[পর্ব-৩০: জুনিয়র হাইস্কুল পর্ব]
পিঠে কাঁটা বিঁধে যাওয়ার পর ফের সপ্তাহখানেক বিছানায় শুয়ে থাকি। এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত হেডস্যার খোঁজখবর নেন। এসে দেখে যাচ্ছে ধনু কাকা, খোকন, বেলাল, আনোয়ার। মাঝেমাঝে আসছেন ব্রজলাল স্যার, মহিউদ্দিন। মহিউদ্দিনের কথাবার্তার ধরনও অনেকটা বেলালের মতোই। একদিন এসে বললেন, ‘কী রে কেমন লাগে?’ প্রশ্ন শুনে গা জ্বলে ওঠে। বলি, ‘আমি মরি যন্ত্রণায় তুই ইয়ার্কি করিস?’ [এখানে বলে রাখি, মহিউদ্দিন বয়সে বড় হলেও আমাদের দুজনের সম্বোধন ছিল তুই-তোকারির।] মহিউদ্দিন আমার ধমকে প্রায় কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলেন, ‘আরে আমি তো জানতে চাইলাম এখন শরীরের কী অবস্থা, সেটাই। এখানে ইয়ার্কির কী হইলো?’ শুনে আমি থ। বলি, ‘মানুষ এভাবে জিজ্ঞাসা করে?’ আমার প্রশ্ন শুনে তিনি আর কোনো কথা বলেন না। কতক্ষণ চুপ থেকে চলে যান।
মহিউদ্দিন চলে যাওয়ার পর আসে খোকন। তখন আবারও আমার মাথায় দুষ্টু পোকা খেলা শুরু করে। খোকনকে বলি, ‘কবিতা পড়তে তোর কেমন লাগে?’ জবাবে বেশ স্বতঃস্ফূর্ত সে। বলে, ‘ভালো।’ জবাব শুনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। জানতেই চাই, তারও কবিতা-ছড়া লিখতে ইচ্ছে করে কি না। আমার আগ্রহের আগুনে সে জল ঢেলে দেয়। বলে, ধুর আমাকে দিয়ে ওসব হবে না। বলি, ‘আরে চেষ্টা করতে দোষ কী? তোকে লেখার নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেবো। লিখবি। ব্যস। দেখবি লিখতে লিখতে হয়ে যাবে। ওই যে কথায় আছে না—‘গাইতে গাইতে গায়েন, বাইতে বাইতে বায়েন?’ আর তুই তো অনেক মেধাবী। দেখিয়ে দিলেই আয়ত্ত করতে তোর বেশি সময় লাগবে না।’’ যুক্তিটা সে বেশ পছন্দ করে। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার মুখ। প্রশংসায় গলেও বেশ। বলে, ‘দে, তাহলে নিয়ম বল।’
সাড়া পেয়ে নড়েচড়ে বসি। লম্বা একটা লেকচার ছাড়ি। ওই লেকচারের সারমর্ম মোটামুটি এমন—জগতের সব জ্ঞান-বিদ্যাই গুরুমুখী। ফলে গুরু যে বাক্য উচ্চারণ করবেন, শিষ্য-ছাত্রকে প্রথমে তা বিনা প্রশ্নে শিখতে হবে। মাঝখানে উল্টাপাল্টা কথা বলা যাবে না। যখন যে পয়েন্টে আলোচনা চলবে, তখন তার ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। কোনোভাবেই প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে মূল বিষয় থেকে সরে যাওয়া চলবে না। আর কূটতর্ক করা যাবে না। যেদিন তোর শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে, সেদিন বলবো, আজ তোর শিক্ষা সম্পূর্ণ ও সমাপ্ত হলো। এখন থেকে তুই দীক্ষাপ্রাপ্ত।
লম্বা লেকচার খোকন বিরক্তিহীন-ধৈর্যের সঙ্গে শুনলো বটে, কিন্তু লেকচার শেষে বললো, ‘বুঝতে পারছি, সুযোগ পেয়ে আমাকে তোর ছাত্র বানাতে চাস! এই তো?’ বলি, ‘আরে বেটা তোরে আমি ছাত্র বানাবো ক্যামনে? তুই তো বাংলা আর ব্যাকরণ বাদে বাকি সব বিষয়েই আমার চেয়ে ভালো। তুই আমার ছাত্র হতে যাবি কোন দুঃখে?’ এবারের প্রশংসাও বেশ কাজে লাগে। বলে, ‘আচ্ছা, আচ্ছা। ঠিক আছে। এবার শিখিয়ে দে।’
শুরু হয়ে গেলো ছন্দশাস্ত্রের একমাত্র শিষ্যকে জ্ঞান বিতরণপর্ব। বলা যায়, আমার জীবনের প্রথম ছাত্র সে। বর্ণ, অক্ষর, মাত্রা, পর্ব, চরণ, স্বরবৃত্ত—ইত্যাকার বিষয়ে তাকে একের পর এক পাঠ দিয়ে যাচ্ছি। আর সেও লিখে নিচ্ছে কাগজে। ছন্দশাস্ত্র নিয়ে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে পাঠ্যবই ও কিশোর পত্রিকায় প্রকাশিত স্বরবৃত্তের ছড়া-কবিতাগুলোর ছন্দ বিশ্লেষণ করে তাকে বুঝিয়ে দেই। সেদিনের মতো ছন্দের ক্লাস শেষ হলে ঠিক করি, পরদিন খোকন একটি ছড়া লিখবে, আমিও একটি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে কথা ফোটে খোকনের মুখে—‘কী ব্যাপার এমন কর-কর করছিস কেন? পড়াটা তো শেষ করতে দিবি। তারপর তো কথা বলা যাবে। নাকি? নিজেও পড়বি না, আরেকজনকেও পড়তে দিবি না। সাহিত্য দিয়ে কি আর পরীক্ষায় পাস করা যাইবো? শুধু সাহিত্য চর্চা করলে তো ক্যারিয়ার হবে না। আগে পড়াশোনা, ভালো রেজাল্ট করা। এরপর সাহিত্য। বুঝলি হাঁদারাম?’
যথারীতি পরদিন খোকন একটি ছড়া লিখে নিয়ে আসে। ছড়ার বিষয় আমাদের বাড়ি। আমিও একটি ছড়া লিখে রাখি। কাকতালীয়ভাবে দুটি ছড়ার বিষয়ই এক হয়ে যায়। তুলনামূলকভাবে আমার ছড়ার চেয়ে খোকনের ছড়া অনেক পরিপক্ব মনে হয়। ভেতরে ভেতরে খুব ঈর্ষা করি। কিন্তু মুখে তার রেশটুকুও দেখাই না। তাকে লিখতে আরও প্রাণিত করি। খোকন আমার চেয়ে ভালো লিখেছে, তাতে আমার ঈর্ষা যতটা হয়, তার চেয়ে বেশি আনন্দ হয়—আমার শেখানোটা সার্থক হচ্ছে দেখে। মনে মনে নিজেকে ধন্যবাদ দেই এই ভেবে যে, আমি ছাত্র হিসেবে যতই দুর্বল হই, শিক্ষক হিসেবে তত খারাপ না।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দুজন দুটি চেয়ার নিয়ে কাছারির সামনে বসি। কাগজ-কলম ছাড়া কেবল মুখে-মুখে আলোচনা চলতে থাকে। ছন্দের ক্লাসে পাতানো ছাত্রের সঙ্গে গভীর আলোচনায় মগ্ন—এমন সময় হাজির বেলাল। তার কণ্ঠে বিদ্রূপ—‘ও তাহলে তোমরা দুজন কবি হইবা? কই নুরুল হক তো আমাকে কোনো দিন ছন্দ শিখাও না! বন্ধুরে তো ঠিকই শিখাইতেছ! আমারে শিখাইলে তোমাদের চেয়ে ভালো লিখতে পারবো তো, এজন্য শিখাও না। বুঝি বুঝি।’ বেলালের বিদ্রূপে আমি বিব্রত হলেও খোকন হাসে। বলে, ‘আরে বোকা তোকে শেখাবে না কেন? চেয়ার এনে বসে পড়। একসঙ্গেই আলোচনা করবো সবাই। তুই এমনিতেই শিখে ফেলতে পারবি।’ খোকনের কথার মাঝখানে ছাত্র হওয়ার কী কী গুণ প্রয়োজন, তার একটা ফিরিস্তি তুলে ধরে ফের নাতিদীর্ঘ লেকচার ছাড়ি। বেলালের বিরক্তি তাতে সীমাহীন বেড়ে যায়। বলে, ‘রাখ তোর এসব লেকচার। শিখালে শিখাবি, না শিখাইলে নাই। এত লেকচার দেস ক্যা?’ তার ধৈর্যহীনতায় আমি ক্ষুব্ধ, খোকন বিস্মিত। দুজনের চেহারায় কাঠিন্য দেখে বেলাল বিপদের ঘনঘটা আঁচ করতে পারে। তাই তার কণ্ঠ নরম হয়ে আসে—‘ঠিক আছে তোরা আলোচনা কর। শুনি।’
দুজন ছাত্র পেয়ে মহাখুশি এই অবৈতনিক-স্বঘোষিত শিক্ষক। যেন অন্ধকার রাতে জোনাকপোকা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কিশোর এবার দুধের নহরে ভেসে যাওয়া ঝলমলে পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পেলো। হয়ে গেছে বিশাল আলোক-সাম্রাজ্যের যুবরাজ!
এদিকে, রাসেল-ইসমাইল দুজনে হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসে গেছে। আমাদের তিন জনের আলোচনা পাঠ্যবই ছাপিয়ে কিশোর পত্রিকার প্রকাশিত কবিতা-ছড়ায় এসে ঠেকেছে। পাঠ্যবইয়ের চেয়ে কিশোর পত্রিকার লেখায় আমাদের আগ্রহ বাড়ছে। আলোচনার মাঝখানে বেলাল উঠে দাঁড়ায়—‘বাড়ি ফিরতে হবে।’ সে চলে গেলে আমরা আলোচনা শেষ করে কাছারিতে ঢুকে পড়ি। খোকন পরদিনের ক্লাসের পড়া পড়তে শুরু করে। আমি যেহেতু স্কুলে যাবো না, সেহেতু পাঠ্যবইয়ে মন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়া খোকন জোরে জোরে পড়লে এমনিতেই আমার মুখস্ত হয়ে যাবে—এমন আত্মবিশ্বাস-ভরসা তো আগে থেকেই আছে।
কিন্তু খোকনের পড়ার মাঝখানেই তাকে থামিয়ে দেই। কৌতূহল মেশানো প্রশ্ন ছুড়ে দেই—‘দুজনের ছড়ার বিষয় একই হয়ে গেলো ক্যামনে?’ খোকন পড়ায় ব্যস্ত। আবারও প্রশ্ন, ‘দুজনের লেখার বিষয় এক হলো ক্যামনে?’ কোনো উত্তর নেই। মনে হলো, প্রশ্ন শুনে খোকন বিরক্ত। তার পড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে ভেবে চুপ হয়ে যাই। আমাকে চুপ থাকতে দেখে কথা ফোটে খোকনের মুখে—‘কী ব্যাপার এমন কর-কর করছিস কেন? পড়াটা তো শেষ করতে দিবি। তারপর তো কথা বলা যাবে। নাকি? নিজেও পড়বি না, আরেকজনকেও পড়তে দিবি না। সাহিত্য দিয়ে কি আর পরীক্ষায় পাস করা যাইবো? শুধু সাহিত্য চর্চা করলে তো ক্যারিয়ার হবে না। আগে পড়াশোনা, ভালো রেজাল্ট করা। এরপর সাহিত্য। বুঝলি হাঁদারাম?’
আর তখনই আমার মনে গেলো—বহু বছর আগে ইসমাইল এদিন দরজার ব্যাং মেরে আমার কপাল কেটে ফেলেছিল। সেদিন আমার কপাল থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছিল। আমি কি তবে আজ তারই প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম? বিস্ময়ে-ভয়ে নিজের প্রতি চরম অবিশ্বাসে একবার টাকার দিকে আরেকবার ইসমাইলের দিকে তাকাই।
ইসমাইল-রাসেল পাশের টেবিলে পড়ছিল, হাঁদারাম শব্দ শুনে তাদের সে কি হো হো হাসি। রাগে আমার গা জ্বলে যায়। তোতলামি এখনো পুরোপুরি সারেনি। দ্রুত কথা বলতে গেলে টের পাই। সাধারণত একসঙ্গে অনেক কথা বলি না। থেমে থেমে সময় নিয়ে বলি। এতে যেমন পরিষ্কারভাবে কথা বলতে পারি, তেমনি শ্রোতাও তা বুঝতে পারে। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় অন্য জায়গায়। যখন কেউ আমাকে অকারণে রাগিয়ে দেয় বা নিজে কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ি, তখন কথা আটকে যায়। কেবল তো তো তো করতে থাকি—কোনো অর্থবোধক শব্দ বের হয় না। কপালের দুই পাশে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়, হাত-পা ছুড়তে ইচ্ছে করে, তীব্র ব্যথায় চোখ দুটি ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়। হাতের কাছে কাউকে ফেলে কষে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে—দিতে যাবো অমনি মক্তবের আমির হোসনকে থাপ্পড় দেওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। তখন মনে মনে আমির হোসেনের কাছে কৈফিয়ত দেই—‘আহা তুই কেন শুধু শুধু পানি ছিটাতে গেলি? কেন অকারণে আমাকে রাগাতে গেলি? তুই কি জানতি না—আমি যে তোতলা; রেগে গেলে থাপ্পড় দিতে পারি? তুই সেদিন আমাকে এভাবে না রাগালে আমিও তোকে থাপ্পড় দিতাম না। তোরও জ্বর হতো না। হতো না…হতো না…।’ কথাগুলো মনে মনে বার কয়েক আওড়াই, ততক্ষণে মেজাজ আমার জল হয়ে আসে। মাথাব্যথা কমতে থাকে। পুকুরঘাটে যাই। অনেকক্ষণ ধরে মাথায় পানি ঢানি। চোখেমুখে পানি ছিটাই। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
ঘাট থেকে ফিরে এলে খোকন বলে, ‘এবার বল কী বলছিলি?’ বলি, ‘দুজনের ছড়ার বিষয় যে এক হয়ে গেলো!’ আমার প্রশ্ন শুনে সে বলে, ‘আমাদের তো অভিজ্ঞতা বেশি না। দুনিয়াদারিও তেমন কিছু দেখিনি। আমাদের বাড়ি, তোদের বাড়ির বাইরে নানার বাড়ি, ধনু মামাদের বাড়ি—এই ক’টি বাড়ির বাইরে স্কুলে যাই। আর তো কোথাও যাই না। কিছু দেখিও না। দুজনেই তো তাই। অভিজ্ঞতার বাইরে আর যাবো কোথায়? হয়তো একই রকম অভিজ্ঞতার কারণে এমনটা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, একইরকম অভিজ্ঞা দুজনের আরেক জায়গায় আছে। আমি যেমন স্কুল ছেড়ে হাফেজি পড়তে মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম, তিন বছর, তেমনি খোকনও। তবে সে মাদ্রাসায় যায়নি, পড়াশোনা না করে বাড়ির রাখালদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টি দেখতো। তাদের বিশাল গরু-মহিষ-ভেড়া-ছাগলের পাল। রাখালও অন্তত তিন-চারজন। এছাড়া আছে ঝাঁক-ঝাঁক বেশুমার কবুতর। ঘরের সিলিংয়ের ওপর। হিসাব-নিকাশ ছাড়া। দিনের বেলায় ঝাঁক-ঝাঁক কবুতর যখন ওড়াল দেয়, তখন তাদের উঠোনের ওপরটাই মনে হয় বিশাল আকাশ; উঠোনটা পৃথিবী। তিন বছর রাখালদের খাওয়া-দাওয়ার তদারিকে শেষে ক্লাস ফোরে ভর্তি হয়। এ কারণে যখন একই অভিজ্ঞতার যুক্তি দেয়, তখন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না আমার।
গল্পে-গল্পে আড্ডায় তখন রাত সম্ভবত আটটার আশেপাশে বাজে। সবার ক্ষুধা লেগেছে। বাজার থেকে কিছু একটা আনাতে হবে। আনবে কে? হয় ইসমাইল, না হয় রাসেল। কিন্তু টাকা দেবে কে? প্রায় চার জনের জন্য মিষ্টি মুড়ি আনতে গেলেও চার টাকা লাগবে। আমার কাছে দশ টাকার একখানা নোট ছিল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না। শার্টের পকেট, জ্যামিতির বাক্স, ড্রয়ার—কোথায় না খুঁজেছি? নেই, নেই, নেই। সোজা তাকাই রাসেলের দিকে—‘তুই নিছস?’ রাসেল মাথা নাড়ে। এবার ইসমাইলের দিকে অগ্নিদৃষ্টি—‘তুই নিছস?’ ইসমাইল স্বীকার-অস্বীকার কিছুই না করে বলে, ‘ওই তোতলা তোর টাকা কোনোদিন ধরেছি?’ শুনে মেজাজ সপ্তমে চড়ে। টেবিল থেকে জ্যামিতির বাক্স তুলে ছুড়ে মারি তার দিকে। সোজা লাগে হাতের কনুইয়ে। ‘মা গো’ চিৎকার দিয়ে পড়ে যায় মেঝেতে। ছুটে গিয়ে দেখি, বাক্স ছেদ করে কাঁটা কম্পাস ঢুকে গেছে ইসমাইলের কনুইয়ের মাংসে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। দ্রুত কম্পাসসহ বাক্স ধরে টান দেই। দুই হাত রক্তে লাল হয়ে যায়। আর তখনই দশ টাকার নোটখানা আমার হাতের মুঠো থেকে মেঝেতে খসে পড়ে, সেখানে ইসমাইলের রক্ত ঝরেছে। আর তখনই আমার মনে গেলো—বহু বছর আগে ইসমাইল এদিন দরজার ব্যাং মেরে আমার কপাল কেটে ফেলেছিল। সেদিন আমার কপাল থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছিল। আমি কি তবে আজ তারই প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম? বিস্ময়ে-ভয়ে নিজের প্রতি চরম অবিশ্বাসে একবার টাকার দিকে আরেকবার ইসমাইলের দিকে তাকাই।
চলবে…
জীবনের যতিচিহ্নগুলো-২৯॥ মোহাম্মদ নূরুল হক