কলোনির প্রেম-১
প্রেমিকার বড় ভাইয়ের হাতে চড় খেয়ে
বাড়ি ফিরে বসেছে যে ভাত খেতে
আমি সেই চশমাপরা বোকা যুবক।
অঙ্কে পেয়েছি পাল বংশীয় গোল্লা,
ইংরেজি বই-খাতা বাদামি হাওয়ার
নিঃশ্বাসে হয়ে গেছে ঊর্ধ্ব আকাশে ওড়ার ঘুড়ি।
ছয়টি মহাদেশ থেকে
সাত নদী এসে মিশেছে
আমার পায়ের কাছে।
আমি চশমাপরা বোকা প্রেমিক।
বাইসাইকেলের বেল বাজিয়ে
মুখোমুখি আবার ওই কিশোরীর।
বুনো বেড়ালের লেজে কালি লাগিয়ে
সরু গলিতে লিখি ‘হারাকিরি’র কৌশল!
প্রশ্নকাব্য
তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যে যায়,
সে-ই শোনে নাক ডাকার শব্দ।
রোজ দুপুরে কে ঘুমায়
তোমাদের বাড়িতে?
দাদি না কি দাদা?
তোমাদের পাড়ায় এত কুকুর কেন?
কুকুরগুলো কী খায়?
তোমাদের পাড়ার কুকুরগুলোকে
নাটি বিস্কুট খাওয়াতে খাওয়াতে
বানিয়ে ফেলব একদিন ছোট ভাই।
তোমার জন্য সূর্যপোড়া মাঠে
লাগিয়েছি মশলাগাছ।
তুমি কি মুঠোভরা
বেতফল নিয়ে দেখা করবে না?
বার্তা
বাইরে দেবদারু গাছের চূড়ায় মস্ত চাঁদ উঠেছে
একেবারে তোমার পোষা বেড়ালটার মতো।
প্রিয় ক্লাসিক সিনেমার নায়িকার মুখের মতো—মায়া মায়া ফকফকা।
চলো
মিষ্টি বউ আমার, মিষ্টি বান্ধবী আমার
রুপালি উঠোনে গিয়ে পাতায় বানানো, কাগজে বানানো
চীন, আফগানিস্তান বা নেপাল থেকে আনা ঘুড়ি ওড়াই।
জ্যোৎস্নার কোমল রহস্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে লাল-কমলা-নীল-বেগুনি ঘুড়ি
স্পর্শ করে আসুক চিরকালের যুবকের পাশে দাঁড়ানো চিরকালের যুবতীর
. দেখা চাঁদ।
জ্যোৎস্নার কোমল রহস্যে লাল-কমলা-নীল-বেগুনি ঘুড়িরা
আকাশপাড়ায় ছড়িয়ে আসুক আমাদের আসন্ন সন্তানের বার্তা।
ছুটিতে দাম্পত্য
ব্যালকনিতে সুকুমারের প্যান্ট আর সুচন্দার পায়জামা।
সুকুমার অফিসে যায়নি আজ, সুচন্দা অবাক
আনন্দে রেঁধেছে
চড়ুইয়ের মাংস আর শাদা ভাত।
টিভি-স্ক্রিন কাঁপছে। সন্ন্যাসী কাঁঠালগাছের এক পাতা থেকে
. অপর পাতায় পানি পড়ে টুপ।
পর্দা ওড়ানো জানালা একদম চুপ।
দুটি শরীর পাচ্ছে না কেউ টের বাইরে নেমেছে বৃষ্টি খুব!
ভ্রূণ ও সন্তান
মাতৃগর্ভ থেকেই যে সন্তান হারিয়ে গেলো, মনে পড়ে তার কথা।
ভূমিষ্ঠ হলে সে ছেলে হতো না কি মেয়ে? নামটা রেখেছিলাম ‘বার্তা’।
এরপর আমাদের যে সন্তান মাতৃগর্ভে আসে তার নাম আর আগাম রাখিনি,
এই ভয়ে যদি সে না আসে।
মাঝে-মধ্যেই বার্তাকে নিয়ে কথা হয়। সে কি বেহেস্তের বাগানে করছে
হাঁটাহাঁটি? সে দেখতে কেমন, মায়ের মতো না কি বিষণ্ন বাবার মতো?
হাসলে কি গালে টোল পড়ে, কপালে কি জন্মদাগ আছে? সে কি
দূর থেকে ফলো করছে আমাদের?
আমরা দু’জন শুনি হাওয়ায় হাওয়ায় তার কণ্ঠস্বর!
এক থালা লিচু
আজ রাতে হীরা চোরের গ্লাসে যা ভেজানো হলো তা বিষাদ নয়
. শান্তিও নয়—
মাটির তলায় গাছের শিকড়ের শেষ খুঁজে পাওয়ার মতো
নিজেকে পাওয়ার মন্ত্র। এ মন্ত্র ছুঁয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করি
‘তুমি কি জানো ব্যথা কাকে বলে?’ নিরুত্তর তুমি
. কামযন্ত্রণায় দেখো—
আকাশ গাঢ়ো নীল, নক্ষত্রেরা উঠেছে, গরু-ছাগলের
ভাস্কর্য সেজে সাদা মেঘ চড়ে বেড়াচ্ছে আকাশের কোণায়।
আমি তখন হাসতে হাসতে বলি ‘ব্যথা’ একটা শরীরের নাম।
তোমাকে চাই—এই কথার মানে হলো: আমরা অনন্তলোকে
. যাওয়ার আগে ব্যথাকে আহবান করছি ভ্রমণসঙ্গিনী হিসেবে।’
তুমি এবার দেখো—
শহরের জিপগাড়িগুলো হয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি, রিকশাগুলো নৌকা;
মৃত্যুর চোখ বেয়ে পড়ছে টপ টপ পানি, খোলসবিহীন
. এক থালা লিচুর ওপর।