বাংকার ও ম্যাকগাইভার চাকু
কেউ ডাকল না, কেউ বলল না, ‘এসো;
যদি ভালো লাগে, নির্ভয়ে ভালোবেসো।’
গাছে পাখি নেই, পাখি-ডাকা নেই আর
কেউ জানল না, আমি কার আমি কার।আমি কারও নই, শুধু তারও নই দূরে
বসতি আমার ব্যথার সমুদ্দুরে।
আছাড়িপিছাড়ি ঢেউ মাথা ঠুকে-ঠুকে
মরছে ফেলেছেট বেওয়ারিশ সিন্দুকে।কেউ থামল না; কেউ দেখল না এসে
কে পোড়াবে আর কে পোড়ে নিরুদ্দেশে।
সময় কি আর নদী, আছে নিরবধি ঢেউ?
আজও এতটুকু, ‘এসো’ বলল না কেউ।
(অবিরাম কষ্টপাত: আবু হাসান শাহরিয়ার)
‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম। তবু একটা কিছু হয়েছি যে তাতেই আমি ধন্য হলাম’—গানটি প্রথম শুনেছিলাম সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে। আমার বন্ধু মিথুন গানের এই লাইন দুটি আমাকে লিখে দিয়েছিল। আমার সঙ্গে তখন ওর তুমুল বন্ধুত্ব। আবার বছর শেষে কেন যেন সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে, তাতেই আমার উদ্দেশে করে লিখে দেয় লাইন দুটো।
আমাদের সে সময়ে টেলিভিশনে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের একটি— ‘ম্যাকগাইভার’। একজন মানুষ শত বিপদেও মাথা ঠিক রেখে মুহূর্তেই হাতের কাছে পড়ে থাকা জিনিস থেকেই প্রয়োজন মেটাচ্ছে। সে এক বিস্ময়।! তার পকেটে একটি চাকু থাকতো। অটোমেটিক। হাতলের কাছে থাকা সুইচ চাপলেই হাতলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা চকচকে চাকুটি বেরিয়ে আসতো। আবার সুইচ চাপলেই তা চলে যেত হাতলের ভেতরে। ম্যাকগাইভার সিরিয়ালটি চলার সময়েই বাজারে এই চাকু চলে এলো। আমাদেরই এক সহপাঠী একটি চাকু কিনতে সক্ষম হয়। আর সেই চাকুটিই তখন আমাদের গর্বের। আমাদের দলের আভিজাত্যের প্রতীক। চাকুটি ধারালো ছিল না। অনেকটা হাতের নখ কাটারের সঙ্গে যেমন বিষহীন চাকু থাকে, তেমন। আমরা একেকদিন একেকজন সেই চাকুটি পকেটে নিয়ে বেরুতাম। যেদিন যার পকেটে থাকতো, সেদিন দলের নেতা সেই-ই। আমাদের দলের বাইরে, অন্য দলের খুব বেশিজন জানতো না এই চাকুর খবর। আর যারা জানতো, তাদের আগ্রহ ও লোভ দুই-ই ছিল এই চাকুর প্রতি।
বাবু, ছিল আমাদের খেলার সঙ্গী। এক ক্লাসে পড়তাম না। তবে আমাদের যে বয়স তখন তো ক্লাস দেখে বন্ধুত্ব হতো না। খেলার মাঠে যারা আসতো, তাদের সঙ্গেই সখ্য গড়ে উঠতো। বাবুও ছিল সে রকম।
চাকুর গল্পটা আমাদেরই কারো কাছ থেকে শুনেছিল বাবু। দেখার আগ্রহে আমাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা বাড়িয়ে দেয়। দলের অন্যদের চেয়ে আমার সঙ্গে সখ্য বেশি থাকায় আমাকে বিভিন্ন সময়ে চাকুটা দেখানোর অনুরোধ করে। এক বিকেলে অন্যদের অনুমতি নিয়ে দেখাতে গেলাম। আমার হাত থেকে নিয়ে নানাভাবে নেড়েচেড়ে দেখে। লোভাতুর দৃষ্টি। একদিনের জন্য চাকুটা ওর কাছে রাখার অনুরোধ করে। কিন্তু তা কি হয়? দলের বাইরে কারও কাছে রাখার অনুমতি নেই। তাছাড়া ওটা ছিল আমাদের ব্যাংকারের প্রধান অস্ত্র। আবার চাকুটা আমার নিজেরও না। তাই ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রায় জোর করেই ফিরিয়ে আনতে হয়।
আমাদের একটা গোপন ব্যাংকার ছিল। আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন আব্বার চাকরির সূত্রে থাকতাম বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায়। এখানে প্রতি শীতের সময়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসতেন শীতকালীন মহড়ায়। আমাদের স্কুল বন্ধ থাকতো। চৌধুরী পাড়ার পেছনের বিস্তৃত মাঠের কোথাও তখন কোনো ফসল থাকতো না। সেই মাঠ ছাড়িয়ে চোখে পড়তো সেনা ছাউনি। ঝোপের আড়ালে তাদের তাঁবু। ঝোপের ভেতরে মাটি খুঁড়ে তৈরি বাংকার। সাধারণের ওসব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি ছিল না। আমরা তখন খুবই ছোট। মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধাপ পেরিয়েছি। হাইস্কুলের বারান্দায় আমাদের উপস্থিতি থাকলেও, তা কোনো জোরালো ভূমিকা রাখতে শুরু করেনি। তাই আমরা অবাধে সেনাবাহিনীর সেইসব তাঁবুর কাছাকাছি চলে যেতে পারতাম। অনেক সময় কড়া অনেক কর্মকর্তা থাকলে, যাওয়ার অনুমতি পেতাম না। তবে প্রায় সময়েই যারা থাকতেন, আমাদের কিছু বলতেন না। বরং আমাদের সঙ্গে নানারকম গল্প করতেন। আমরা হাত দিয়ে ধরে ধরে সেনা সদস্যদের অস্ত্রগুলো দেখার সুযোগ পেতাম। এমনও হয়েছে, অনেক বিকেলে আমাদের ভাগে তাদের খাবার থেকে বিস্কুটও জুটে যেতো। আমরা মহানন্দে খেয়ে ঘুরে ফিরে দেখাতাম। আবার কখনো কখনো তাঁরা আমাদের বলে দিতেন, পরের দুই/একদিন আশপাশে না যেতে, কারণ তাদের বড় কর্মকর্তা আসবেন। আমাদের ওখানে দেখলে তাদের সমস্যা হবে। আমরাও নিয়ম মেনে তখন ও দিকে পা বাড়াতাম না। দূর থেকে দেখতাম জলপাই রঙের জিপগুলো ধুলো উড়িয়ে মাঠের ভেতর দিয়ে দৌড়ে যেতো। ট্যাংকগুলো নল উঁচিয়ে মাঠের এমাথা-ওমাথা দৈত্যের মতো দৌড়াতো। এ রকম দিনগুলোর কোনো একদিন আমাদের সুযোগ হলো, বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেনাপ্রশিক্ষণের ভেতরে যাওয়ার। কোনো একজন বড় কর্মকর্তা ছিলেন, এ রকমই আবছাভাবে মনে পড়ে, তার উপস্থিতিতে আমরা মাটির ভেতের লুকিয়ে রাখা কামান দেখতে পাই। মাটিতে গর্ত করে সেই কামান স্থাপন করা, ওপরে সুতার জাল—তার ওপরে নানারকম গাছলতাপাতায় ঢাকা। তবে ট্যাংকের ভেতরটা দেখার অনুমতি তিনি আমাদের দেননি। আমরা অনেক অনুরোধ করি। তিনি রাজি হন না, এরপর আমাদের দেখতে দেন বাংকার। মাটির নিচে স্থাপিত বিশাল কক্ষ। সেখানে টেবিল-চেয়ার থেকে শুরু করে মনে হয় সবই আছে। আমরা সেখানে বসি—উনি আমাদের সম্ভবত কিছু খেতেও দিয়েছিলেন। কিছু সময় থাকার সুযোগ হয়। এরপর আমরা চলে আসি।
বাড়ি ফিরে—পরদিনই খেলার মাঠে আমাদের পরিকল্পনা হয়ে যায়, এরকম একটা বাংকার করতে হবে। আমাদের এক বন্ধুর বাড়ির পেছনে বেশ জায়গা ছিল। সেই বাগানেই আমাদের ক্যাম্প তৈরি হয়। মাটি খুঁড়ে তৈরি হয় বাংকার। আমরা তিন-চার জন অনায়াসে সেখানে বসতে পারতাম। ওপরটা বাঁশ দিয়ে ঢেকে মাটি চাপা দিয়েছিলাম। সেখানে গাছও লাগিয়েছিলাম। ভেতরে ঢোকার জন্য ছিল ছোট্ট একটা গর্ত, সেই গর্ত দিয়ে আমরা শরীর গলিয়ে নেমে যেতাম বাংকারে। তখন না বুঝলেও এখন মনে হয়—খুব বিপজ্জনক ছিল ওটা। ওপরের বাঁশ ভেঙে মাটি ভেতরে পড়লে, আমরা মারাও যেতে পারতাম। কেউ টেরও পেতো না।
বাংকার আর চাকু—এই দুইটি জিনিস আমাদের গর্বের। যা অন্য আর কারও ছিল না। যদিও আমাদের সাধের বাংকারের আয়ু বেশিদিনের না। সব মিলিয়ে একমাস রাখতে পেরেছিলাম কি না, মনে করতে পারি না। বাবুকে চাকুটা দেখানোর পরই আমাদের কপালে শনি ঘনিয়ে আসে। যে বিকেলে বাবুকে চাকুটা দেখাই, তার পরদিনই স্কুলে যেতেই আমাকে ঘিরে ফিসফাস। নানা গুঞ্জন। ভালো করে কান পাততেই, শুনি স্কুলে নাকি আমার বিচার হবে। আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। আমি তো কিছুই জানি না। ভয়ে একবার স্কুল থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে আসতে চাই। কিন্তু মনে হয়, আচ্ছা দেখি তো কী ব্যাপার? ক্লাসে ঢোকার মুখে দেখি বাবু দাঁড়িয়ে আছে—আমাদের বিপক্ষ গ্রুপের কাউসারের সঙ্গে। দুই জনই আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বলে—আজ তোর খবর আছে। আমি ভয়ে ভয়ে ক্লাসে ঢুকি। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ঘিরে ধরে তাহের, মিথুন, তবিবর, নাইচ। এরা সবাই স্কুলের বন্ধু। কেউই আমাদের গ্রুপের না। কিন্তু ওরা আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। বলে কোনো চিন্তা করিস না। অন্য ক্লাসের একজন এর মাঝে দৌড়ে ক্লাসে এসে বলে যায়, ক্লাস শুরুর আগে ছাত্রসমাবেশের সময়েই নাকি আমার বিচার হবে। ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া মুখে আমি পালিয়ে যেতে চাই। মিথুন বলে, চুপ থাক। কিছুই হবে না।
ছাত্রসমাবেশের ঘণ্টা পড়লো। আমরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে মাঠের ভেতরে লাইনে দাঁড়ালাম। মিথুনদের তৎপরতায় বাবু-কাউসার প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারে না। আমার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। সমাবেশে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া ও প্রার্থনা শেষে আমরা যে যার মতো ক্লাসে ফিরে আসি। শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন ‘হনুমান স্যার’। অনেক চেষ্টা করেও এই স্যারের নাম আমি মনে করতে পারছি না। ক্লাসে ও বাইরে স্যার কোনোদিনই আমাদের নাম ধরে ডাকতেন না। স্যার রেগে গেলেও যা, আদর করেও আমাদের সবাইকে ‘এই হনুমান’ বলে ডাকতেন। তাই আমরাও আড়ালে স্যারকে হনুমান স্যার বলেই ডাকতাম। প্রথম ক্লাস নেওয়ার জন্য স্যার ক্লাসে আসতেই বাবু চলে আসে ক্লাসে। ওকে দেখেই স্যার বলে ওঠেন, কী করে হনুমান, তুই কেন?
কাউসার উঠে দাঁড়িয়ে বলে, স্যার সাংঘাতিক ব্যাপার। ও বিচার চাইতে এসেছে। স্যার কিছু বলার আগেই মিথুন, তবিবর, তাহের চিৎকার করতে থাকে—স্যার বাড়ির বিচার স্কুলে করা চলবে না। স্যার সবাইকে থামিয়ে বাবুকে ক্লাসের ভেতরে ডাকেন। ওর কাছে ঘটনা জানতে চাইলে ও বলে, ‘মামুন গতকাল আমাকে চাকু দিয়ে মারতে এসেছিল। ওরা কয়েকজন মিলে আমাকে মেরে গর্তের ভেতের চাপা দিতে চেয়েছে। ওরা এ জন্য একটা বাংকার বানিয়েছে। কিন্তু লাত্থি মেরে ওর চাকু ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় মারতে পারেনি।’ স্যার তখন জানতে চান, তোকে মারতে চেয়েছে কেন? ও বলে, ‘জানি না। আমার কোনো দোষ নেই।’ স্যার বলেন, ‘তোর কোনো দোষ নেই, এমনি এমনি তোকে মারতে চাইলো? তুই কি ফেরেস্তা?’ বাবু বলে, ‘জ্বি স্যার’। এটুকু বলতেই স্যার ওর গালে কয়েকটা চড় মারেন। এরপর আমার দিকে ঘুরে বলেন, এদিকে আয়। স্যারের টেবিলের কাছে যেতেই, বলেন, তোর সঙ্গীসাথী কোথায়? বলি, স্যার ওরা এ স্কুলে পড়ে না। স্যার আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, চল টিচার্স রুমে। ওখানেই তোর বিচার হবে। আমি কেঁদে ফেলি। মিথুন, তাহের, তবিবর আরও কে কে যেন ছিল, সবার কথা মনে নেই। ওরা বলে ওঠে, স্যার এখানেই বিচার করেন। টিচার্স রুমে নিতে হবে না। আমিও সায় দেই। তখন স্যার দপ্তরিকে ডেকে গাছের কয়েকটা ডাল কেটে দিতে বলেন। দপ্তরি কয়েকটা গাছের মোটা ডাল দিয়ে যায়। সেগুলোর সবই আমার পিঠে-হাতে ভাঙা হয়। এরপরও থামে না বিচার। আমার নাক মাটিতে লাগিয়ে স্কুল বিল্ডিংয়ের এমাথা-ওমাথা করতে হয়। ক্লাসের সময় শেষ হয়। স্যার চলে যান। মিথুনরা দৌড়ে টিউবওয়েলের কাছে গিয়ে শার্ট ভিজিয়ে নিয়ে আসে। আমার গায়ের রক্ত মুছে দেয়। পরে আমাকেও টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দেয়। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে আসি। খুবই গোপনে গায়ের শার্ট পাল্টে ফেলি। সন্ধ্যায় যখন পড়তে বসেছি, তখন বাবু তার বড় ভাইকে (ও, ওর বড় ভাইয়ের বাড়িতেই থাকতো) নিয়ে আমাদের বাড়িতে হাজির। ওর বড় ভাই আমার আব্বার কাছে আবারও বিচার দেন—তার ভাইকে মেরে ফেলতে চেয়েছি বলে। আমাদের বাংকারের কথাও জানান। যেখানে বাবুকে মেরে রেখে দিতে চেয়েছি। আব্বা সব শোনেন। ওরা চলে যায়। আমি ভয়ে ভয়ে পড়তে বসি। আর আশঙ্কা করতে থাকি—কখন আবার শাস্তি শুরু হবে? কিন্তু আব্বা আমাকে কিছুই বলেন না। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর আব্বার সঙ্গে আমাদের বাংকারের ওখানে যাই। দেখি অন্যরাও আছে। বাংকার বন্ধ করে দেওয়া হয়। একজন লোক মাটি চাপা দেয়। চাকুটা যার, তার চাকু হাতছাড়া হয়ে যায়। ওটা পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। গ্রুপের কারও সঙ্গেই তখন কথা হয় না। বিকেলে শুনি, বাবু আমাদের গ্রুপের সবার বাড়িতেই ওর ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছে। সবাই তাদের বাড়িতে উপযুক্ত প্রাপ্য পেয়েছে।
এরপরের কয়েকদিন ছিল লুকিয়ে থাকার দিন। কোনোভাবেই বাড়িতে জামা খোলা যাবে না। বাড়িতে তাই গোসল করি না। বাড়িতে গোসল করলে মা টের পেয়ে যাবেন। পাশের এক পুকুরে ছুটির দিনে গোসল করতাম। পরদিন সেখানেই গিয়েছি গোসলের জন্য। ঘাটে কাপড় কাচছিলেন আমাদের পাশের বাসার আন্টি। আমরা কয়েকজন পুকুরে নেমে ঝাপাঝাপি করছি, উনি আমাকে ডাকলেন। কাছে গেলে বললেন, হাতে দাগ কিসের? আমি কিছু বলতে পারি না। যে কান্না স্কুল থেকে ফিরে চেপে রেখেছিলাম, তা আমার চোখ ভেঙে বেরিয়ে আসতে থাকে। আমার হাত ধরে আন্টি আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। মা’কে ডেকে বলেন, ভাবি, মামুনকে এভাবে মেরেছেন কেন? মা তো অবাক। আমার কাছে সব শুনলেন। মা নিজেও কাঁদলেন। আব্বা বাড়ি ফিরলে, ওই স্যার কেন আমাকে এভাবে মারলো, তার খোঁজ নিতে বললেন। আব্বা কিছু বলেননি। বরং পরের বছরেই আমার স্কুল পাল্টে ফেলার সুযোগ হয়।
আমাদের গ্রুপের কে কোথায় আছে, জানি না। কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। অনেকের নামও মনে নেই। স্মৃতি এত কিছু মনের ভেতরে গেঁথে রেখেছে—আবার অনেক কিছুই মুছে ফেলেছে নিজের মতো করে। আমি তার দিশা খুঁজে পাই না। মিথুন, তবিবর, তাহের, নাইচ—ওরাই বা কে কোথায় আছে? বাবু, কাউসার ওরাই বা কোথায়? মিথুনের সঙ্গের এত উথাল-পাথাল বন্ধুত্বই বা কেন হারিয়ে গেল? কেন ও আমাকে লিখেছিল— বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম। মনে নেই। কোনো স্মৃতিই আমি ফেলে দিতে চাই না। সবই বুকের ভেতরে জমা রাখি। তবু তাহেরের সঙ্গে হঠাৎ দেখার স্মৃতি শুধু ভুলে যেতে চাই।
চলবে…
সোনার খাতায় ছড়ানো জীবন-১৮ ॥ মামুন রশীদ