[পর্ব-১৬]
আমরা এখন গুচ্ছগ্রাম থেকে এসে পড়েছি তোরাব আলী গ্রামে। মনে হচ্ছে—কোনো এক মহাপ্লাবনে ভেসে ভেসে এসে ঠেকেছি কোনো এক অচেনা দ্বীপে। সেখানে সবই আছে। সেই আলো আছে, হাওয়া আছে। আছে সেই গাছপালাও। এরও চেয়ে বেশি আছে সচ্ছলতা। এখন আর আগের মতো একবেলা খেয়ে দুই বেলা উপোস থাকতে হয় না। তিন বেলাই খাই। এখন ভাতে-মাছের কোনো অভাব নেই। পথে-ঘাটে বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখলে যতটা বিনয়ের সঙ্গে সালাম দেই, তারও দ্বিগুণ বিনম্র ব্যবহার দেখান তারা। আর সমবয়সীরাও তো প্রায় তটস্ত। কালাম নেতার ভাতিজা বলতেই অজ্ঞান।
তবু আমার মন বসে না। না বাড়িতে—না খেলার মাঠে। এছাড়া গুচ্ছগ্রামে আমার জন্মভিটায় যখন ছিলাম, তখন সবাই একই ঘরে ঘুমাতাম। এখানে এসে দুই ভাই থাকি কাছিঘরে। তখন ছনের ছাউনির কাছারি ঘর। পশ্চিম দিকে একটি দরোজা। দরোজার দুই পাশে সমান দূরত্বে দুটি জানালা। ঘরের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে একটি করে জানালা। তবে, পূর্ব দিকে অর্থাৎ মূল বাড়ির দিকে কোনো জানালা নেই। কাছারি ঘরের দক্ষিণপাশ দিয়ে ভেতর বাড়ি যাওয়ার পথ। পথের দক্ষিণ পাশেই বিশাল-পুকুর। সেই পুকুরে পানি থাকে বারোমাস। গ্রামের সবার জন্য উন্মুক্ত। বিকালবেলা গ্রামের দস্যি ছেলেরা ফুটবল-ব্যাটবল-হাডুডু খেলা শেষে এই শীতের সন্ধ্যায়ও সেই পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি ঘাটে বসে দেখি। যারা পুকুরে পানিতে দাপাদাপি করে, তাদের কেউই আমার দিকে ভ্রূক্ষেপও করে না। আমিও নির্লিপ্ত।
কাছারির সামনে ছোট্ট একটুকরো মাঠেরম তো জমি। তবে, জমি সমতলের অন্য জমির চেয়ে উঁচু। সেখানে সন্ধ্যার পর হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে ব্যাটমিন্টন খেলেন চার-ছয় জন। কাছারির সামনে দুই ভাই দুটি চেয়ার পেতে বসি। ব্যাটমিন্টন বুঝি না। তবু দেখি।
তখন ডিসেম্বরের শেষাশেষি। একদিন ইসমাইল ও আমাকে নিয়ে কাকা গেলেন চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হেডস্যারকে দেখে চমকে উঠলাম। আরে ইনি তো ছায়েদুল হক দাদা। হোমিও ডাক্তার। নানা বাড়িতে কত দেখেছি। জ্বর হলে কালোমেঘ দিতেন। আরও দিতেন হোমিওসহ কী সব ওষুধ। তিনি এই স্কুলের হেডস্যার। নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার যে একটা ভয়ডর থাকে, সেটা মুহূর্তেই উবে গেলো। পা ছুঁয়ে সালাম দিতেই আমাকে বললেন, ‘যাও একদম পূর্বমাথার ওই রুমে বসো।’ আর ইসমাইলকে বললেন, মাঝখানের ক্লাস রুমে বসতে।
কিছুক্ষণ থেমে বারকয়েক তর্জনি নাচিয়ে বলে—‘দ্যাট মিনস, তোরা সব কাজিন্স। আমি তোদের আংকল। এর মানে? মানে-মানে-মানে হলো—আমি তোদের সবার মুরব্বি কিন্তুক।’
পূর্বমাথার রুমে ঢুকে দেখি আরও অনেকেই সেখানে বসে-বসে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ কেউ কাগজে লিখে-লিখে চোর-ডাকাত খেলছে। কেউ কেউ খেলছে রাম-শ্যাম-যদু-মধু। তাদের মধ্যে কাউকেই চেনা মনে হলো না। আমি ইতস্তত বোধ করছি। কাউকেই চিনি না। মাঝখানে রুমে চলে যাবো কি না, ভাবতেছি, এমন সময় হেডস্যার এসে ঢুকলেন সেখানে। পেছন পেছন কাকাও। হেডস্যার আমাকে ইশারায় ডাকলেন। আমার মাথায় হাত রাখলেন। সবার উদ্দেশে বললেন, ‘ওর নাম মোহাম্মদ নূরুল হক। কালামের ভাতিজা। এর বাবা-মা-চাচা—তিনজনই আমার ছাত্র-ছাত্রী ছিল। আজ সেও ভর্তি হয়েছে। ও কিন্তু আমার নাতি। সাবধান তার লগে সবাই মিলেমিশে থাকবে। ঠিক আছে?’
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো—‘জি স্যার। ঠিক আছে।’ স্যার রুম থেকে বের হওয়ার পর কাকা বললেন, ‘আমি গেলাম। স্কুল ছুটি হলে তোরা সোজা বাড়ি চলে আসবি। সাবধান পথে-ঘাটে কোনোখানে কিন্তুক আড্ডা দিবি না।’ আমি মাথা নাড়ি।
কাকা চলে যাওয়ার পর রুমের সবার দিকে তাকাই। দেখি—সবার চেহারার মধ্যে কেমন যেন দুষ্টুমি দুষ্টুমি ভাব। কয়েকজন জানলা দিয়ে টপকে বাইরে চলে গেলো। কেউ কেউ দরজা দিয়ে। আমিও বাইরে এলাম। স্কুলের সামনে মসজিদ। স্কুল-মসজিদের মাঝখানে মাঠ। পূর্বপাশে মমতাজ মাঝিদের বিশাল পুকুর। পুকুর পাড়ে দুই-তিন জন আড্ডা দিচ্ছে। আমি তাদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করি। কিন্তু কী বলবো, বুঝতে পারছি না। দেখি—কয়েকজন পাতিল ভাঙা চাঁড়া ছুড়ে মারছে পুকুরে। এমনভাবে মারছে, তাতে সেই টুকরোগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে অন্যপাড় ছুঁয়েই ডুবে যাচ্ছে। আমিও তাতে যোগ দেই।
হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন বললো, ‘এ রে নূরুল হক নি রে?’ তাকিয়ে দেখি আমার বয়সী একজন। একটু আগে ক্লাসরুমে তাকে দেখিনি। মনে পড়ছে, আরে এ তো আমার চাচা! বাবা-চাচার খালোতো ভাই। দৌড়ে এলো কাছে। জড়িয়ে ধরে বলো, ‘তুই চিনতে পারছস?’ বলি, ‘হ্যাঁ। তুই ধনু কাকা’ (ফসিউল আলম ধনু)। ধনু কাকার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল বছর খানেক আগে বজল (মায়ের মামাতো) মামার বিয়েতে। সেই প্রসঙ্গ টেনে ধনু কাকা বলে, ‘যাক এবার আমরা একলগে পড়াশোনা করতে পারমু। আয় তোরে সবার লগে পরিচয় করিয়ে দিই।’ বলেই টানতে টানতে নিয়ে গেলো আমার স্কুলের পশ্চিম পাশে কবরস্থানের পাশে। সেখানে একটি ডোবা রয়েছে। কাদাপানিতে শোল-টাকি-কইয়ে ছোটাছুটি দেখছে কয়েকজন।
আমরা সেখানে হাজির হতেই, আমার বয়সী, আমার মতোই কালো একজন এগিয়ে এলো—‘ধনু মামা, এইটা কে রে?’ বলতে বলতে একদম আমাদের গা-ঘেঁষে দাঁড়ালো। ধনু কাকা বলে, ‘আরে ভাগিনা, এইটা হলো আমার ভাতিজা। কালাম ভাইছার ভাতিজা। নূরুল হক। তোরা ভাই হবি।’ এবার আমার দিকে ফিরে বলে, ‘এই হলো কাজী বাড়ির খোকন (কাজী মোহাম্মদ আসাদুল হক)।’ আমরা দুজনেই হ্যান্ডশেক করছি, এমন সময় এগিয়ে এলো আরও কয়েকজন। ধনু কাকা আমার নাম-পরিচয় জানিয়ে এবার সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়—‘এই হলো মাস্টার বাড়ির আলেয়া, এই হলো কাজী বাড়ির সেলিম। এই হলো মাঝি বাড়ির রহিমা, এই হলো কাজল। আর এই হলো আঙ্গো বাড়ির বাবলু। এরা সবাই আমার ভাগিনা-ভাগনি। একমাত্র তুই হলি ভাতিজা।’ কিছুক্ষণ থেমে বারকয়েক তর্জনি নাচিয়ে বলে—‘দ্যাট মিনস, তোরা সব কাজিন্স। আমি তোদের আংকল। এর মানে? মানে-মানে-মানে হলো—আমি তোদের সবার মুরব্বি কিন্তুক।’ তার কথা শুনে পেছন থেকে কে একজন বলে উঠলো, ‘আরে ব্যাটা সেই কথা আবার কওয়া লাগে? আমরা তো সব ভাই-বোনই। তুই ব্যাটা একলা আংকল। কথা কইবি হিসাব করি।’
রাগে-অপমানে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। কী করি, কী করি—ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো, আমার ট্রাংকের ভেতর কয়েকটি আউট বই আছে। বইগুলোর খবর কেউ জানে না।
ধনু কাকা এতক্ষণ হাস্যোজ্জ্বল ছিল। চেহারায় ছিল একটা অভিভাবক-অভিভাবক ছাপ। হঠাৎ ওই কণ্ঠ শুনে কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে গেলো। মুহূর্ত মাত্র। বাম পাতের ক্যাসিও ঘড়িটা বার কয়েক নাড়িয়ে সময় দেখলো। কিন্তু কিছু বললো না। এরপর সাঁ করেই পেছনে তাকালো। প্রায় সিংহশাবকের মতো গর্জে উঠলো তার কণ্ঠ—‘কে রে মুখের ওপর কথা কস?’ তার গর্জনে কেমন যেন থমথমে হয়ে গেলো পরিবেশ। মিনিট পাঁচেক কারও মুখে কোনো কথা সরলো না।
সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগে সেলিম এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এরপর আমার পায়ের সঙ্গে তার একটা পা পেঁচিয়ে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো ডোবার কাদা-জলে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব। ধনু কাকা এসে আমাকে টেনে তুললেন। উঠে দেখি—ততক্ষণে সেলিম একদৌড়ে স্কুলের পূর্বপাশে। রাস্তা ধরে ছুটছে আর বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে।
ভেজা জামাকাপড় নিয়েই বাড়ির পথ ধরলাম। গোসল করে খেয়ে-দেয়ে কাছারিতে শুয়েছি। একা। ইসমাইল তখনো স্কুলে। কাকাও বাড়ি নেই। আমাদের স্কুলে ভর্তি করিযে দিয়েই চলে গেছেন চট্টগ্রাম। পুরো কাছারি খালি। মা-বাবা ভেতর বাড়িতে। আমরা থাকি কাছারিতে। এ সময় ঘুম আসে না।
জাফর-ঈমাম-ডাক্তার-মাস্টারের কথা বারবার মনে পড়ছে। আহা ওই বন্ধুরা কত ভালো ছিল। কোনোদিন মারামারি করতো না। অথচ আজ প্রথম দিনেই এভাবে ল্যাং মেরে কাদা-পানিতে ফেলে দিলো সেলিম। রাগে-অপমানে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। কী করি, কী করি—ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো, আমার ট্রাংকের ভেতর কয়েকটি আউট বই আছে। বইগুলোর খবর কেউ জানে না।
মাস সাতেক আগে ছোট খালার বিয়ে হয়েছে। তারা বাড়ি করেছে নানা বাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘির পাড়ে। খালার সংসারে তার জামাই আর শাশুড়ি ছাড়া কেউ নেই। অল্প বয়সে বিয়ে হলেও অন্যদের মতো তাকে তেমন কান্নাকাটি করতে দেখিনি। কারণ খালার শাশুড়ি আমার নানির চাচাতো বোন ছিলেন। আর সেই নানিও খালার বিয়ের বহু আগে থেকেই নানা বাড়িতে অর্থাৎ তার বোনের বাড়ি থাকতেন। সুতরাং বিয়ে হলেও অচেনা-অপরিচিত পরিবারে-পরিবেশে যেতে হয়নি তাকে। হয়তো সে কারণেই তেমন কান্নাকাটি করেনি। প্রায় হাসিখুশিই থাকতো।
বলি, ‘কীকক-কী খাইবি? ভাত খাইবি?’ আলেয়া বলে ওঠে—‘তো-তো-তো তোতলা। এতজনের ভাত আছেনি ডেকচিতে?’ আমি কী বলবো, ভেবে পাই না। মাথা নিচু করে চুপ থাকি। ধনু কাকাই আমাকে লজ্জার হাত থেকে উদ্ধা করে। বলে, ‘আমরা ভাত খাইয়া গেলে একটারেও বাড়িত জায়গা দিবো না।
মাঝে-মাঝে ছোট খালাদের বাড়ি যেতাম। একদিন গিয়ে দেখি খালা রান্না করছে। তা শাশুড়ি দিঘির ঘাটে। সামনের রুমে চৌকির ওপর পা ঝুলিয়ে বসেছি। হঠাৎ চোখে পড়লো রঙিন শিকায় বাঁধা একটি নকশাকাটা ছোট্ট বাঁশের মাচাং। ঝুলছে ঘরের ভেতর। ঠিক দরোজা দিয়ে বের হওয়া পথে মাথার ওপর। ওই মাচাংয়ে কী আছে, তীব্র কৌতূহল জন্মালো। সামনে পেলাম বেতের মোড়া। মোড়ায় দাঁড়িয়েও নাগাল পেলাম না। কী করি, কী করি? দেখি, খালুর হোমিও ওষুধের শিশিঅলা একটি ছোট্ট টেবিল পড়ে আছে রুমের পশ্চিম পাশে। এতক্ষণ চোখে পড়লো কেন? তাই ভেবে পেলাম না। নাহ! আর ভেবে কাজ নেই। টেবিলটা টেনে দরজার কাছাকাছি আনলাম। উঠে দাঁড়ালাম সেই টেবিলের ওপর। দেখি—মাচাংয়ের ওপর বই আর বই। মোকসুদুল মোমেনি, বেহেশতি জেওর। সঙ্গে আরও বেশকিছু আউট বই। সেখান থেকে চারটি বই নিয়ে নেমে পড়লাম। বইগুলো দ্রুত শাটের নিচের পেটের ওপর রেখে, মাপলার দিয়ে বেঁধে নিলাম। গায়ের ওপর জড়িয়ে নিলাম নতুন কেনা চাদর। আস্তে আস্তে গেলাম খালাদের রসুই ঘরের দিকে। বলি, ‘খা-খা-খালা যাই রে।’ খালা বলেন, ‘ক্যা রে কী হইছে? আরও কতক্ষণ থাক। তোরে বিস্কুট দেই? পেয়ারা খাইবি? দিমু?’ বলি, ‘নাননন-না রে খালা। আম্মা চিল্লাইবো।’
সেই বইগুলো বাড়ি এনে রাখলেও এতদিন পড়ার সুযোগ হয়নি। আজ ট্রাংক থেকে বের করে দেখি—একটি বইয়ের নাম, ‘মন কেন কাঁদে।’ প্রচ্ছদের ওপর মেয়ের মুখ আঁকা। যেন ঠিক পানপাতা। সেই মুখ কেমন যেন মরিয়মের মুখের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। পাতা উলটায়। কিন্তু পড়ি না। পরের বইটি দেখি। নাম ‘ভাঙাপাঁজর’। এই বইটির কোনো প্রচ্ছদ নেই। দুটি বইয়ের কোনোটিরই লেখকের নাম এখন আর মনে পড়ছে না। তখনো কি খেয়াল করেছিলাম? পরবর্তী সময়ে ওই দুটি বই পড়ে পাত্র-পাত্রির কষ্টে কতনা কষ্ট পেয়েছি। কতনা ব্যথায় চোখের জল ফেলেছি। তো সেদিনের মতো বই দুটি না পড়েই আবারও ট্রাংকে রেখে দেই।
এবার বাকি দুটি বই বের করি। বই দুটির লেখক একজনই—ডেল কার্নেগি। একটির নাম সম্ভবত ‘বড় হতে চান’, অন্যটি হয়তো ‘প্রতিপত্তি ও বন্ধুত্ব লাভ’। এই দুটি বইও সেদিন পড়া হয়নি। উল্টেপাল্টে দেখছি কেবল—এমন সময় দরোজায় দুদ্দাড় শব্দ। বাইরে কোলাহল। এত জোরে আঘাত করছে, যেন ডাকাত পড়েছে। যেন আর একটু জোরে আঘাত করলেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।
দরোজা খুলতেই হুড়মুড় সদলবলে কাছারিতে ঢুকে পড়ে ধনু কাকা। বলে—‘ব্যাটা তোরে দেখতে আইছে সবাই।’ তাকিয়ে দেখি—খোকন, আলেয়া, মায়া, রহিমা, বাবলু বলে যাদের সঙ্গে তখন পরিচয় করিয়ে দিয়েছির, তারা সবাই এসেছে। বলি, ‘তো-তো-তো তোরা?’ তারা সমম্বরে বলে, ‘তোরে দেখতে আইছি।’
বলি, ‘কীকক-কী খাইবি? ভাত খাইবি?’ আলেয়া বলে ওঠে—‘তো-তো-তো তোতলা। এতজনের ভাত আছেনি ডেকচিতে?’ আমি কী বলবো, ভেবে পাই না। মাথা নিচু করে চুপ থাকি। ধনু কাকাই আমাকে লজ্জার হাত থেকে উদ্ধা করে। বলে, ‘আমরা ভাত খাইয়া গেলে একটারেও বাড়িত জায়গা দিবো না। তোর লগে সেলিম এমন ব্যবহার করেছে, তোর মন খারাপ হয়ে গেছে। এজন্যই দেখতে আইছি।’ এরপর আলেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কী রে কী কছ চেয়ারম্যান?’