[পর্ব-২৮: জুনিয়র হাইস্কুল পর্ব]
তখনো বর্ষা শেষ হয়নি। চারিদিকে সবুজ ধানক্ষেত। তার ওপর দখিনা বাতাস ‘দামাল ছেলে মতো’ নেচে নেচে দোল খেলে যায়। এমন দৃশ্যে আটকে যায় চোখ। মনে হয়—আহা প্রকৃতির বুঝি এটিই সেরা রূপ। স্কুল ছুটি হলে প্রায় বাড়ি ফিরি না। চলে যাই খোকনদের বাড়ি। থাকি দোকানঘরে। যেদিন তাদের বাড়ি যাই না, সেদিন খায়রুল বাসার, আনোয়ার, খোকন ও ধনু কাকাসহ আড্ডা জমাই কাছারিতেই।
আর যেদিন কেউ থাকে না, সেদিন সুফিয়ান হাজিদের বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের কালভার্টের ওপর যোগাসনের মতো করে বসি। তবে দুই চোখ খোলা। যতক্ষণ না সন্ধ্যা নামে, ততক্ষণ দক্ষিণমুখী বসে থাকি। সামনে খাল। পানিতে প্রচুর মাছ। চোখের সামনে লাফ দিয়ে ওঠে। আবার ডুব দেয়। পানি এতই স্বচ্ছ যে, ডুব দিয়ে যতই গভীরে যাক, দেখা যায়। বাতাস ঢেউ তোলে পানিতে, সেই ঢেউ দেখে মনে পড়ে যায়, গুচ্ছগ্রামের বাড়ির কথা। ছোট্টবেলা ঘরের পেছনে তক্তার ওপর বসে নদীর ঢেউ দেখে যেমন অনুভূতি হতো, অনেকটা সেই অনুভূতি এখানেও জাগে। কারণ সামনে যতদূর চোখ যায়, থই থই পানি আর পানি। অনেক দূরে দুটি বাড়ি। একটি বড় খালার, অন্যটি দপ্তরি আবুল কালামদের। বাড়ি দুটিকে মনে হয় ভাসমান সাম্পান। সূর্যডোবার সময় হলে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াই। বাড়ির পথ ধরি। ফেরার পথে রাস্তার পাশ থেকে গরুজোড়া নিয়ে যাই। গোয়াল ঘরে বেঁধে তারপরই পড়ার টেবিলে বসি।
সুকান্ত বিষয়ক প্রবন্ধ পড়ে প্রথম জেনে যাই, দ্রোহ-বিপ্লবে নজরুলের মতোই ছিলেন এই কিশোর কবি। কোথাও কোথাও তারও চেয়ে বেশি দ্রোহী-বিপ্লবী। আর আবুল হাসানের ওপর প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে অনেক কবির পাশাপাশি আবারও পরিচিত হই আল মাহমুদের সঙ্গে।
পড়ার টেবিলে বসি বটে, কিন্তু পাঠ্যবইয়ে মন নেই। হয়তো ‘রহস্য পত্রিকা’, নয়তো ‘কিশোর পত্রিকা’ পড়ি। আর নয়তো ডুবে যাই সাপ্তাহিক ‘হ্যানিম্যান’ কিংবা ‘বালার্ক’ পত্রিকায়। পাঠ্যবইয়ে যা পাই না, তা পাই এসব ম্যাগাজিনে। পাঠ্যবইয়ে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জসীমউদ্দীন-বন্দে আলী মিয়া-আহসান হাবীবের মতো অল্প কয়েকজনের বাইরে তেমন কারও নাম পাই না। পরিচয়ও তেমন নয়। কিন্তু এই ম্যাগাজিনগুলোয় পাওয়া যায় বিচিত্র সব কবির লেখা। এমনই দুজন কবি হলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য ও আবুল হাসান। সুকান্ত বিষয়ক প্রবন্ধ পড়ে প্রথম জেনে যাই, দ্রোহ-বিপ্লবে নজরুলের মতোই ছিলেন এই কিশোর কবি। কোথাও কোথাও তারও চেয়ে বেশি দ্রোহী-বিপ্লবী। আর আবুল হাসানের ওপর প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে অনেক কবির পাশাপাশি আবারও পরিচিত হই আল মাহমুদের সঙ্গে। সেখানে জেনে যাই—এই কবির একটি অসাধারণ কিশোর কবিতার বই আছে। নাম ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে।’ শুধু বইয়ের নাম পড়েই এতটা মুগ্ধ হয়ে পড়ি যে, সংগ্রহ করার জন্য উদ্বেল হয়ে পড়ি। একদিন বেলালকে বিষয়টি বলিও। সে বলে, ‘যাহ! শুধু কবিতার এমন বই হয় নাকি? এমন বই থাকলে আমাদের পাঠ্য হতো না?’ তার যুক্তি শুনে আমি ধন্দে পড়ে যাই।
শুক্রবার স্কুল ছুটি। দুপুরের আগে পরিচিত কাউকে সাইকেল নিয়ে বাংলাবাজারের দিকে যেতে দেখলেই তাতে চেপে বসতাম। যখন আমাদের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাতাম, অমনি নেমে যেতাম। রাস্তার উত্তর পাশে খাল। খালের ওপর বাঁশের সাঁকো। হাঁটতে গেলেই নড়ে ওঠে। তবু, কাঁপতে-কাঁপতে পৌঁছে যেতাম ওপারে। ওই পারে নেমেই প্রথম চোখ পড়তো বাড়ির দিকে। বাড়ির গাছপালা দেখলেই বুকটা খা খা করে উঠতো। প্রায় ডুকরে কেঁদে উঠতাম। এরপর ধীরে ধীরে ঢুকে পড়তাম বাড়িতে। ততদিনে অযত্নে-অবহেলায় বুনোলতা আর গাছের পাতা-ডালাপালা মিলে জঙ্গলবাড়িতে পরিণত হয়েছে। এসব জঙ্গলের ভেতরও লুকিয়ে থাকতো পেয়ারা গাছ। উঠোনে পা দিতেই পাকা পেয়ারার ঘ্রাণ এসে লাগতো নাকে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতাম সেদি দিকে। আমাকে দেখে গুইসাপ, বেজি চকিতে মাথা তুলে তাকাতো। পালাতো না। যেমনটি পোকামাকড় খাওয়ায় ব্যস্ত ছিল, তেমনটিই থাকতো।
পেয়ারাগাছে চড়ে বসতাম। কোচা ভরে পেয়ারা নিয়ে নেমে আসতাম। শূন্য ভিটি ততদিনে ঘন ঘাসে ডুবে গেছে। সেই ঘাসের ওপর কলাপাতা বিছিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতাম। আর কায়মনোবাক্যে কামনা করতাম, একদিন কাকার বাড়ি থেকে আমরা আবারও এই বাড়িতে ফিরে আসবো। আবারও এই বাড়ির কালো মোটা বাবলা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়াবো, খেজুরপাতার পাংখা ওড়াবো। কিংবা খাতার পাতা ছিঁড়ে নারিকেলের শলা, মায়ের কাঁথা সেলায়ের সুতা দিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে ওড়াবো।
তখন ছায়েদল হক মাস্টার স্কুল ছুটির বাড়ির দরোজার পশ্চিপাশে হোমিও ফার্মেসি খুলে বসতেন। ডাক্তারি ফি তেমন নিতেন না। বরং গরিব-অসহায়দের বিনা মূল্যেও ওষুধ দিতেন। আমরা যখন তার ফার্মেসিতে পৌঁছালাম, তিনি তখন একা। ভাবলাম এটাই উত্তম সুযোগ। সালাম দিয়েই তার পায়ের ওপর পড়েই জুড়ে দিলাম কান্না।
কখনো কখনো বুকপকেট থেকে কলম ও টুকরো কাগজ বের করে নোট করি। লিখে রাখি ১২ বা ১৪ পঙ্ক্তির ছড়া। সবই এই বাড়ির গাছাপালা-লতাপাতাকে নিয়ে। দুটি তেতুল গাছ ছিল। ঘরের পেছনে। পাশাপাশি। সেখানে গরু বাঁধার রশি বেঁধে দোলনা বানিয়ে তাতে পিঁড়ি পেতে দিয়ে দুলতাম। রান্নাঘরের পেছনেই ছিল বরই গাছ। সেই গাছের বরই দেখতে যেমন আঙুরের মতো ছিল, স্বাদও তেমনি। বাবার ওপর প্রচণ্ড রাগ হতো। মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে চোখ ভিজে উঠতো। কখনো কখনো চোখের কোণা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তো ঘাড় বেয়ে কলাপাতায়। সেই জল পিঠে লাগলে টের পেতাম, আমি কাঁদছি। তখন আরও গুমরে কেঁদে উঠতাম।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বেরিয়ে পড়তাম। পেয়ারাগুলো নিয়ে চলে যেতাম নানার বাড়ি। ডেকে আনতাম জাফরকে। নানিকে সব পেয়ারা দিয়ে জাফর আর আমি নিতাম দুটি। পুরো সপ্তাহের জমানো গল্প বলতাম তাকে। একদিন নানাদের কাছারি ঘরে জাফরের সঙ্গে গল্প করছি। এমন সময় নানি এসে দিলেন অদ্ভুত খবর। বাবা নাকি আমাদের বাড়ি বিক্রি করে দেবেন। কিনবেন ছায়েদল হক মাস্টার। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের হেডস্যার। খবর শুনেই কেঁদে ফেলি। নানিকে বলি, যেভাবেই হোক বিক্রি বন্ধ করাতে হবে। নানি বুদ্ধি দেন, আমি যেন ছাযেদল হক মাস্টারকে হাতেপায়ে ধরে কান্নাকাটি করি। যেন তিনি বাড়ি না কেনেন। ওই সময় আমাদের বাড়ির মতো এত বড় বাড়ি কেনার সামর্থ্য ছায়েদল হক মাস্টার ছাড়া আর কারও ছিল না।
নানির বুদ্ধি আমার মনে ধরে। জাফরকে নিয়ে হাঁটা দেই চরলক্ষ্মীর উদ্দেশে। তখন ছায়েদল হক মাস্টার স্কুল ছুটির বাড়ির দরোজার পশ্চিপাশে হোমিও ফার্মেসি খুলে বসতেন। ডাক্তারি ফি তেমন নিতেন না। বরং গরিব-অসহায়দের বিনা মূল্যেও ওষুধ দিতেন। আমরা যখন তার ফার্মেসিতে পৌঁছালাম, তিনি তখন একা। ভাবলাম এটাই উত্তম সুযোগ। সালাম দিয়েই তার পায়ের ওপর পড়েই জুড়ে দিলাম কান্না। স্যার তো হতভম্ব। ঘটনা কী? বলেন, ‘পা ছাড়। ছাড়। কী হইছে। খুলি ক।’ ততক্ষণে আমি বাষ্পরুদ্ধ। কথা বলতে পারছি না। শেষে জাফর বলতে শুরু করে, ‘স্যার, আম্নে যদি হেতাগো বাড়িটা না কিনেন, তাইলে অনেক উপকার হয়।’ স্যার বিস্মিত। বলেন, ‘ক্যামনে উপকার হয়।, হেতার বাপ তো ঋণে জর্জরিত। বাড়ি বেচবো তো ঋণ শোধ করতে। না বেচলে ঋণ শোধ করবো ক্যামনে?’
ঋণের বোঝার বিষয়টি আমারও অজানা ছিল না। বাবা বহু বছর আগে কৃষিব্যাংক থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন জমির দলিল বন্ধক রেখে। বাবার কাছে কখনো শুনতাম, কৃষিঋণে সুদ মাফের ঘোষণা দিয়েছে সরকার, কখনো শুনতো পুরো ঋণই মওকুফ। এসব করতে করতে আর ঋণ শোধ হয়নি। বাবা বছর বছর সুদও শোধ করেননি। শেষপর্যন্ত সেই ঋণ সুদাসলে চল্লিশ হাজার টাকার মতো। এত টাকা শোধ করার সামর্থ্য বাবার ছিল না। এটা অন্য সবার মতো আমারও জানা কথা। তবু বাড়ির প্রতি আমার যে নাড়ির টান, জন্মের টান; তা ভুলতে পারি না। তাই এবার মরিয়া হয়ে বলি, ‘স্যার, তার একটা ব্যবস্থা হইবো। কিন্তু আপনি যদি বাড়িটা কেনেন, আমাদের তো থাকার জায়গাও থাকবো না আর।’ স্যার আমাকে বুকে টেনে নেন। অনেক্ষণ চেপে ধরে রাখেন। বলেন, ‘আরে পাগল। আমি না কিনলে অন্য কেউ কিনবে। আচ্ছা তুই যখন কইলি, ভেবে দেখি। তোর বাপরে বুঝামু। এখন যা বাড়িতে যা।’
কী যেন বলতে গেলাম—ঠোঁটে-ঠোঁটে বাড়ি খেলো কিন্তু শব্দ বের হলো না। তখন চোখ দুটি ঠিকরে বেরিয়ে আসতো চাইলো। জামাকাপড় আস্তে নামিয়ে রাখি দরজার চৌকাঠের ওপর। এরপর পা বাড়ালাম কাছারির দিকে।
স্যারের কাছে কান্নাকাটি করে নিজেকে অনেকটাই হালকা মনে হলো। বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। যখন কাছারিতে ঢুকতে যাবো, বাবা তখন বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন। আমাদের দেখেই বললেন, ‘সারাদিন কই ছিলি?’ কথা বলি না। চুপ। এবার ধমক দিয়ে বলেন, ‘কী? কথা কস না ক্যা?’ ভয়ে ভয়ে বলি, ‘গুচ্ছগ্রাম। পুরানবাড়িতে।’ ওই বাড়ির প্রতি আমার অন্ধপ্রেম বাবার অজানা ছিল না, বহুদিন সন্ধ্যার পর আমাকে সেই বাড়ির ভিটি থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে এনেছেন বাবা। তাই আর কিছু বলেননি।
জাফর তিন-চার দিন থেকে একদিন সকালে গুচ্ছগ্রামের উদ্দেশে রওয়া দিলে আমি স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। ততক্ষণে ধনু কাকা, খোকন কাকা, মায়া, রহিমা এসে হাজির।
স্কুলের জানালাগুলো ছিল কাঠের পাল্লার। প্রতিটি পাল্লায় তিনটি করে কাঠ। এই তিনটি কাঠের সংযোগস্থলে ছিল স্কেলের মতো পাতা একটি করে কাঠ। আমরা সেই কাঠগুলো বের করে স্কুলের ওয়ালের সঙ্গে ঘষে ঘষে মসৃণ করে নিতাম। তখন অবিকল স্কেলের মতো দেখাতো। কদিন আগে আমার স্কেলটা হারিয়ে ফেলি। আরেকটা স্কেল কোথায় পাই? হঠাৎ চোখে পড়ে খোকনের আছে দুটি।
স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছি। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে আসতেই খোকনকে বলি, ‘তোর তো দুটি স্কেল, একটি আমাকে দে।’ সে কিছুতেই দেবে না। তার যুক্তি, ‘তুই জিনিসপত্রের যত্ন করিস না। কোনটা কই রাখিস হুঁশ থাকে না। তোকে দেওয়া যাবে না।’ আমিও তক্কে তক্কে থাকি, সে একটু অমনোযোগী হলেইে একটি মেরে দেবো। গল্প করতে করতে সবাই হাঁটছি। খোকন গল্প করছে হাত নেড়ে নেড়ে। অমনি একটি স্কেল রাস্তায় পড়ে যায়। আর আমি ছোঁ মেরে নিয়ে নেই। এবার সেই স্কেল নিয়ে চলে দুজনের ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে সে আমাকে প্রায় কোলে তুলে ধানক্ষেতে ছুড়ে মারে। কাদা-জলে আমি কোমর পর্যন্ত ডুবে যাই। তাই দেখে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। কিন্তু ব্যতিক্রম ধনু কাকা। গম্ভীর গলায় খোকনের উদ্দেশে বলে, ‘ভাগিনা কাজটা কিন্তু ভালো করলি না।’ বলতে বলতে নেমে পড়ে ধানক্ষেতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে তুলে দাঁড় করায়। ততক্ষণে দুজনেরই বই-জামাকাপড়—সব ভিজে একাকার।
আকস্মিক ঘটনায় সবাই থমথমে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলি না। চুপচাপ রাস্তা চলি। বাড়ি ফিরে বইগুলো শুকোতে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি পুকুরে। গোসল শেষে খেতে ঢুকি ভেতরের ঘরে। দেখি বাবা খুব উল্লসিত-আনন্দিত। অনেক বাজার করেছেন। আমাদের জন্য নতুন লুঙ্গি কিনেছেন। আরও কিনেছেন শার্ট। অনেক দিন পর বাবা লুঙ্গি-শার্ট কিনে আনায় আনন্দ আর ধরে না। কারণ এতদিন কাকাই কিনতেন। এখন কাকা বাড়িতে নেই, বাবা কিনেছেন। ইসমাইল তো নতুন জামাকাপড় পেয়ে মহাখুশি। বাবা আমার দিকে নতুন লুঙ্গি-শার্ট এগিয়ে ধরলেন। তখন ঈদ না, বার্ষিক পরীক্ষার পরও না, তাহলে এ সময়ে নতুন জামাকাপড় কেন? আমরা দুই ঈদ আর বার্ষিক পরীক্ষার পর ছাড়া কখনোই নতুন জামাকাপড় পাই না। কেউ-ই পায় না। আজ এমন কী ঘটলো যে, হঠাৎ নতুন জামা-কাপড় কিনতে হলো? ওইটুকুন বয়সেই আমার আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে মনে খটকা লাগে। জামাকাপড় হাতে নিতে নিতে বলি, ‘এই সময়ে নতুন জামা-কাপড়?’ জবাটা মা দেন। বলেন, ‘পুরান বাড়ি বেচা হয়ে গেছে। ছায়েদল মাস্টার বায়নার টাকা দিয়েছেন। সেই টাকায় সবার জন্য জামাকাপড় কিনেছেন তোর বাবা।’ আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মনে হয়, একমাত্র আশ্রয়স্থল প্রবল ভূমিকম্পে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। মাথার দুই পাশে শুরু হয়ে গেলো চিন-চিনে ব্যথা। কী যেন বলতে গেলাম—ঠোঁটে-ঠোঁটে বাড়ি খেলো কিন্তু শব্দ বের হলো না। তখন চোখ দুটি ঠিকরে বেরিয়ে আসতো চাইলো। জামাকাপড় আস্তে নামিয়ে রাখি দরজার চৌকাঠের ওপর। এরপর পা বাড়ালাম কাছারির দিকে।
চলবে…
জীবনের যতিচিহ্নগুলো-২৭॥ মোহাম্মদ নূরুল হক