[জুনিয়র হাইস্কুল: পর্ব-৩৬]
পুরোদমে শীত এসে গেছে। ক’দিন আগেই কাছারির পেছনে ও উঠোনের দক্ষিণ পাশের উঁচু জায়গায় ঢেঢ়শ-বেগুনের চাষ করেছি। আর কাছারির সামনে লাগিয়েছি তিন রঙের গাঁদা। সঙ্গে কসমস ফুল। ফুলের বাগান দেখে কাকা খুশি। কিন্তু বাবার পছন্দ না। তাঁর কথা হলো—ছেলেটা কাজকর্ম না করে সারাক্ষণ এই ফুলের বাগানের পেছনেই পড়ে থাকে। পড়াশোনাও ঠিকমতো করে না। তখন বাবাকে কাকা যুক্তি দেন—ফুলবাগান করা পড়াশোনা ও কাজকর্মেরই অংশ। কোনো বখাটের সঙ্গে মেশার চেয়ে ফুলবাগান, সবজি চাষে সময় দেওয়া অনেক ভালো।
এখানে বলে রাখি। সবজি চাষের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছে দিদারের কাজ দেখে। দিদার হলো হাফেজ ফজলুল করিমের ছেলে। ক্লাস সেভেনের ছাত্র। বাড়ি চৌরাস্তাবাজার থেকে পশ্চিম দিকে। রেডক্রিসেন্টের কেল্লার লাগোয়া পশ্চিম পাশে। তাদের বাড়ির দক্ষিণ পাশে নূর ইসলাম টেন্ডল বাড়ি। তিনি আমার নানির বড় ভাই। বড় নানা ডাকি। বড় নানার দুই ছেলে—নূর উল্লাহ ও ছানা উল্লাহ। মেয়ে সম্ভবত তিন জন। নূর উল্লাহ মামা হাসিখুশি। পড়াশোনা কম করেছেন। তার বউ, মানে মামি আমাদের খুব স্নেহ করেন। মামাও। ছানা উল্লাহ মামা থাকে কোম্পানিগঞ্জ। বসুরহাট কলেজে পড়েন। মাঝেমাঝে দেখা হয়। কিন্তু তার সঙ্গে ছোটদের কথাবার্তা হয় কম। তিনি বেশির ভাগ সময় তার ফুপাতো ভাই, মানে আমার মায়ের খালাতো ভাই আহসান উল্লাহর সঙ্গেই আলোচনা করেন বেশি। আহসান মামা পড়েন চরক্লার্ক দাখিল মাদ্রাসায়। কদিন পরই দাখিল পরীক্ষা দেবেন।
যখন সমবয়সী কোনো খালাতো ভাই-বোন থাকে না, বেশিরভাগই থাকে হয় অনেক ছোট, না হয় বড়; তখন খেয়ে-দেয়ে চলে যাই দিদারদের বাড়ি। দিদারের পিঠাপিঠি ছোট ভাই খলিল। সেও সেভেনে পড়ে। দুজনই আমার সিনিয়র। তবু তাদের সঙ্গে হয়ে গেছে গভীর বন্ধুত্ব।
আমাদের বংশে বড় নানা সবচেয়ে সম্মানীয়, তারপরেই কাকাকে সবাই সম্মান করেন। আর বড় নানার বাড়িতে বারো মাসই মেহমান থাকে। কখনো তার মেয়ে-মেয়ের জামাই, কখনো নাতি-নাতনি, কখনো তার বোন, বোনের মেয়ে, বোনের মেয়ের ঘরের নাতি-নাতনিরা। নতুন ধান ওঠার পর তারা নিজেদের খাবারের চাল রাখার পাশাপাশি আলাদা করে মেহমানদের জন্য বারোমাসের জন্য বরাদ্দ রাখেন। বড় বড় ছয়-সাতটি মাটির মটকার পাশাপাশি কাঠের দুই-তিনটি সিন্দুক ভরা থাকে চালে।
অতিথিদের জন্য রয়েছে বাড়ির সামনে আলাদা কাছারি ঘর। সেই কাছারি ঘরে বছরের ৩৬৫ দিনই অতিথি গমগম করে। আমরাও প্রায় তাদের বাড়িতে যাই। সমবয়সী খালাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে আড্ডা জমে ভালো। ফলে সাধারণত শুক্রবার এলে আমি আর খোকনদের বাড়িতে যাই না। চলে যাই বড় নানাদের বাড়িতে। আমাদের ছোটদের দেখলেই নূর উল্লাহ মামা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলেন—‘কী বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে আচমকা। ৬ টাকার চাল অখন সোয়া ৬ টাকা। আঙ্গো ভাত মারতে আইছস?’ আমরাও হেসে বলি, ‘জি মামা। দাম তো বাড়ছেই। তয়, আমরা তো আপ্নেরটা খাই না। নানারটা খাই।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘অ। নানারটা খাস? ভালো কথা শিখছোস সবাই!’ এরপরই ঘর থেকে হয়তো মোয়া, নয়তো পেয়ারা অথবা পিঠা এনে সবার সামনে দিয়ে বলেন, ‘নে সবাই ভাগ করি খা। আবার মারামারি করিস না।’ বিশেষত শীতকাল এলে প্রতিদিনই সকালে সূর্য উঠতে না উঠতেই নূর উল্লাহ মামা বাড়ির রাখালকে নিয়ে খেজুর গাছ থেকে রস নামিয়ে আনেন। আর মামি ও চুক্কা খালা সেই রস দিয়ে শিন্নি পাক করেন। পাক শেষে বড় নানি ছোটদের সবাইকে হয়তো উঠোনে, না হয় কাছারি ঘরে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে দেন। এরপর মাটির বাসনে সবার সামনে দেন সেই রসের শিন্নি।
সকালে গেলে কখনো কখনো সেই শিন্নির ভাগ পাই। যখন সমবয়সী কোনো খালাতো ভাই-বোন থাকে না, বেশিরভাগই থাকে হয় অনেক ছোট, না হয় বড়; তখন খেয়ে-দেয়ে চলে যাই দিদারদের বাড়ি। দিদারের পিঠাপিঠি ছোট ভাই খলিল। সেও সেভেনে পড়ে। দুজনই আমার সিনিয়র। তবু তাদের সঙ্গে হয়ে গেছে গভীর বন্ধুত্ব। খলিল তাদের কাপড়ের দোকানে বসে। দিদারদের বাড়ি গেলে প্রায় দেখা যায়, সে সবজি ক্ষেতে কাজ করছে। হাতে কোদাল কিংবা কাঁচি। কখনো ঘাস কেটে সাফ করছে, কখনো ছোট্ট কোদালের কোপে ঢেঢ়শ-মরিচ-কুমড়া ক্ষেতের মাটি আলগা করছে। তাকে দেখে দেখে উদ্বুদ্ধ হই। আমিও সবজি চাষে বাবাকে সাহায্য করি। এর আগে বাবা সবজি ক্ষেতে ডাকলেও যেতাম না। ‘আসছি’ বলেই এক দৌড়াতে পালাতাম। চলে যেতাম ফুটবল খেলতে কিংবা পড়ার টেবিলে বসে ‘পড়ার ভান’ করতাম। কিন্তু দিদারের কাজ দেখে সবজি চাষে মনোযোগী হলাম। এছাড়া, সপ্তাহের দুই হাটে এসব সবজি বিক্রি করার সময় বাবার সঙ্গে আমিও যাই। মজার ব্যাপার হলো, হাটবারে সাইকেল গ্যারেজে সাইকেল ভাড়ার হিড়িক পড়ে, আবার ডিজেল-মোবিল-পেট্রোল বিক্রিরও ধুম পড়ে। বাবাকে হয় সবজি বিক্রি করতে হয়, না হয় গ্যারেজে থাকতে হয়। একইসঙ্গে দুদিক সামলানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে একটির দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়ে। সাধারণত সবজি বিক্রিতে বাবা যান, আমি থাকি গ্যারেজে। এতে সুবিধা হয়, গ্যারেজে বসে বসে বই পড়া যায়। কোনোদিন বাড়ি থেকে নিয়ে আসি ব্যাকরণ, কোনোদিন ডেল কার্নেগির কোনো বই। কখনো কখনো মাসুদ রানা কিংবা রকিব হাসানের কিশোর গোয়েন্দা সিরিজের কোনো বই। এসব বই পড়তে দেখলে সিনিয়ররা চোখ কপালে তোলেন। বলেন, ‘কী সব পড়িস? কদিন পর বার্ষিক পরীক্ষা। খবর আছে? একবারও তো সব বিষয়ে পাস করতে পারিস না। অঙ্কে তো প্রত্যেক বারই ঘোড়ার ডিম পাস। তবুও লজ্জা নাই। আউট বই পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে গেলি। এবার কালাম নেতা (আমার চাচা আবুল কালাম আজাদ। দুই দুই বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন। এরপর থেকে সবাই তাকে কালাম নেতা নামেই চেনে) আসুক। সব বলে দিমু।’ সিনিয়রদের এসব বকুনি-হুমকিতে আমি ভয় পাই না। আপন মনে নিজের কাজ করে যাই।
কিন্তু বিপত্তিটাই তখনই বাধলো, যখন আমিও গেয়ে উঠলাম। দুজন এতক্ষণ ভালোই গেয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু আমি কণ্ঠ মেলাতে গিয়ে যত বিপত্তি। তখন গান আর গান থাকলো না, চেঁচামেচিতে পর্যবসিত হলো। ধনু কাকা ধমক দিয়ে উঠলো—‘ওই ব্যাটা তুই থামবি?’
শুক্রবার। হাটবার। বাবা গেছেন ঢেড়শ-বরবটি বিক্রি করতে। আমি বসে আছি গ্যারেজে। রাত নয়টা বাজে। ধনু কাকা এসে ঢুকলো। তার পেছন পেছন খোকন, বেলাল, আনোয়ার, বাবলু। ধনু কাকা বলে—‘কী রে? কী পড়িস? দুই দিন পর তো বার্ষিক পরীক্ষা। এসব সাহিত্য-ফাহিত্য পড়লে পরীক্ষায় পাস করবিনি? এই কটা দিন অন্তত পরীক্ষার প্রস্তুতি নে। এবার বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে যেন তুই, খোকন ও আমার রোল নম্বর এক থেকে তিনের মধ্যে থাকে। কী? তোর প্রস্তুতি আছে তো?’ জবাবে মুখ টিপে হাসি—‘না রে কাকা। তিনের মধ্যে থাকা আমার কাজ না। আমাকে ছয়ের পর থেকে হিসাব করিস। অঙ্কে পাস করা কোনোভাবেই সম্ভব না। আর ইংরেজি টেনেটুনে ৩৩ পাবো।’
এবার খোকন বলে, ‘ওই ৩৩ পাওয়ার জন্যও তো পড়তে হবে। তোরে তো কোনো দিন ইংরেজি কিংবা গণিতে হাত দিতেই দেখি না! সারাদিন তো খালি এসব আউট বই নিয়েই থাকিস। অন্তত পাস নম্বর পাওয়ার জন্যও তো পড়তে হবে। না পড়লে পরীক্ষার খাতায় কী লিখবি? পরীক্ষার সময়ও কি শুনে শুনে পরদিন লিখতে পারবি?’ খোকনের কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু কী বলবো, ভেবে পাই না। তাই চুপ করে থাকি। আমার নীরবতায় খোকন আহত হয়। বলে, ‘কী হইলো? কিছু তো বল। আজ আমাদের বাড়ি যাইবি? গেলে চল, তাড়াতাড়ি যাই।’
আমাদের কথোপকথনের মাঝখানে বাবা এসে হাসির। ধনু কাকা হাসতে হাসবে বাবাকে বলে, ‘ভাইসা, আম্নের পোলা তো পড়াশোনা কিচ্ছু করে না। আম্মে কিছু কইতে পারেন না?’ বাবাও হাসেন—‘কী কমু? সারাক্ষণই তো দেখি বই হাতে।’ এবার খোকন কী যেন বলতে যাবে, অমনি ধনু কাকা ইশারায় থামিয়ে দেয়। বাবা দোকানের গদিতে বসতেই আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি। যাওয়ার সময় বাবাকে বলি, ‘খোকনদের বাড়ি যাবো।’ বাবা বললেন, ‘আইচ্ছা।’
দোকান থেকে বের হয়ে চৌরাস্তায় দাঁড়াই। সবাই যার যার বাড়িতে যাবে। আমরা তিন জন যাবো খোকনদের বাড়িতে। ধনু কাকা আগেই বাড়িতে বলে এসেছে। অতএব, তার জন্য বাড়িতে আর চিন্তা করবে না। তিন জন চৌরাস্তাবাজারের পূর্বদিকের রাস্তা দিয়ে বের হলাম। কিছুদূর যেতেই রাস্তার উত্তর পাশের জমির ধূরে (জমির মাঝখান দিয়ে কোণাকুণি পথ) নামলাম। ধান কাটা হয়ে গেছে বহু আগে। এখন জমিতে কেবল নাড়া, তার ওপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে খেসারির ডাল ও সরিষা। সরিষায় হলুদ ফুল আসি আসি করছে, খেসারির লতায় লতায় বেগুনি রঙের ফুল। মাথার ওপরে আকাশ। আকাশে ভেসে যাচ্ছে হালকা পেঁজাতুলো মেঘ। মেঘের ওপরে পূর্ণিমার চাঁদ। যেন দুধের নহর বইয়ে দিয়েছে। সেই দুধসাদা নহর এসে পড়েছে ডাল-সরিষার ফুলের ওপর। এই এক অপার্থিব দৃশ্য। যত দূর চোখ যায়, কোথাও খেসারির বেগুনি ফুল ভেসে উঠছে, কোথাও সরিষার হলুদ ফুল। আর চাঁদের আলো যেন সেখানে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। হঠাৎই খোকন গেয়ে ওঠে, ‘আহা এমন চাদের আলো/ মরি যদি সেও ভালো/ সে মরণ স্বর্গ সমান।’ এই কয় পঙ্ক্তি ‘ব্যাকরণ ও রচনা’ বইয়ের ভাব সম্প্রসারণ অংশে আছে। পড়তে ভালো লাগে। মুখস্থও হয়ে গেছে। খোকন যখন গেয়ে উঠলো, সঙ্গে কণ্ঠ মেলালো ধনু কাকাও। আমি আর বাদ যাই কেন? কিন্তু বিপত্তিটাই তখনই বাধলো, যখন আমিও গেয়ে উঠলাম। দুজন এতক্ষণ ভালোই গেয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু আমি কণ্ঠ মেলাতে গিয়ে যত বিপত্তি। তখন গান আর গান থাকলো না, চেঁচামেচিতে পর্যবসিত হলো। ধনু কাকা ধমক দিয়ে উঠলো—‘ওই ব্যাটা তুই থামবি? গলা নাই, সুর জানে না, আবার গান গায়! নিজে নাকি গানও লেখে? ওই ব্যাটা তোর গান শুনলে তো মাইনষের বাড়ির কুত্তা পানিতে লাফ দিবো।’
ধনু কাকা বলে, ‘কী হু-হা করছিস? এভাবে তিন জন মিলে পড়লে সেটাকে বলে গ্রুপ স্টাডি। গ্রুপ স্টাডিতে দুই জন পড়বে, একজন হু-হা করবে, তা হবে না। বুঝলে, কী বুঝলি, সেটা বলবি। না বুঝলে, তাও বলবি। আবারও বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু তোকে অঙ্ক বুঝতেই অইবো ভাতিজা। সব বিষয়ে পাস করতেই অইবো। এটা মানসম্মানের ব্যাপার। দ্যাট মিনস প্রেসটিজ ইস্যু।’
ধমক খেয়ে থেমে যাই। আসলেই তো, আমার তো কণ্ঠ ঠিক নেই। গাইতে পারি না। শুধু শুধু গলা মেলালে কি আর হয়? তারা দুজন সামনে সামনে, আমি পেছনে। তারা ওই তিন লাইন বারবার গেয়ে যাচ্ছে, আর আমি দুই হাতে কখনো খেসারির ফুল, কখনো সরিষার ফুলের রেণু মেখে মেখে চলি। আপন মনে কথা বলি, ফুলের সঙ্গে, চাঁদের সঙ্গে। বহুদিন পর আবারও খেয়াল করি, চাঁদও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে। যে চাঁদকে দেখলাম, চৌরাস্তাবাজারের কাছে, সেই চাঁদ এখন খোকনদের বাড়ির সামনে এসেও আমাদের মাথার ওপর।
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে কাঁথামুড়ি দিয়ে আগে আগে শুয়ে পড়ি। কিন্তু ধনু কাকা ও খোকন বসে থাকে রিডিং টেবিলে। দুজনেই মাস্টারপ্ল্যান করে। পরীক্ষার বাকি মাত্র মাসখানেক। এখন প্রতিদিন ছয়-সাত ঘণ্টা পড়তে হবে। আড্ডা-খেলাধুলা কমানো দরকার। পারলে এই ক’দিন খেলাধুলা-আড্ডা বন্ধই রাখতে হবে। আমাদের তিন জনের ফল ভালো হতে হবে। পেতে হবে সর্বোচ্চ নম্বর। এক থেকে তিনের মধ্যে তিন জনকে থাকতে হবে। তাদের কথাবার্তা শুনি। কিন্তু মন্তব্য করি না। হঠাৎ দেখি, কাঁথা সরে গেছে। মাথা তুলতে না তুলতেই ধনু কাকার গর্জন—‘কী রে ব্যাটা, কী সমস্যা তোর? আমরা ঘুমাইতে আইছি? পরিকল্পনা করতে অইবো। তোকে এবার সব বিষয়ে পাস করতে অইবো। না হলে কিন্তুক মান-ইজ্জত সব শ্যাষ।’ গলা নিচু করে বলি, ‘কিন্তুক কাকা, ইংরেজি পাস করলেও অঙ্কে সম্ভব না।’ এবার খোকন বলে, ‘সম্ভব না মানে? তুই গণিত নিয়ে ক’দিন বসেছিস? অন্যসব বিষয় না হয় শুনে শুনে মুখস্থ করবি। কিন্তুক অঙ্ক তো আর তোর হাফেজি না যে, শুনে শুনে মুখস্থ করবি! অঙ্ক হইলো প্র্যাকটিসের বিষয়। প্রতিদিন অন্তত একঘণ্টা বসে বসে অঙ্ক করার চেষ্টা কর। না পারলে আমরা তো আছি। এখন শুয়ে থাকিস না গর্দভ। উঠ। তিন জনে অঙ্ক করমু। ধনু কাকা অঙ্ক করবে। আমাদের বোঝাবে।’
দুজনেরই ধমক খেয়ে কী আর করা! উঠে বসি। টেবিলের তিন পাশে তিন জন। ধনু কাকার ভাবখানা এমন, যেন স্কুলের জাফর উল্লাহ স্যার। অঙ্ক কষছে। সঙ্গে সঙ্গে তর্জনি উঁচিয়ে সূত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে। কোথাও ভুল হলে শুধরে দিচ্ছে খোকন। আর আমি বুঝে-না বুঝে হু-হা বলে যাচ্ছি। ধনু কাকা বলে, ‘কী হু-হা করছিস? এভাবে তিন জন মিলে পড়লে সেটাকে বলে গ্রুপ স্টাডি। গ্রুপ স্টাডিতে দুই জন পড়বে, একজন হু-হা করবে, তা হবে না। বুঝলে, কী বুঝলি, সেটা বলবি। না বুঝলে, তাও বলবি। আবারও বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু তোকে অঙ্ক বুঝতেই অইবো ভাতিজা। সব বিষয়ে পাস করতেই অইবো। এটা মানসম্মানের ব্যাপার। দ্যাট মিনস প্রেসটিজ ইস্যু।’ তার বাংলা-ইংরেজির তোড়ে আমি খেই হারিয়ে ফেলি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে মুখের দিকে।
চলবে…
জীবনের যতিচিহ্নগুলো-৩৫॥ মোহাম্মদ নূরুল হক