম দুলাভাই, কেউ কেউ গণী দুলাভাইও ডাকতো।
ওই সময় তিনি খুলনা থেকে বড়’পাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আমাদের বাড়িতে। আমিও ভৈরব বাজার রেলওয়ে স্কুলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র হিসেবে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে সবে বাড়িতে এসেছি। অনেক দিন পরে দুলাভাই আমাকে দেখলেন সেবার।
আমার মাকে বললেন, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী হিসেবে অন্যদের তুলনায় গায়ে পায়ে দিলু অনেক বড়সড়ো গেছে। যেহেতু ওর মেধা ভালো, কাজেই ডাবল প্রমোশন দিয়ে ওকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করে দিন।
আমার আব্বা-মাকে তিনি বোঝাতে সক্ষম হলেন এবং তাদের গ্রামের ‘গয়হাটা উদয়তারা হাই স্কুল’-এর মাধ্যমে আমার ডাবল প্রমোশন তিনি নিশ্চিত করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।
পূর্বাপর নবম শ্রেণীতেই এসএসসি পরীক্ষার জন্যে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হতো, সেজন্যে তিনি আমার পূর্বের নাম কেটেছেঁটে ততধিক আধুনিক করে ‘দিলারা হাফিজ’ নামে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছিলেন যথাসময়ে। ফলে দিলারা হাফিজ নামটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর মতো পাক্বা হয়ে গেলো।
বসন্ত বাতাসের এক গোধূলি বেলা সেদিন, স্যার অঙ্ক বোঝাচ্ছিলেন, একটু ঝুঁকে তার সমাধান দেখতে গিয়ে স্যারের একগুচ্ছচুলের স্পর্শ এসে লেগেছিল আমার কপালে, হঠাৎ কেমন যেন অন্যরকম এক ভালোলাগা বোধকে আমি সেদিন প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম।
এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্রে লিপিবদ্ধ এই নাম পরবর্তী সময়ে উচ্চতর পড়ালেখা, চাকরি-বাকরি—সব কিছুতেই ব্যবহৃত হলো। বিবাহ-উত্তর সময়ে মেয়েদের নাম পরিবর্তনের যে ফ্যাশন ছিল, তা থেকে দূরে রেখেছি নিজেকে। বহিরঙ্গে অসম্ভব শান্তশিষ্ট অতি ভদ্র, বিনীত গোছের একজন মেয়ে আমি। যাকে বলে ভ্যাবলাকান্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বৈষম্যের অগ্নিতে দগ্ধ হতে হতে কখন যে দ্বৈত সত্তার একটিতে এত প্রতিবাদের খড়কুটো জমেছে, তা যেন আমার নিজেরও অজানা, অচেনা। কাজেই বিয়ের পরে, সময় যখন কিছুটা অনুকূলে এসেছিল, তখনই ভেবেছি যে, একজন ব্যক্তির স্ত্রী হয়েছি বলে, সেইটি আমার একমাত্র পরিচয় নয়, আমি একজন আলাদা মানুষও বটে।
বহু কষ্ট-শিষ্টে অজপাড়াগাঁ থেকে পড়ালেখা করে যে নামটিকে এতদূর পর্যন্ত বহন করে এনেছি, একটি সনদপত্রের মাধ্যমে, বিয়ের কারণে পিতার নামের অংশটুকু এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে মিসেস আজাদ হতে কেন যেন ইচ্ছে হয়নি। আমার আমিতেই বাস করতে চেয়েছে আমার অহংবোধ, আমার আপন সত্তা, যে শুধু নারী নয়, একজন একক ব্যক্তি মানুষও বটে।
এছাড়া শুরুতে আমার এমনও মনে হয়েছে—যেহেতু পিতা উপার্জন করে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করে তোলে, সেই কৃতজ্ঞতা স্বীকারার্থেই যেন পিতার নাম বা পদবি জুড়ে দেওয়া হয় ছেলে মেয়ে উভয়ের নামের সঙ্গে। চিরকাল নারীকে পরমুখাপেক্ষী করে রাখার যে রাজনৈতিক কৌশল বিশ্বজুড়ে ব্যাপ্ত, তারই ধারাবাহিকতায় মেয়ের বিয়ের পরে পিতার স্থলে সেই দায়িত্ব পালন করে স্বামী, কাজেই তখন পিতার নাম বদলে ফেলে স্বামীর নাম যুক্ত করে নেয় মেয়েরা। মেয়েরা যে পরনির্ভরশীল, এটাও তার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে চোখে আঙুল দিয়ে যেন বুঝিয়ে দেয় এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এভাবেই মেয়েরা যেন নিজেকে নিজেই ছোট করে ফেলে অনেক বেশি, ডেকে আনে আত্মার হীন্মন্যতা।
হয়তো অনেক মেয়ে তা বুঝতেও অক্ষম। স্বামীর জৌলুস ধারণ করে নিজেকে তার মধ্যে বিলীন করতেই ভালোবাসে এই জাতীয় শিক্ষিত মেয়েরাও। মেয়েরা যদি নিজের সম্মান নিজে রাখতে না জানে, অন্য তা সেধে কেন দেবে তাকে?
শিক্ষা ও উপার্জন থেকে দূরে রাখার কৌশল ভেঙে ইদানীং উপার্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন অনেক মেয়েই তাদের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন হয়েছে। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের আগে আমাদের সময়ে সমাজটা বর্তমানের মত এত অগ্রসর ছিলো না, তা বলাই বাহুল্য।
ছেলেদের কিন্তু বিয়ের পরে নাম পাল্টাতে হয় না। কারণ খুব সোজা, তারা নিজেরা উপার্জনক্ষম এবং অর্থের জোগানদাতা হিসেবে সংসারের প্রধান কর্তা ব্যক্তিও বটে।
শৈশব থেকেই নারী-পুরুষের এই প্রতিকারহীন বৈষম্য দেখে বড় হয়েছি। অবচেতন স্তরে নিশ্চয় জমেছিল সেই ক্ষোভ, দুঃখ ও নীরবতার বোবা প্রতিবাদ। কিছু বেদনা-বিষাদের আস্তরে যদিও ঢাকা ছিল সেই কষ্ট। তবু দীর্ঘকালের পুরুষতান্ত্রিক প্রথাও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিজের অজান্তে কখন যে জেগে উঠেছিলাম, তা নিজেও জানি না।
দুই.
আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা টানা পাঁচ বছর শিখিয়ে-পড়িয়ে আমার পঞ্চম শ্রেণীর তরীকে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাইস্কুলের ঘাটে, আরও দূরের যাত্রা-অভিমুখে। আমার সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের এক কোণে প্রগাঢ় ভূমি থেকে উদ্গত রক্তিম এক মাধুরীলতার নাম দিয়েছিলাম শিক্ষক-কুঞ্জ। সেই লতায় যে বহুবর্ণিল দুরন্ত ফুল-কুঁড়ি ফুটেছিল পাড়াগাঁয়ের ধুলিবালি মেখে, সেদিনের সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমিও যে ছিলাম একজন।
সেখান থেকেই সভ্যতার প্রণয়-কলা প্রথম শিখেছি। সবুজ প্রকৃতির মতো যে শিক্ষক, তাদের কাছেই জ্ঞানোগ্নির যে হাতেখড়ি, তারাও যে মানুষ গড়ার কারিগর—একটি জাতির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাকবচ।
প্রথম সকালে উদিত সূর্যের আলোক রশ্মির অন্য নাম জাতির মেরুদণ্ড। আমার এই শিক্ষকেরা বিশেষভাবে আমার হেড স্যার যিনি, ‘ইসহাক মাস্টার’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন, মাস্টার শব্দটি পেশাগত পদবি নয়, যেন নামেরই শেষাংশ হিসেবে লেপ্টে ছিল আজীবন। একইভাবে আমাদের অঙ্কের শিক্ষককে জানতাম গিয়াস স্যার নামে।
আরও একজন শিক্ষক ছিলেন, যার নাম মনে করতে পারছি না কিছুতেই। এই শিক্ষকেরা আমার জীবনের বাঁকবদলে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে মনে প্রাণে আমি বিশ্বাস করি আজও।
হেডস্যার আব্বাকে শত সহস্রবার অনুরোধ করেছেন, পইপই করে পথ বাতলে দিয়ে বলেছেন, দূরত্বের কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামের হাইস্কুলে যদি দিলরুবাকে নাও ভর্তি করেন, তাহলে অবশ্যই শহরের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে, তবু ওকে পড়াবেন। কিছুতেই যেন ওর পড়া বন্ধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন সভাপতি স্যার, এইটুকু আমার বিশেষ অনুরোধ।
আমার প্রথম জীবনের এই শিক্ষক—আমাকে তার সন্তানতুল্য করে এত যে ভালোবাসতেন, সেটি বুঝেছি পরবর্তী সময়ে, যখন এমএ পাস করে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম স্কুলে। তিনি সেদিন তার পাশের চেয়ারে বসিয়ে অনেক গল্পের পরে বলেছিলেন, তুমি কিন্তু আমার স্কুলের প্রথম উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত—দিলরুবা।
কাজেই সব ক্লাসের ছাত্রদের সামনে তোমার নামটি আমি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করি এবং এই পাড়াগাঁ থেকেও যে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে ওদের উৎসাহ দেই।
এক এক করে পরীক্ষার সিঁড়ি টপকে আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীও অতিক্রমের পথে, সেই সময়ে আমার সম্পর্কে স্যারের স্পস্ট বক্তব্য ও বিশেষ মূল্যায়ন ছিল যে, আমি মেধাবী ও ভালো ছাত্রী। কাজেই ‘এক চান্সে এসএসসি’ পাস করবো। তখনকার দিনে মনে হয় এভাবেই ছাত্র-ছাত্রীর মূল্যায়ন করা হতো। ‘এক চান্সে পাস’ করবে কি না।
স্যারদের মুখে এই কথাটি অনেক বার শুনেছি আমি। ধারণা করি, যেহেতু গ্রামের অধিকাংশ মানুষের হাতে নগদ উদ্বৃত্ত টাকাপয়সা থাকতো কম, কাজেই সন্তান যদি পাস করার মতো মেধাবী না হয়, তাহলে খামোকা তার পেছনে আর টাকা পয়সা নষ্ট করা কেন? এর চেয়ে বরং সেই টাকায় ২/১ বিঘা জমি খুব সহজেই কিনতে পারতো একজন কৃষক পিতা। এ রকম একটি মনোভাব থেকেই হয়তো স্যারেরা গাঁও গেরামের ছাত্র-ছাত্রীর মূল্যায়ন করতেন এভাবে। জানি না তিনি আমার মধ্যে কী প্রতিভা লক্ষ করেছেন। তবে যেহেতু আমাদের নিকট আত্মীয়-স্বজন ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন শহরে বাস করে বলে তিনি জানতেন, কাজেই সেসব শহরে রেখেও আমার পড়ালেখা যে করানো সম্ভব, সেই ধারণা আব্বার মনে তিনি বদ্ধমূল করে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে আমার গিয়াস স্যার, যিনি আমাদের বাড়িতে এসে অঙ্ক বোঝাতেন নিয়মিত, তিনিও আমার মাকে এই একই কথা বলতেন। গিয়াস স্যার আমাকে আর সেলিমকে পড়াতে আসতেন স্কুলের আগে-পরে, হয় সকালে নয়তো বিকেলে।
আমাদের দক্ষিণ ভিটার ঘরে বসে পড়াতেন। প্রথমদিকে মা-ই সব পড়া করাতেন। তৃতীয় শ্রেণীর পাঠের শুরু থেকেই স্যার পড়াতেন আমাদের বাড়িতে এসে।
মায়ের শোবার ঘরকে বলতাম ‘বড়ঘর’ তারপরে অভ্যন্তরীণ লম্বালম্বি উঠোন খানিকটা, তারপরেই দ্বিতীয় এই ঘরটিকে বলতাম দক্ষিণ ভিটার ঘর। এর অন্দর-বাহির, দু’দিকেই দরোজা ছিল দুটি। ভেতর বাড়ির দরোজাটা খোলা থাকতো সব সময়। বাইরের অতিথি কেউ এলে তবে তখন ওই দরোজাটি খোলা হতো। স্যার যখন আসতেন, তখন বাইরের দরোজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেন। পড়ানো শেষ করে নাস্তা-পানি খেয়ে ওভাবেই চলে যেতেন তিনি। আমাদের ভেতর বাড়ির দ্বার সবার জন্যে উন্মুক্ত ছিল না সেই সময়ে।
মেয়ের মেধা মননের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের ফলেই আমার মা-ই মির্জাপুরে তার বোনের কাছে রেখে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে আব্বাকেও সহজ করে তুলেছিলেন।
তরুণ শিক্ষক গিয়াস স্যারের গায়ের রঙটা ছিল উজ্জ্বল কালো-শ্যাম। ভীষণ লাবণ্যময়। মাথায় ঢেউ খেলানো ঘন চুলে তার চুপচুপা তেলের প্রলেপ সারাক্ষণ। তবে পরিপাটি করে এমনভাবে তা আঁচড়ানো থাকতো যে, চুলের সে স্টাইল তার মুখাবয়বের আকৃতির সঙ্গে মিলমিশে এমন এক হাওয়া তৈরি করতো যে, মনে হতো আমি এক কৃষ্ণকুমারের স্নিগ্ধ দ্যুতির সমুখে বসে জটিল অঙ্কের সমাধান খুঁজছি।
টেবিলে বসে অঙ্কের সমাধান শেষ হলে, একটু দূরে চেয়ারে বসে থাকা স্যারকে নিয়ে দেখাতাম তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে। তিনি রাইট চিহ্ন দিয়ে পুনরায় আরও একটি অঙ্কের সমাধান করতে দিতেন। না পারলে তখন বুঝিয়ে দিতেন।
বসন্ত বাতাসের এক গোধূলি বেলা সেদিন, স্যার অঙ্ক বোঝাচ্ছিলেন, একটু ঝুঁকে তার সমাধান দেখতে গিয়ে স্যারের একগুচ্ছচুলের স্পর্শ এসে লেগেছিল আমার কপালে, হঠাৎ কেমন যেন অন্যরকম এক ভালোলাগা বোধকে আমি সেদিন প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম। বয়ঃসন্ধিকাল, রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যার মতো সেদিন কী আমি ভালোবাসাকে প্রথম ভালেবাসতে শিখেছিলাম, কে জানে!
অলক্ষেই হয়তো সেদিন শৈশবের সুতো ছিঁড়ে বয়ঃসন্ধির আকাশ জুড়ে উড়েছিল মাছরাঙা এক ঘুড়ি। পৌষ-সংক্রান্তির ঘুড়ি-উৎসবের মতো। এজন্যে মনে করি যে, বহুদিন সেই স্মৃতি আমাকে ভেতরে ভেতরে আলোড়িত করেছে। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থে ‘ভালোবাসা’ নামে যে দীর্ঘ একটি কবিতা লিখেছিলাম, সেখানে তার অংশ বিশেষে উল্লেখ ছিল এই প্রসঙ্গটিও।
এখনো মনে পড়ে
কোনো এক দুরন্ত বিকেলে
আমাদের গাঁয়ের মাস্টার
সামান্য চুলের স্পর্শে একদা আমার
বাল্যে প্রেম জাগিয়েছিলেন;
সেই তো প্রথম ভালোলাগার আলাদা এক বোধ
নিষ্কলঙ্ক শিশুর বুকেও রঙধনু এঁকেছিল
ভালোবাসা জেগেছিল সেই যে প্রথম
ভালোবাসা কী, যদিও তখনো বুঝি না তার কিছু
তবু সেই স্মৃতিসিক্ত একটি বিকেল
আজো মনে পড়ে এই উত্তর ছাব্বিশে;
সত্যিকার অর্থে কবিতাটি আমি লিখেছিলাম প্রকৃত ছাব্বিশের আবেগ ও উপলব্ধির মিথস্ক্রিয়ায়। সেই দূর-অতীত স্মৃতিস্বপ্নের অ্যাকুরিয়ামে আজো তা রঙিন মাছের মতো চপল ও চঞ্চল।
তিন জন জ্ঞানদীপ্ত মানুষ, আমার মধ্যে সৃষ্টি করেছিলেন আবেগের এই অ্যাকুরিয়াম। তার একজন আমার পিতা, হেড স্যার, আর এই গিয়াস স্যারও বটে। আর আমার সর্বংসহা জননী ছিলেন এই রঙিন অ্যাকুরিয়ামে সহিষ্ণুতার অনবদ্য জল।
মেয়ের মেধা মননের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের ফলেই আমার মা-ই মির্জাপুরে তার বোনের কাছে রেখে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে আব্বাকেও সহজ করে তুলেছিলেন।
চলবে