বাংলা সাহিত্যের যত শাখা রয়েছে, তারমধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে রসহীন শাখা হচ্ছে প্রবন্ধ। আর রসহীন বলেই এর পাঠকও সবচেয়ে কম। কেবল সাহিত্য সমালোচক, বোদ্ধা পাঠক, অনুসন্ধানী লেখক, আগ্রহী বুদ্ধিজীবীই এই শ্রেণীর রচনার রসগ্রাহী। তবে প্রায়ই শোনা যায়—প্রবন্ধ সাহিত্যের খরা চলছে। মানসম্মত প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে না। তবে আমার মনে হয়, এমন অভিযোগ সর্বাংশে সত্য নয়। অন্তত মোহাম্মদ নূরুল হক, কাজী মহম্মদ আশরাফ ও মামুন রশীদের প্রবন্ধ পাঠ করলে এমন অভিযোগের ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। অন্য যেসব প্রাবন্ধিক আছেন, আমি তাদের খারিজ করছি না।
মোহাম্মদ নূরুল হক একাধারে কবি-সমালোচক-প্রাবন্ধিক-ছোটকাগজ সম্পাদক। জন্মেছেন ১৯৭৬ সালের ১২ জুন। পেশায় সাংবাদিক। প্রবন্ধের বিষয় বিচিত্র। সাহিত্যের নানা শাখায় সমান বিচরণ থাকলেও প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যবিষয়ক ছোটকাগজ মেঠোপথ, চিন্তাসূত্র, প্রাকপর্ব ও অনুপ্রাস। চিন্তাসূত্র বর্তমানে ওয়েব পোর্টাল হিসেবেও পাঠকের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। তার প্রবন্ধগ্রন্থ হলো—‘সাহিত্যে দশক বিভাজন ও অন্যান্য’, ‘সমালোচকের দায়’, ‘অহঙ্কারের সীমানা ও অন্যান্য’, ‘সাহিত্যের রাজনীতি’, ‘সমকালীন সাহিত্যচিন্তা’, ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান’ ও ‘আহমদ ছফার বাঙালি দর্শন ও অন্যান্য’।
কাজী মহম্মদ আশরাফও একাধারে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। তার জন্ম ১৯৭৭ সালের ১ জানুয়ারি। মুক্তচিন্তা ও সাহিত্য অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ, ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যা-মেঘনা বৃত্তান্ত, নিসর্গ ও শিল্প নগরায়ণের প্রভাব তার সাহিত্যের প্রধান উৎস। কবিতা ও গল্পকে ছাড়িয়ে গেছে প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও দুই বাংলার লিটল ম্যাগাজিনে তার সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তার প্রবন্ধগ্রন্থগুলো হলো—‘হাসান হাফিজুর রহমান ও অন্যান্য’, ‘রবীন্দ্রনাথ: বৃষ্টির কবিতা’। সম্পাদনা করেছেন লিটল ম্যাগাজিন ‘অ’, তাত্ত্বিক গদ্য কাগজ ‘আপাতত’ ও ‘মাসিক শব্দচিত্র’। তিনি বেশকিছু জীবনীগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। সেগুলো হলো—‘মহাত্মা গান্ধী’, ‘শেক্সপিয়র’, ‘সুফিয়া কামাল’, ‘পাবলো পিকাসো’, ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’, ‘জয়নুল আবেদিন’। পেশাগত জীবনে তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক।
কবি ও গল্পকার হওয়া সত্ত্বেও প্রবন্ধের প্রতি বেশি আকর্ষণের কারণেই এই মাধ্যমেই তার কাজের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের কবি ও কবিতার মূল্যায়নধর্মী বেশ কটি ক্ষুরধার প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রবন্ধের বইগুলো।
এছাড়া মামুন রশীদও একাধারে কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও ঔপন্যাসিক। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক। ১৯৭৭ সালের ২ আগস্ট তার জন্ম। তার প্রবন্ধগ্রন্থগুলো হলো—‘বাংলাদেশের কবিতা, সৃজনে অর্জনে’ ও ‘ষাটের কবি: স্বাতন্ত্র ও বৈভবে’। ইতিহাসগ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস: বগুড়া জেলা’। তার সম্পাদিত সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘দ্বিবাচ্য’ ও ‘ভূতটুস’ পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সম্পাদিত জীবনীগ্রন্থ হলো—‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘ডিরোজিও’, ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’, ‘মাদার তেরেসা’, ‘বেগম রোকেয়া’।
প্রথমেই তিন জনের আলাদা পরিচিতি তুলে ধরা হলো এজন্য যে—এর মাধ্যেমে তাদের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটি পাওয়া যাবে। সঙ্গে এই তথ্য—ও দিয়ে রাখি—এই তিন জনই নিভৃতচারী ও অন্তরালমুখী। ফলে তাদের নিয়ে সাহিত্যপাড়ায় খুব বেশি হৈচৈ চোখে পড়ে না। পাঠকও চুপিসারে তাদের সাহিত্যকর্ম থেকে রস আহরণ করে নিভৃতে কেটে পড়েন। অবশ্যই এসব বিষয় নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও কখনো চোখে পড়েনি। এই অন্তরালমুখী স্বভাবই একদিন তাদের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
এই তিন কুশীলবের প্রবন্ধের বিষয়ে যেমন মিল আছে, তেমনি অমিল আছে গদ্যরভঙ্গিতে। মোহাম্মদ নূরুল হকই মনে হয় প্রথম দশকবিরোধী গদ্য লিখেছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে—তাকে অন্য কবিরা কবিদের তালিকা থেকে বাদ দেন ‘প্রাবন্ধিক’ আখ্যানয়িত করে। আর প্রাবন্ধিকরা বাদ দেন কবি অভিধা দিয়ে। অথচ প্রবন্ধ সাহিত্যে বর্তমানে তার ধারেকাছে নেই অনেকেই—একথা জোর গলায় বলা যায়।
এই তিন জনের প্রবন্ধের বিষয় যেমন আলাদা, ঠিক তেমনই আলোচনার ধরনও ভিন্ন। সমসাময়িক হয়েও তারা কেউ কারো দ্বারা প্রভাবিত নন। তিন জনেরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মোহাম্মদ নূরুল হক সৃজনশীল কিংবা মননশীল প্রবন্ধের ক্ষেত্রে প্রশ্নশীল ও স্বতন্ত্রধারা সৃষ্টি করে ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন। নতুন চিন্তা ও বিচিত্র বিষয়ের উপস্থাপন এবং তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও যুক্তিপ্রয়োগে তার প্রবন্ধ হয়ে ওঠে তীক্ষ্ম, স্বতন্ত্র। অনেক বিষয়ে তিনি নিজস্ব অভিমত প্রকাশে অকুণ্ঠ। কবি ও গল্পকার হওয়া সত্ত্বেও প্রবন্ধের প্রতি বেশি আকর্ষণের কারণেই এই মাধ্যমেই তার কাজের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের কবি ও কবিতার মূল্যায়নধর্মী বেশ কটি ক্ষুরধার প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রবন্ধের বইগুলো।
দশক বিভাজনের বিরোধিতার কথা মোহাম্মদ নূরুল হকের কলমে প্রথম এলেও বাকি দু’জনকে তেমন উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। তারা না বিভাজনের পক্ষে, না বিভাজনের বিপক্ষে।
কাজী মহম্মদ আশরাফের জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন প্রচুর। তার আলোচনার ধরন ঝরঝরে। বিষয়ের গভীরে ডুব দিয়ে তিনি মূল বক্তব্যকে খুঁজে আনেন আপন শক্তিতে। তিনি বিষয়ের অনেক অসঙ্গতি তুলে আনেন। সমস্যা উত্থাপন করে তার সমাধানের পথও তৈরি করে দেন। তার প্রবন্ধের তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে তিনি উপসংহারের দিকে অগ্রগামী হন। ফলে তা পাঠকের কাছে তথ্যসমৃদ্ধ চমৎকার লেখা হিসেবে পরিগণিত হয়। তার প্রবন্ধ পাঠে সব প্রশ্নের উত্তর যেন সহজেই পাওয়া যায়। রসহীন এই বিষয়টিকেও তিনি অনেকটা রসালো করে তুলতে পারেন বর্ণনায় বা ভাষাভঙ্গিতে। প্রাবন্ধিক হিসেবে নিজেই কতগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দেন পাঠকের কাছে। এরপর নিজেই তার উত্তর দিয়ে যান ধারাবাহিকভাবে।
মামুন রশীদের প্রবন্ধে আমরা ব্যক্তির সাহিত্যচর্চার ধরন, কৌশল, আবিষ্কার প্রভৃতি সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেতে পারি। তিনি বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম নিয়ে বেশি আলোচনা করেছেন। তাদের কেউ প্রয়াত, কেউ বা আবার জীবিত। যদিও সমকালে কাউকে খুশি করতেই প্রবন্ধ লেখার প্রবণতা চোখে পড়ে। সে হোক সাহিত্যপাতা কিংবা ছোটকাগজ। এমনকী হালের ওয়েব পোর্টাল। তবে মামুন রশীদের প্রবন্ধ পাঠে সে বিভ্রম কেটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তিনি ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধে্ব গিয়ে ব্যক্তির কর্মকে বেশি প্রাধান্য দেন। ফলে অন্তর্মুখী এ প্রাবন্ধিককে আমি আর যাই বলি, স্বার্থান্বেষী বলতে পারি না। তবে কিছুটা স্বার্থ তো অবশ্যই আছে। তা হলো নিজের পাঠের আনন্দ, নিজের লেখা প্রকাশের আনন্দ।
তারা তিন জনই সাহিত্যের অনুচ্চারিত বা কম উচ্চারিত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। প্রত্যেক শাখার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেছেন। অকবিতাকে কবিতা বলেননি। অপন্যাসকে উপন্যাস বলেননি। বিচারের আগে বিষয়ের বৈশিষ্ট্য ও ধরন সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেছেন।
মোহাম্মদ নূরুল হক কবিতার শব্দ ধরে ধরে আলোচনা করেছেন। কবিতায় ছন্দ, অলঙ্কার, মাত্রা, উপমা, যমক, উৎপ্রেক্ষা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না—সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন। কাজী মহম্মদ আশরাফও সাহিত্যের ব্যাকরণ নিয়ে আলোকপাত করেছেন। আর মামুন রশীদও। তিন জনই কবিতার ছন্দকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছেন। কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে পঙ্ক্তি ধরে ধরে ব্যবচ্ছেদ করেছেন। তারা মনে করেন, ছন্দহীন রচনা কখনোই কবিতা নয়। একই বিষয়ে তাদের তিন জনের অভিমত কাছাকাছি। একটি সফল বা সার্থক কবিতার জন্য তারা সব সময় উদগ্রীব থেকেছেন।
কাজী মহম্মদ আশরাফ ও মামুন রশীদ জীবনীগ্রন্থ নিয়ে অর্ধডজনের বেশি কাজ করেছেন। সেখানেও তারা দু’জন গভীর মনোযোগের পরিচয় দিয়েছেন। ব্যক্তির জীবনের নানা দিক, নানা অনুষঙ্গ, অনুচ্চারিত আলাপও তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। তারা কেউই গুগল আর উইকিপিডিয়া নির্ভর আলোচনা করেননি। তবে, মোহাম্মদ নূরুল হক কোনো জীবনীগ্রন্থ সম্পাদনা বা সংকলন করেননি।
দশক বিভাজনের বিরোধিতার কথা মোহাম্মদ নূরুল হকের কলমে প্রথম এলেও বাকি দু’জনকে তেমন উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। তারা না বিভাজনের পক্ষে, না বিভাজনের বিপক্ষে। মোহাম্মদ নূরুল হকের যুক্তি এমন—‘বাংলা সমলোচনাসাহিত্যের একটি বিষফোঁড়া—দশকিয়া বিশ্লেষণ। এটি যেমন সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি সৃষ্টিশীলতার অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক। মহাকালের হিসাবের খাতায় শতকই যেখানে গৌণ, দশক সেখানে অতি তুচ্ছবিষয় মাত্র।’ (সাহিত্যে দশক বিভাজন)। তার মতো এমন জোরালো উচ্চারণ অন্য দুজনের কোনো লেখায় দেখা যায়নি।
তারা তিন জন সমকালে কম উচ্চারিত হলেও একদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবেন। করণ, বৃক্ষের পরিচয় তার ফলেই নিহিত আছে। ভবিষ্যৎ আলোচনা-সমালোচনা-গবেষণায় তাদের দেখানো পথ অন্যদের এগিয়ে চলতে সহায়ক হবে।
তবে কাজী মহম্মদ আশরাফের ‘সাহিত্যে যৌনতা’ বিষয়ক লেখাটি তার উদার চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। যদিও এ বিষয়ে নিয়ে অপর দু’জনকে কথা বলতে দেখা যায়নি। এছাড়া মামুন রশীদের সাহিত্য সম্পাদনা বা পত্রিকার সাহিত্যপাতা নিয়ে আলোচনা কেবলই তার নিজের। এই বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদ নূরুল হক বা কাজী আশরাফকে আলোচনা করতে দেখা যায়নি। এমনই অসংখ্য বিষয় বা ধরন তাদের তিন জনের মধ্যে উল্লেখ করার মতো রয়েছে। তাদের রচনার বিষয়, বৈশিষ্ট্য, উপকরণ—সবই ভিন্ন ভিন্ন। তাদের আলোচনার ধরনও আলাদা। এখানেই তাদের তিন জনের স্বকীয়তার প্রমাণ মেলে।
এখন দেখে নেওয়া যাক তাদের প্রবন্ধে কেমন গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মূলত ‘প্রবন্ধ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ‘প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন’। এই ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’ বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়। অর্থাৎ নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে। প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা, চিন্তার ধারাবাহিকতা, সংযত বর্ণনা, ভাষার প্রঞ্জলতা ও যুক্তির সৃশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে। প্রবন্ধের প্রধান অংশ তিনটি—ভূমিকা, বিষয়বস্তু ও উপসংহার।
আবার বিষয়বস্তু অনুসারে প্রবন্ধকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বর্ণনামূলক ও চিন্তামূলক। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বলা যায়, তাদের প্রবন্ধ চিন্তামূলক। তবে প্রবন্ধ রচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার। তারা সে অনুশীলন করেই ধীরে ধীরে প্রবন্ধে জায়গা করে নিয়েছেন।
একটি সার্থক প্রবন্ধের জন্য যে যে গুণ থাকা দরকার, তার সবই তাদের প্রবন্ধে লক্ষণীয়। তাদের প্রবন্ধের বিষয়বস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ, প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায়নি। প্রবন্ধের ভাষারীতিতেও তারা যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। এমনকী তারা অযথা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য, উদ্বৃতি ব্যবহার করা থেকেও বিরত থেকেছেন। প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও বক্তব্যকে জোরালো করতে প্রবাদ-প্রবচন, কবিতার পঙ্ক্তি, গদ্যের উদ্বৃতি ইত্যাদি সন্নিবেশিত করেন। সর্বোপরি নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, চিন্তাশক্তি, পঠন-পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপন কৌশল প্রয়োগ করেই তারা প্রবন্ধকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছেন।
তারা তিন জন সমকালে কম উচ্চারিত হলেও একদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবেন। করণ, বৃক্ষের পরিচয় তার ফলেই নিহিত আছে। ভবিষ্যৎ আলোচনা-সমালোচনা-গবেষণায় তাদের দেখানো পথ অন্যদের এগিয়ে চলতে সহায়ক হবে।