বরষাবালিকাকে
অগত্যা যে পথে হাঁটছি—জল নেই! অতীতের বয়ে যাওয়া স্রোতচিহ্ন দেখা যায় চোখের কৌণিকে! বস্তুবাদী পাথর কেবলই গড়িয়ে গড়িয়ে দাগ রেখে যায় বুকের পরিখায়। দেহের চারপাশে ভেসে বেড়ায় অযাচিত বালুঝড়। মনে আসে সকলেই-তো ভিজেছি একদিন স্যাঁতস্যাঁতে গলুইয়ের ছলাৎ ছলাতে। আজ যখন দু’জনে মিলে দ্বিগুণ ভিজবো…বরষাবালিকা বোঝে না কারও প্রয়োজন। জলচিহ্ন মুছে নিয়ে আমাকে সে দেখায় আরও আরও জলজ কারুকাজ, আরও অনেক রঙেলা মার্বেল। নূপুরের ঝড় তুলে যখন সে খসাতে চায় মেঘের রতিরাগ। প্রদাহ সারাতে নিজেকে সরিয়ে রাখি পাথরের ঘরে। প্রহর শেষে দেখি স্রোত নেই—গড়াতে গড়াতে স্রোতচিহ্ন হয়ে যায় শেষ পরিণাম। মল্লাররাগে পাঠিয়ে দেই বিপুল প্রার্থনা। ভুলপথে চলে আসে গগনের শিলাঝড়। আমাদের সম্পর্ক ভেঙে মিলিত হয় তরলরেখায়…
রূপ ও রূপক
দেখা হলে, স্বরচিত ঘাসের কার্পেটে উৎলে পড়ে উচ্ছ্বলতা, জড়ো হয় বাদামের খোসা, মুখভর্তি অনুভূতির বর্ণিল নিদর্শন। মুখোমুখি মানে চোখের মার্বেলে পৃথিবীর দুরন্ত খেয়াল। নতুন আগামী। এতটাই মাদকতা ওই সীমান্তের উঠোনে—অপ্রেমের দিনেও পুর্ণিমার রূপে মেখে থাকে অপরূপ পবিত্রতা।
দূর থেকে ভালোলাগা হেঁটে আসে। মাটির পাটিতে শুয়ে মোহন বাঁশিতে তাকে আরও কাছে ডাকি, গন্ধে টেনে নিই, স্পর্শে নাচিয়ে তুলি, খেলা করি, গান গাই, দিন ভেসে যায়। মাতাল রাতে রূপ দেখে সম্পূর্ণ ভুলে যাই, স্বর্ণলতা সে-ও এক মায়াবি জটিলতা। ক্ষুদ্র পৃথিবীতে তবু ঘর বেঁধে থাকি।
আঁধারের গভীরতা ঘুরতে থাকে। তোমাকে খুঁজতে থাকে ভোরের রূপালি কুয়াশা আমারই রূপ ধরে। প্রতিদিন তবু তোমার রূপান্তরিত অবয়ব প্রকাশ করে তোমাকে। আর আজীবন আমি সেই রূপ অনুবাদ করি রূপকে রূপকে।
আকাশের নক্ষত্রখচিত বেডশিটে
আদিকাল থেকে দেহঘষা আগুনে পুড়ছি। মাঝখানে খসে গ্যাছে অজস্র ঘড়ির পেন্টালুন।
আমাকে দখল করে নিয়েছে সবাই অর্থান্তরে সবাই আমার দখলে আসতে চায় বলে এত আয়োজনে এই পৃথিবী নিমন্ত্রণপ্রিয়। ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখি বাউলাঙ্গ নিয়েই ঘুরে চলেছি…ত্রিলোকের ভাবরাশিতে কখনও বা অন্ধ কীর্তনিয়া, লোকবৃত্তের বাইরে বসে কেন্দ্র খুঁজি, না দেখা তোমার ইমেজ বিলি করি ফটোশপে গিয়ে, কেবল আত্মজয়ের লোভে। আকাশ কিংবা পর্বতের গায়ে ফসফরাসের মতো যতটুকু তোমার অস্তিত্ব জানান দাও তাই কেবল স্বরূপের সাথে যুক্ত করি, শোকরসে তলিয়ে যাওয়া আমাকে ভাসাই তোমার অকথিত আশ্বাসে।
এমন রূপেলা তুমি প্রতিদিন কেন আকাশের নক্ষত্রখচিত বেডশিটে ঘুমাও…নৈমিত্তিক ঘাসের ওপর টুকরো টুকরো তুষারবিন্দু ফেলে রেখে…?