এক.
রাতের ভেতর ডুবে যেতে যেতে
অঘোরে ঘুমিয়ে আছি কতদিন হলো
আর কোনো দুঃখ নেই
অথবা দুঃখের বোধ
উজ্জ্বল আকাশ দেখে দেখে
চোখ ব্যথা হলে
আদিম মাটির স্পর্শ মনে পড়ে
হারিয়ে ফেলেছি তাকে
সেই চিরচেনা পৃথিবীটা
যেখানে যুদ্ধ ও ছলনায়
বুঁদ হয়ে থেকেছি আমরা
অন্ধের উল্লাস নিয়ে চোখেমুখে
আত্মার অসুখে ইতিহাস কালো হয়ে গেলে
মাতাল ইশারা আসে
দূর এক রাত্রির গহ্বর থেকে
জ্বরে ভুগে ভুগে অভিমানী মানুষেরা
মৃতদের হাত ধরে চলে যায়
সূর্যাস্তের দিকে
শীতকাল চলে গেছে কবে
কোলাহলহীন কোন বিস্মৃতির পথে
অনেকদিন হোলো
বাতাসে ভাসছে দ্যাখো
ঝরাপাতার এস্রাজ
বিষাদের মেঘে
সে তো নয় মানুষের
অন্য কোনো ঘ্রাণে
কাফনের বিচিত্র পোশাকে ঢেকে থাকা
মানুষের স্পর্শহীন দেহে
দীর্ঘ বিরতির পর
কোথাও কোথাও ভোর দেখা দিলে
সময়ের সাথে শুধু
দূরত্ব রচনা করে চোখ
শীতলতা নেমে আসে
খুব চেনা এই ধরণীর বুকে।
দুই.
প্রতিদিন একটু একটু করে
দেহকোষগুলো বদলে বদলে যাচ্ছে বলে
হতবিহবল মানুষগুলো চুপচাপ ঘরে বসে থাকে
প্রত্যেকটি মন্থর দিনের শেষে
সোনামুখ করে সমাধির দিকে
শত শত মানুষকে হেঁটে যেতে দ্যাখে
কী শান্ত প্রসন্ন মুখগুলো আহা!
তাদের কেউ কি আমাদের পরিচিত ছিল?
কারো কারো ছায়া কি বিষণ্ন লেগেছিল?
তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে সারারাত
জ্বরকে যেদিন বলেছি চলে যেতে
সেদিন আকাশ ছিল খুব স্থির
কুয়াশার ভেতর শরীর ডুবে গেলে
অন্ধকারে হারিয়ে যায় দিগন্তরেখা
ধীর পায়ে থেমে যায় কালের মন্দির
তখনো আমরা যূথবদ্ধ হয়ে
শিথিল অক্ষরে ছায়া এঁকে গেছি
অথচ কোথাও তো ছিল না ব্যক্তিগত নির্জনতার রেশ ।
তিন.
প্রেমহীনতার দীর্ঘ ভ্রমণের পরে
শূন্য কুঠরিতে পড়ে থাকা
ঘোরগ্রস্ত মানুষেরা
বিশ্বপরিচয় বুকে নিয়ে
শুনেছি ব্রতপালন করেছিল
কোন কাটাকুটি ছাড়াই
জোনাকি পাতায় তাদের
এপিটাফ লেখা হোলো
আজকাল শব্দরা নাকি
অনুগত হয়েছে ভীষণ
প্রতিনিয়তই তারা নৈঃশব্দ্যের দিকে হেঁটে যায়
দূরের জানালা থেকে দেখি
তাদের নেই তো কোন প্রতিবিম্ব
অথচ চোখের জলে দেহগুলো ডুবছে আর ভাসছে।