অনার্যের সাইকেল
পাঁচ.
যন্ত্রণা হচ্ছে খুব, পাঠ বিরতি শেষে আলিঙ্গনে
এসো পরিমিত পায়রা। বেফাঁস ন্যাকপিন থেকে
কিছুটা দূরত্বে রাখো অস্থির প্যারাক। আর সেই
সুবাসিত হ্রদ থেকে উঠে এসো নরম কুয়োয়।
বাজনার তুরুপে ভিন্নতা যত অবশিষ্ট নেই
তারা কেউ। অযথাই বানানের গরমিল খুঁজে
খুঁজে বেহুঁশ ভিড়ের ফেউ। কী ভিন্নতা অন্ধের—
মাঠে কালো হয়ে উড়ে গেছে তারা শোক পোড়া দিনে!
দৃশ্যের মাটি থেকে খাঁটি কিছু প্রিয়দিন, ছুঁয়ে
আলোহীন ছড়িয়ে রেখেছে তারা। তারাদের বাড়ি
ফিরে গেছে ভয়ে। শূন্যতা বৃক্ষের চাবি রেখে পাঠে;
হাটে গেছে দলে। নেই কোনো পাখি পুরানা কবরে।
ছুটিতে ঘুম দিয়ে গেছে দোয়েল—মগ্নতা ছেঁড়া
জঠরে যন্ত্রণা হচ্ছে, টুপটাপ ঝড়ে যাচ্ছে মীন।
দশ.
তুমি তো এখন স্বাধীন অনেক উড়ে যতে পারো
খাঁচা থেকে অন্য খাঁচায়। মাচায় রেখে দিয়ে মুখ
ছুঁয়ে দিতে পারো মানুষের ঘৃণা। পারো নিদ্রা আরও
ব্যাকুল অসুখে বাড়িয়ে বেহালা ডেকে নিতে দুখ।
মসৃণ ক্ষতের পিপাসা তোমার দিন গুনে হাঁটো
আবার কখন ফেরাও বাতাস জিতে নিতে ঢেউ
অস্ত্রের যাদুতে ব্যাপক আহার মায়া হয় খাটো
স্বাধীন বিরহে মুখে ঢেকে কাঁদো—জানে না কেউ।
আপন হয়েছ যেখানে, যেমন কী পেয়েছ বলো
গোপন হয়েছ মনের খাঁচায় বেঁচে আছ ভুলে
একলা সাজাও স্বাধীন জীবন খাঁচা হয় কালো
নিজের মায়ায় ডুবে যাও শেষে কাঁদো অন্য হুলে।
ঘৃণার পাহাড় জমেছে হৃদয় ফাঁদে বন্য মন
গোপন ইশারা ভাঙবে তোমার ক্ষয়ে গেলে পণ।
বারো.
তিলোত্তমা, আমি আর কতদূর যেতে পারি! রোদ
শুকিয়ে সড়ক বাতিতে উঠেছি গোপনে। সিথানে
রেখেছি গোলাপ; পাপের প্রাচীর থেকে ফিরে এসে
দেখেছি তোমার পাজরে কোলাহলপূর্ণ তাথই।
আগাছার ভেতর রঙধনু কাঁদে মলিন জলে,
ভিজে যায় তব্দা খাওয়া হাহাকার। ছুটেছি, রঙ
পাখিদের পিছু পিছু স্বদেশ—অজানাই থেকে
গেলো পুষ্পিত রেহেলে খশবু ছড়ানো অধ্যায়।
ভুলে ভুলে চাঁদ-নদী-পাখি লিখে দৌড়ে গেছি স্রোতে;
কাঁটাগান শুনে তন্দ্রা ভেঙেছে জুঁই। লাটাই হাতে
ছেড়ে দিয়েছি কান্নার ঘুড়ি। যেতে পারিনি অন্ধের
বুক বরবার; কোলাহল রঙা পিপাসার ঘরে।
তিলোত্তমা, মদিরার মক্তব ছুটি। ফেরারি তুমি
লাল-নীলে। আমি আর কতদূর যেতে পারি বলো?
সতেরো.
আমার চোখকে বিশ্বাস করো। প্রত্যাহত শব্দের
সাথে আমিও মিশে আছি ধুলোর চোখে। সান্ত্বনারা
পিঠে করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে—আর্যের খোয়ারে
প্রতিহত হও। পরন্তু ইচ্ছায় নাক ফেলে রাখো।
পুরোহিত কানের কাছাকাছি হাত রাখো। সহস্র
মোমের মমিতে স্বামীর প্রেতাত্মা। ঘুনে সয়লাব
হয়ে গেছে হতাশার পানাহার। চোখে তাকাও—
গভীরে নেমে যাও। বিশ্বাস করো ক্লান্তির প্রোপজ!
মাটির ক্রোধ নিয়ে ফসলে মিশে আছি বে-রহম।
কলো পৌরুষে ঘৃণা রাখিনি কোথাও। মুছে ফেলেছি
ঈশ্বরের দাগ! আমাকে বিশ্বাস করো—আমার
চোখে নেমে যাও দ্রুত। সমুদ্র অধিক ঢেউ পাবে।
মহাশোকের বিভৎসতা পাবে। ক্ষরণ উৎসবে
মিইয়ে যাবে বটের বিভা। আমার চোখে তাকাও।
আঠারো.
এতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছ; কেন? শেষ রাতে আর
কান্নার গভীরতা বাড়িয়ে কী লাভ বলো? তবু কেন
ডেকে যাও ভীরু বাঁকের শ্মশানে। উল্টো কাঁধে জমে
আছে কত পাপ তার কোনো খাপ নেই। জ্বরময়
শীলা’র ভ্রমণে হাঁটু জল ঠেলে বন্দি হয়ে যায়
খণ্ডিত আখ্যানে। খদ্দের এলেও মাথা নিচু করে
পঠিত হয়েছো; কিছুই রাখোনি পাশাপাশি বাড়ি।
অথচ আয়না অসুখে জড়িয়ে আছ থই; ঘরময়।
গচ্ছিত খৈলানে পিচ্ছিল হচ্ছিলে দূরে গেলে কত
মাপিনি বৈঠার মেকাপ। ঠকেছি তবু; হেসে হেসে
রুইয়ে দেখেছি কতটুকু বাঁচে ভুলোমন। আর
দালানের ডালে সঞ্চিত প্রহারে কত হয় জয়।
পেত্নীর কাগজে যেসব চিঠিরা হাসে রোজ রাতে
তাদের কলবে বন্যারা বাঁচুক, ভালো থেকো ভাতে।