মানুষ
পথ থেকে এই পা সমগ্র বিশ্বের ভ্রমণজনিত ক্লান্তিবোধ না করেও
ফিরে আসে ঘরের মতো প্রিয়লোকে; পায়ে পায়ে শত বিকল্প ধারণার অপচয় শেষে
চৌকাঠপ্রিয়তার দুর্লভে ঠিকানায় স্থিতি চায়।
এই হাত সমগ্র বিশ্বের বঞ্চিত জনগর্বের প্রতি সমর্থিত।
এই হাতে হাতে খেলা করে দ্রোহস্বর, তবু হাতের নৈকট্যে প্রভুভক্তের মতো
গদগদ করে ধরে রাখা ধারণার আবেগ হৈ চৈ করে নাচে…
খণ্ড খণ্ড পতঙ্গের কথা এড়িয়ে অক্ষম ইচ্ছারা ঘুরঘুর হাসি নিয়ে
প্রত্যহ ঘুরতে থাকে মধ্যরাতের শুরুতে…
আর সকল বাসনার ভ্রমণপ্রিয়তায় বোধেরা
কড়িবর্গার সব কিছুতেই রঙ মেখে দেয়;
-এই রঙের খেলায় যে কত প্রেমহীনতা
মুখ লুকিয়ে বেঁচে গেছে এ তো সকলেই জানি আমরা।
তবু রঙে রঙে রঙহীনতার চেষ্টাযজ্ঞে
স্নায়ুচাপ ডুবে যায় গোপন কান্নায়…ফুটে ওঠে বেদনার ফুল।
কাঁদো ভোর, সন্ধ্যা, রমণীর কপোল স্নিগ্ধতা, যুবকের সৌম্য সজীবতা!
আমি রঙের বদলে পানিকে ডেকে আনি। ‘স্ফটিকস্বচ্ছতা’ বললেও কি ছাড়বে আমায়,
সেখানেও এক অপ্রচল রঙ দাঁড়িয়ে থাকে;
এইসব রঙ-মস্করাদিন, থুত্থুরে বুড়ি, প্রাচীন বুড়ো চাদর বিছিয়ে
বসে থাকে ভাবনার দরোজা পথে।
হে আমার মনোদেবতা লাফিয়ে চলে যাও, বায়বীয় হয়ে যাও হাওয়ার রাজ্যে;
-এই ভেবে যে, মনের মৃত্যু হলে দেহ তোমার ডুব দেবে যমুনার জলে।
দেহ তবু ডোবে না, ভাসার অসাড়তা শিখে নেয়,
প্রেমপল্লবে অভিযোজনপ্রিয়তা নিসর্গের ছন্দ-লয়-সুর ধরে ধরে বাড়িয়ে চলে বয়স…
নিজেকে দাবি করে তিন অক্ষরের প্রাণবিলাসে
সে হলো বুদ্ধিপ্রাণের বিস্ময়: মানুষ
দূরের ও কাছের
কখন আবার কে যে হবে দূর, কাছের মানুষ
ফলিত প্রেমের মতো বিস্তারিত হবে ক্ষণে ক্ষণে
আমার নির্বাণ কোথায় সুদূর, কোন কাছে ঘুম?
বিজ্ঞাপিত ভঙ্গির সকল কিছু আজ প্রকাশিত
আর প্রকাশ্য বেদনা বুক খুলে দেখিয়েই যাচ্ছে
সতেজ সুন্দর ক্ষতয় মোড়ানো অলীক মৎস্য…
সুদূরের বৃত্তাকার কাঙ্ক্ষা চাকার বিন্যাসে হাঁটে
আমার ছায়ায় ছায়ায় নিবাস তার,
সন্নিকটে ঘূর্ণায়মান গোলক তবু যোজন দূরত্বে যেন;
কোন ইচ্ছা কোন আশালয়ে থেকে যায় চিরস্থায়ী
কখন আবার কে যে বলে-কে কাছের কে দূরের?
ইচ্ছাবিলাস
আমাদের ঝড়বিনাশী ইচ্ছাগুলো মিলিয়ে যেতে যেতে অবশেষ:
কোথাও আলোরেখা হয়ে মৃদু স্থির, নিশ্চুপ…
বরং অন্য কোনো সতেজ ফল, অন্য কোনো মৃত গাছ,
প্রণয় বৃদ্ধি-হ্রাস নিয়ে অনির্ধারিত কথা চালানো যায়
ভরা বর্ষায়, ঘন শীতে মন কেন বিরক্তিতে হেঁটে যায়,
ইলিশ নিয়ে বাঙালির চিরায়ত আদিখ্যেতা কেন
এত এ প্রসঙ্গেও কথা চালানো যায়
ঠেলাগাড়িময় ধীর গতির এইসব কথায় তৃপ্ত হবে না কেউ
বলবে না কেউই ঝড়বিনাশী ইচ্ছাগুলো কেন মিলিয়ে যায়
শুনুন, না শুনুন
বলুন আর নাই বলুন
উঁকি দিয়ে দেখুন অন্তত:
হৃদয়গগণে সর্বদা ছড়ায়ে থাকে ভাবকথার ছোট আগুন