অন্ধকার থাকতেই সালেহা চুপিচুপি উঠে আসে বিছানা ছেড়ে। ঘরের বাতি জ্বালালেই পাশের ঘরে শুয়ে থাকা শাশুড়ির ঘুম ছুটে যায়। লাইট না জ্বালিয়ে চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকারে সে গামছা ও সাবানের কেসটা হাতে নেয়। সাবান কেসের পাশেই ব্রাশ ও পেস্ট রাখা ছিল, সঙ্গে দাঁতের মাজন। কিন্তু কিছুদিন থেকে মাজন মুখে দিতেই তার বমি আসে। মাজনের বদলে সে ব্রাশপেস্টই হাতের মুঠোয় নিয়ে নিঃশব্দে দরজা খুলে পা টিপে টিপে বের হয়ে আসে উঠোনে। আকাশে ভরা পূর্ণিমার সোনার থালার মতো চাঁদ থেকে রুপালি আভা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পরিবেশের এমন উথাল-পাথাল মাদকতায় কিছুক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সালেহা। দূরের মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে। কামরা ছেড়ে বের হয়েই সামনের বারান্দার মতো যে ফাঁকা জায়গাটা আছে, সেখানে সালেহার শাশুড়ি একটি ছোট খাট বিছিয়ে রেখেছেন। দুপুরে খাওয়ার পর মুখে পান নিয়ে তিনি সেখানে দেড়দুই ঘণ্টা গা এলিয়ে থাকেন। সালেহা খাটে না বসে কয়েক মুহূর্তের জন্য সামনের সিঁড়িতে গিয়ে বসে। দিগন্তে ধীরে ধীরে অন্ধকার সরে গিয়ে কেমন এক মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়ছে। চারদিক ভরে আছে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে। ভোরের নির্জন কোলাহলমুক্ত এই সময়টা তার খুব প্রিয়। সারাদিনের মধ্যে এই এক টুকরো সময়ই শুধু তার একান্ত নিজের। পৃথিবীর দিকে চোখ মেলে তাকানোর মতো সারাদিন আর কোনো সময় সে পায় না।
শরীরের ভেতর বিচিত্র অস্বস্তি নিয়েও বাইরের রাস্তার দিকে হেঁটে যায় সে। টিনের দরজা ঠেলে দূরের ধান ক্ষেতের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সালেহা। ওই সময় আবারও তার গা গুলিয়ে ওঠে। শাশুড়ি ওঠার আগেই কলপাড়ে এসে দুই হাঁটু এক করে মুড়ে জড়ো হয়ে বসে সে। বামহাতে তলপেট চেপে ধরে হড়হড় করে—খুব সাবধানে উগড়ে ফেলতে থাকে পেটের ভেতর লুকিয়ে থাকা পিত বমিটুকু। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ডানহাত দিয়ে এমনভাবে মুখ চেপে ধরে, যেন কোনো শব্দ কারও কানে না যায়। অন্তত শাশুড়ি যেন শুনতে না পান এই বমির শব্দ। এদিকে তার ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে নিঃশব্দে শকুনের দৃষ্টি নিয়ে শাশুড়ি ঠিকই পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। চমকে পেছনে ফেরে সালেহা। দেখে কানের কাছে মুখ এনে খুব ধীরে অথচ তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা বুকে বিঁধিয়ে দেওয়ার মতো করে রিনরিনে সুরে শাশুড়ি তাকে হুমকি দিচ্ছেন—এইবার যদি আবার একটা মাগী বিয়াইছস, তাইলে আল্লার কসম দিয়া কইতাসি, তোরে তোর পাঁচ মাগীসহ জ্যান্ত কবর দিমু।
ফলে সালেহার বাবা কিছুদিন গাইগুই করে তারপর বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। একরকম তাড়াহুড়ো করেই সালেহা-দুলালের বিয়েটা হয়েছিল।
কথাটা শুনে সালেহা এক মুহূর্তের জন্য আতঙ্কে কেঁপে উঠলো। পরক্ষণেই ধাতস্থ হয়ে উঠে এগিয়ে যায় পুকুর পাড়ের পাশের টয়লেটের দিকে।
মাসিকের তারিখ চলে গেছে, তাও তিন সপ্তাহ হয়ে গেলো। হিসাব মতো সালেহা এখন প্রায় দুমাসের মাসের গর্ভবতী। দিন নেই, রাত নেই—সারাক্ষণ শুধু গা গুলিয়ে আসে তার। সঙ্গে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এর আগে সে পাঁচ-পাঁচটি মেয়ের জন্ম দিয়েছে কিন্তু এবারের মতো এত কষ্ট তার কখনো হয়নি। কিছু তো সে খেতে পারছে না বরং সবকিছু থেকে এমন ভয়াবহ দুর্গন্ধ পাচ্ছে। তাতে মনে হয় নাড়িসহ পেটের মধ্যে যা কিছু আছে গলা দিয়ে বের হয়ে আসবে। শরীরের ভেতরে কেমন যেন অন্যরকম লাগে।
পরপর চার মেয়ের জন্মের পর স্বামী তার অনেকবার অনুরোধ করেছিল ডাক্তার আপার কাছে গিয়ে লাইগেশন করাতে। সে দেখেছে একেকটা মেয়ের জন্মের পর সালেহার ওপর তার মায়ের অমানবিক সব অত্যাচারের দৃশ্য। আর সেসব অন্যায় প্রতিহত করার মতো বিন্দুমাত্র ক্ষমতা তার নেই। তাই প্রথম দুই মেয়ে হওয়ার পরই সে সালেহাকে আর বাচ্চা নেবে কিনা, সে কথা ভাবতে বলেছিল। কিন্তু সালেহার মনে কোথাও একটা বিশ্বাস ছিল হয়তোবা পরেরটা ছেলেই হবে। কিন্তু সেবারও মেয়ে হলো—এমনকি পরেরবারও। তখন ডাক্তার আপা মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক বুঝিয়েছে, সালেহা এবার লাইগেশনটা করে ফেলো। শোনো আর বাচ্চা নিও না লক্ষ্মী বোন আমার। তোমার শরীরের যা অবস্থা! শুকিয়ে তো একেবারে কাঠ হয়ে গেছ। এছাড়া তোমার শরীরে কিন্তু রক্ত অনেক কম। বুঝলা? এরপর বাচ্চা হলে কিন্তু তোমাকে আমি আর বাঁচাতে পারবো না। এবারই কিন্তু প্রায় মরতে বসেছিলে। কিন্তু সালেহা লাইগেশন করতে কিছুতেই রাজি হয় না। তৃতীয় বাচ্চাটাও যখন মেয়ে হলো, তারপর শাশুড়ির কাছে মার খেয়ে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দুলালের গৃহত্যাগ আর সালেহার বাবার মৃত্যু! সবকিছু মিলেই সালেহার মধ্যে কোথা থেকে এক দুর্দমনীয় জেদ এসে চেপে বসলো। ছেলে তাকে জন্ম দিতেই হবে। দরকার হলে পোয়াতি হতে হতে সে মরে যাবে, কিন্তু বেঁচে থাকলে তাকে ছেলে সন্তান জন্ম দিতেই হবে। তাই পাঁচ-পাঁচটি মেয়ের পর আবারও সে এই দুর্বল ফ্যাকাসে শরীরেই গর্ভবতী হয়েছে। আর শেষমেশ তার সব দুঃখকষ্টের অবসান হয়ে তার কোল জুড়ে এলো ফুটফুটে জমজ দুই ছেলে সন্তান।
মাত্র পনের বছর বয়সে কাকবন্ধ্যা মায়ের একমাত্র ছেলে দুলালের সঙ্গে বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে পা দিয়েছিল সালেহা। দুলালের বয়স তখন উনিশ কি কুড়ি হবে। দেখতে-শুনতেও মন্দ ছিল না সে। কয়েক কানি জমি আর থাকার জন্য বেশ বড় একখানা বাড়িও ছিল তার বাবার। প্রাইমেরি স্কুল পাস করার পর বাবার সঙ্গে চাষাবাদে লেগে গিয়েছিল দুলাল। ভালোই চলছিল সবকিছু। হঠাৎ একদিন তার বাবার জন্ডিস ধরা পড়লো। তখন দুলালের বাপ দুলালের বিয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে বদ্ধপরিকল্প হয়ে উঠলো। ফলে সালেহার বাবা কিছুদিন গাইগুই করে তারপর বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। একরকম তাড়াহুড়ো করেই সালেহা-দুলালের বিয়েটা হয়েছিল।
মা-বাবার শত বাধাবিপত্তির মুখেও সালেহা দুলালের সংসারে ফিরে আসে। তিনমাস পর সে আবারও পোয়াতি হয়েছে। তার কিছুদিন পরই দুলালও ঢাকায় ফিরে গেলো।
বিয়ের বছর দেড়েকের মাথায় দুলালের বাপ মারা গেলেন। তখন সবে সালেহা-দুলালের প্রথম মেয়ে শেফালির তিনমাস বয়স। জ্যৈষ্ঠ মাসের এক সকালে নাতনিতে কোলে নিয়ে দাদা আম-দুধ দিয়ে ভাত খেতে বসেছেন। কয়েক লোকমা মুখে তুলেই নাতনিকে পাটিতে শুইয়েই ছুটে যান কলপাড়ে। সেখানে বমি করতে করতে বেহুঁশ হয়ে যান। গ্রামের ডাক্তার বলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে। মাইক্রোবাস ভাড়া করে দুলাল ঢাকা মেডিক্যালে এনে ভর্তি করেছিল ঠিকই কিন্তু তিনদিনও আর টিকলেন না তার বাপ।
স্বামী মারা যেতেই দুলালের মা ধীরে ধীরে চণ্ডাল রূপ ধারণ করলেন। শেফালীর জন্মের পরেই শাশুড়ির অনেক মুখ ঝামটা শুনতে হয়েছিল সালেহাকে। তাই পরের বাচ্চা পেটে আসার পর থেকেই সালেহা দিনরাত নামাজের পাটিতে পড়ে থেকেছে। সারাক্ষণ একটাই দোয়া—আল্লাহ এইবার যেন ছেলে হয় আমার, দেইখো আল্লাহ তুমি! ছেলের জন্ম দিতে না পারলে তো বুড়ি আমারে মাইরাই ফেলবো। কিন্তু দেখা গেলো সেবার এমনকি পরপর আরও তিনবার সালেহার মেয়েই হলো।
তৃতীয় সন্তানটিও মেয়ে হয়েছে দেখে দুলাল একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। ছেলে তার মাকে হাড়েহাড়ে চেনে। হেন কাজ নেই দুলালের মা করতে পারে না। এরইমধ্যে দফায় দফায় অশান্তি, গালাগালি, মারামারি—সবই হয়েছে। ফলে প্রথমেই সে সিদ্ধান্ত নিলো গৃহত্যাগের। তিন মেয়েসহ স্ত্রীকে ফেলে রেখে সে বন্ধুদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলো। ওই সময় তার শেষ শিশুকন্যাটির বয়স ছিল মোটে সাতদিন।
এদিকে সেরাতে ছেলে বাড়ি ফেরেনি। সকাল থেকেই তুমুল অশান্তি করে একটু বেলা হতেই সালেহাকে মারতে মারতে রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান করে ফেলে রাখলেন শাশুড়ি। খবরটি সালেহার বাপের বাড়িতে সময় মতো পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর সালেহার বাবা এসে একরকম জোর করেই তিন নাতনিসহ মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন।
সালেহার বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা বেশ ভালোই ছিল। প্রথম চারমেয়ের সবাই সুখে শান্তিতে সংসার করছিল। শুধু ছোট মেয়ে সালেহাকে নিয়েই মা-বাবার চিন্তার শেষ ছিল না। সালেহার শাশুড়ির অত্যাচারের কথা সবার মুখে মুখে ঘুরে বেড়াতো। অনেকবার সালেহার বাপ-চাচারা গেছেন সালেহাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে। কিন্তু সালেহা কখনোই আসেনি। তার পছন্দ ছিল চাচাতো ভাইকে অথচ বাবা-মার জোরাজুরিতে বিয়ে করতে হয়েছিল দুলালকে। ফলে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাপের বাড়িতে আর না আসার। এবার এতদিন পর সালেহাকে কাছে পেয়ে সবাই খুব খুশি হলো। নানানানির চোখের মনি সালেহার ফুটফুটে তিন মেয়ে। মেয়েরা খুব খুশি নানানানির আদর-আহ্লাদ পেয়ে। কিন্তু সালেহার কোনো হেলদোল নেই। বাবা-মা অনেক করে বোঝালেন, যেন সে আর অত্যাচারি বুড়ির কাছে ফিরে না যায়। দরকার হলে সে যেন স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে মেয়েদের নিয়ে এখানেই থেকে যায়। বাপের যা কিছু সম্পত্তি আছে, সব তিনি সালেহার মেয়েদের লিখে দেবেন বলে জানান। সালেহা কোনো কথাতেই রা করে না।
এদিকে দুমাস না গড়াতেই একদিন সকালে দুলাল এসে হাজির হয়। দুলালকে দেখেই সালেহা নিঃশব্দে তার ও মেয়েদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। দুলালকে কিছু আর বলতে হয় না। মা-বাবার শত বাধাবিপত্তির মুখেও সালেহা দুলালের সংসারে ফিরে আসে। তিনমাস পর সে আবারও পোয়াতি হয়েছে। তার কিছুদিন পরই দুলালও ঢাকায় ফিরে গেলো।
সবাই মিলে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেই দেখতে পেলো বুড়ি উপুড় হয়ে দরজার কাছে পড়ে আছেন। অথচ সালেহা ও তার পাঁচ মেয়ের কারও আর জ্বর বা সর্দিকাশি কিছুই হয়নি।
ছোট মেয়ের সংসারের সীমাহীন অশান্তির শোকে সালেহার বাবার প্রাণ অকালেই ঝরে গেলো। মাও এখন শয্যাশায়ী। সালেহার অযাচিত গোঁয়ার্তুমি আর একের পর পোয়াতি হওয়ার মূর্খতায় বোনরা আর তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না। দুলালও ঢাকায় গিয়ে তেমন কিছু সুবিধা করে উঠতে না পেরে বাড়িতে ফিরে। এসেই কিছু জমি বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেলো। ঢাকায় তার এখন অনেক বন্ধু জুটেছে। সেই বন্ধুদের নিয়ে দুলালের জুয়া খেলা আর এদিক-সেদিক যাওয়ার কথাও সালেহার কানে আসে। পাঁচ ছয় মাস অন্তর অন্তর বাড়িতে এসে দুলাল বর্গা দেওয়া জমিগুলো একে একে বেচে শহরে গিয়ে টাকা ওড়ায়। ফলে সালেহার সংসারে নিত্যনতুন অভাব দেখা দিতে লাগলো।
জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে লড়ে ফ্যাকাসে হাড্ডিসার সালেহার শেষ পর্যন্ত দুটো জমজ ছেলে সন্তান হলো ঠিকই। কিন্তু অভাবের সংসারে একসঙ্গে সাত ছেলেমেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমহিম খেতে হয় তাকে। জমজ ছেলে দুটো হওয়ার পরপরই একবার মাত্র দুলাল বাড়িতে এসেছিল। এরপর আরও দেড় বছর কেটে গেছে। সালেহার ছেলেরা এখন নিজে নিজেই একা একা ঘরময় হেঁটে বেড়ায়। শাশুড়িও নাতিদের কোলে নিয়ে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ান। নাতনিরা তার দুচোখের বিষ। দাদির ধারে কাছেও তারা কখনো ঘেঁষতে পারে না।
সালেহার জীবনের এই পর্যায়ে এসে দেখা গেলো দুনিয়াজুড়ে কী একটা করোনা নামের ছোঁয়াচে রোগ এসেছে। ছেলে-জোয়ান-বুড়ো যাকেই ধরছে রোগটা, সে-ই কাশতে কাশতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মরে পরে থাকছে। সালেহার শাশুড়ি পাড়া না বেড়িয়ে থাকতে পারেন না। সকালে নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়েন গ্রামের এর-ওর বাড়ির খবর নিতে। বাড়িতে ঢুকেই নাতিদের কোলে নিয়ে বসে বসে পান চিবান। এরপরে গোসল করে এসে ভাত খেয়ে ঘুমান। সালেহা শুনেছে রোগটা খুবই ছোঁয়াচে। তাই বারবার শাশুড়িকে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু বুড়ি কোনো কিছুতেই কান দেন না। ফলে ইদানীং সালেহা তার শাশুড়ি বাড়িতে ঢুকলে তার ছেলেদের দাদির কাছে যেতে দেয় না। আর বুড়ি নাতনিদের সহ্য করতে পারে না বলে তারাও দূরে দূরে থাকে। কিন্তু বিপদটা হোলো যেদিন বুড়ি বাড়িতে এসে জ্বর আর কাশিতে ভুগে বিছানায় পড়ে কাৎরাতে লাগলো, সেদিন।
সারা দেশে কী লকডাউন হওয়ায় বারবার ফোন দিয়েও দুলালকে আনা গেলো না। জ্বর যত বাড়তে লাগলো, বুড়ি ততই নাতনিদের আকুতি-মিনতি করে কাছে ডাকতে লাগলেন। সালেহা কিছুতেই ছেলেমেয়েদের দাদির কাছে ঘেঁষতে দেয় না। সে শাশুড়ির রুমের বাইরের ছিটকিনি আঁটকে তাতে তালা ঝুলিয়ে দিলো। শুধু ঘরে খাওয়া পৌঁছে দেওয়া আর টয়লেটে যাওয়া ছাড়া সারাক্ষণ তাকে ঘরে আঁটকে রাখা হলো। কিন্তু এত সাবধানতার পরেও দাদির সঙ্গে সঙ্গে জমজ দুই নাতিরও হুহু করে জ্বর বাড়তে লাগলো। সঙ্গে বুকভাঙা কাশিও। ছেলেদের অবস্থা দিনদিন খারাপ হওয়ায় সালেহা গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ছোটাছুটি করেও কোনো ডাক্তারের সন্ধান পেলো না। জমজ ছেলে দুটো সারারাত কাশতে কাশতে দমবন্ধ হয়ে ভোরের দিকে নিস্তেজ হয়ে গেলো। মেয়েরা বারবার করে দাদির কথা বলায় সালেহার মনে পড়লো গত দুই দিনে বুড়ির দরজার তালাটা পর্যন্ত খোলা হয়নি। সবাই মিলে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেই দেখতে পেলো বুড়ি উপুড় হয়ে দরজার কাছে পড়ে আছেন। অথচ সালেহা ও তার পাঁচ মেয়ের কারও আর জ্বর বা সর্দিকাশি কিছুই হয়নি।