জন্মদিন
নিঃসীম অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি জন্মদিন
ধূসর হয়ে উঠছে স্মৃতি, শুধু অনিহিত বিশ্বাসে
অন্তহীনতার পথে নিকট ও অতীতের কিছু হিরণ্ময় দৃশ্য
পরিত্যক্ত রেলস্টেশনের কাছে ওঁৎ পেতে থাকে যদি
ফিরে যাওয়া যায় জীবনের সেই উজ্জ্বল রঙে।চলে গেছো, নিশ্ছিদ্র বাসর ভেঙে, মুক্ত, ভারহীন
যে ধারাপাত কানাঘুষা হয়ে ছড়িয়ে পড়তো তাকে মধ্যবিত্ত
মনের খামখেয়ালি মাখা চুম্বনের ভেতরে ডুবিয়ে, নিষ্ঠুর কুয়াশায়।কোথায় আছো? ঝাপসা হয়ে আসা ফটোগ্রাফ, বাতাসের
জলকণা আজো তোমার সুঘ্রাণ ছড়ায়। নিরুদ্দেশে,
বেদনাজোয়ারে বিস্তৃতির ঢেউ তুলে আয়নায় ভেসে ওঠা মুখ
আমাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে করে স্বগতোক্তি: ভালো থেকো।
( এই বইটির কোনো নাম দেব না : মামুন রশীদ)
প্রত্যেক মানুষের কাছেই নিজের জন্মতারিখ স্মরণীয়। বছর ঘুরে সবার জীবনেই জন্মতারিখ আসে, জন্মতারিখ চলেও যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে নিজে ছাড়া অন্যরা মনে রাখতে পারে না। নানান ব্যস্ততায় দিনটি মনে রাখার উপায়ও খুব বেশি নেই। হয়তো সারাবছরই দিনটি ঘুরে ফিরে মনে পড়ে কিন্তু নির্ধারিত দিনে আর মনে আসে না। দিন পেরিয়ে যাবারও কয়েকদিন পর মনে হয়—আহারে ‘অমুকে’র তো জন্মদিন ছিল, শুভকামনা জানানো হলো না।
খুব কাছের কিছু মানুষ, তাদেরই জন্মতারিখটা হয়তো মনে থাকে। তারাই বছর ঘুরে দিনটি স্মরণ করে। আর যার জন্মদিন, তাকে প্রতিবছরই হিসেব রাখতে হয়—এ বছর নতুন কে অভিনন্দন জানালো, আর পুরনো কে কে ভুলে গেলো?
পৃথিবীর অন্য দেশের কথা জানি না, তবে আমাদের অধিকাংশ মানুষই (হাল আমল বাদে) তাদের জন্মতারিখ জানেন না। আমার দাদা-দাদি, আমার নানা-নানির কথা বাদই দিলাম। আমার বাবা তার জন্মতারিখ জানেন না। আমার মা জানেন না। বাবার জন্মতারিখের কথায় দাদি বাংলা মাসের নামটা ঠিকঠাক বললেও, বছরের কথা বলতে পারেন না। আর দিনের কথা এলে তো আরও এলোমেলো হয়ে স্মৃতি হাতড়াতে থাকেন। মাসের বাইরে বছরের হিসাবগুলো হয় অনেকটা এরকম—‘সে বছর খুব বান হইছিলো।’ অথবা ‘খুব জাড় (শীত/ঠাণ্ডা) ছিল সে বছর।’ জন্মতারিখের বহুল এবং কঠিন প্রচার শুরু সেদিনের ঘটনা। এখন তো জন্মনিবন্ধন আইনও হয়েছে। তবু বা আমরা কয়জনই তার সঠিক ব্যবহার করছি? এখনো কি সব মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছে?
যদিও আজ প্রায় প্রত্যেকটি সচেতন পরিবারেই ঘটা করে পালিত ছেলেমেয়ের জন্মদিন। প্রায় বাড়িতেই জন্মদিন পালনের রেওয়াজ রয়েছে। শিশুর জন্মের প্রথম বছর থেকেই শুরু হয় উৎসব। স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে তো কথাই নেই। স্কুলের বন্ধুরা শুরুতেই জানতে চায় বার্থ ডে কবে? বার্থ ডে পার্টি কোথায় হবে?
সে অর্থে আমাদের বাড়িতে জন্মদিনের চল ছিল না। স্কুল জীবনে জন্মদিন কি, তাই জানতাম না। তখন পড়াপাঠ্যের ভেতর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মতারিখ মনে রাখার চেষ্টা করতাম। কাজী নজরুল ইসলামের জন্মতারিখ মনে রাখতাম। কারণ পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঠিকঠাক জন্ম-মৃত্যু তারিখ লিখতে না পারলে পরের ক্লাসে উতরে যাওয়া কঠিন। এই আতঙ্ক ঘিরে থাকতো। তখন মনে হতো বিখ্যাতদেরই শুধু জন্ম-মৃত্যু তারিখ থাকে। পরবর্তীকালে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে, জানলাম সব মানুষেরই থাকে নির্দিষ্ট জন্মতারিখ।
স্কুল জীবনে আমার জন্মতারিখ কবে, সেটা জানতাম না। স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার আগের বছর, সবে নবম শ্রেণীতে উঠেছি। ক্লাস শুরুর কয়েকদিন পরেই স্কুল থেকে জানালো বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড ছাড়া স্কুল ফাইনাল দেওয়া যায় না। রেজিস্ট্রেশন কার্ড ব্যাপারটা কী, তা নিয়ে মহাআতঙ্ক এবং উত্তেজনা দুই-ই ছিল। তবে তাও নিমেষে দূর হয়ে যায়। স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে জানানোর পরে মা বললেন, ‘স্কুল থেকেই করে দেবে। না হলে, ফরম নিয়ে আসিস বাসায়।’ স্কুলে ভর্তির সময়ের আবেদনপত্রে আমার জন্ম সন-তারিখ উল্লেখ আছে, মনে করিয়ে দিয়ে মা বললেন, ‘ওটা দেখে তোদের স্কুল থেকেই রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে দেবে।’ আমার তো মাথা ঘুরতে লাগলো। মা, বলে কি, ওই ফরম স্যাররা বাড়িতে আনতে দেবে? এটা বললেই তো স্কুলে মার খাব। কিন্তু খুব বেশি সময় আমাকে আতঙ্কে থাকতে হয়নি। দুই-একদিনের মধ্যেই জানতে পারলাম, আমাদের প্রধান শিক্ষক নিজেই যতœ করে সবার রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে দেবেন। স্যারের হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল। স্যার অনেক সময় নিয়ে আমাদের সবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পূরণ করে দেন। (প্রধানশিক্ষকের নাম আজ আর আমার মনে নেই। আমাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পূরণ করার বছরেই উনি অবসরে চলে গিয়েছিলেন)। স্যার একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন। ওই সময় ফরম পূরণের জন্য প্রয়োজন হলে তিনি সব ছাত্রকেই একে একে তার রুমে ডেকে নিতেন। আমারও ডাক এলো। স্যারের রুমের ভারী পর্দা সরিয়ে ভয়ে ভয়ে ঢুকলাম। আমার জন্ম সন-তারিখ জানতে চাইলেন। ভর্তি ফরমে লেখা থাকার কথা আমতা আমতা করে বলার আগেই, স্যার বললেন— ‘শোন, তোর জন্ম সন-তারিখ পাল্টে দিতে হবে। স্কুল ফাইনালের সময় কাঁটায় কাঁটায় চৌদ্দ বছর হবে-এভাবে সবারটা ঠিক করছি। তোরটাও ওভাবেই করে দেবো।’ তারপর স্যার হিসেবটা এক টুকরা কাগজে ০১-০৩-১৯৭৮ লিখে বললেন, ‘এটা বাড়িতে নিয়ে যা। তোর বাবা-মা যদি আপত্তি না করে, তাহলে এটাই দিয়ে দেবো রেজিস্ট্রেশন ফরমে।’ বাড়িতে এসে মাকে দেখালাম। মা বললেন, ‘ঠিক আছে’। সেই আমার প্রথম নিজের জন্ম সন-তারিখের কথা জানা।
তারপর এ নিয়ে আর কোন উচ্ছ্বাস ছিল না। স্কুল ফাইনাল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। একজন-দুইজন করে নতুন নতুন বন্ধু হতে শুরু করে। তাদের মাঝেই কেউ একদিন জানতে চাইলো, আমার জন্মতারিখ। বললাম। শুনে বললো, এটা তোর আসল বয়স না সার্টিফিকেটের? অবাক কাণ্ড। জন্মতারিখেরও আবার আসল-নকল থাকে? আল্লাহ আল্লাহ, পৃথিবীতে সত্যিই প্রতিদিনই শেখার আছে। ওকে বললাম, তা তো জানি না। বাড়িতে শুনে এসে জানাব এটা আসল না নকল। বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে জানতে চাইলাম। মা বললেন— আমার জন্মতারিখ ২ আগস্ট, ১৯৭৭। সার্টিফিকেটে আছে- ১ মার্চ, ১৯৭৮। যাক, জানা হয়ে গেলো নিজের সঠিক জন্মতারিখ। পরদিন কলেজে এসে নতুন বন্ধুকে জানালাম। সে বছরই প্রথম বন্ধুদের কেউ কেউ আমাকে জন্মতারিখে অভিনন্দন জানায়। তখন, মনে পড়ে— আমার জন্মতারিখে, আমার বোনদের জন্মতারিখে প্রতিবছরই বাড়িতে ভালো কিছু, আমাদের পছন্দের কিছু না কিছু রান্না হয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে ওই তারিখের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি।
কলেজে পড়ার সময়ে প্রথম জানি নিজের জন্মতারিখ। এরপর থেকে প্রতিবছরই অপেক্ষা থাকতো দিনটির। পরিচিতদের প্রায় কারোই মনে থাকতো না। তবু প্রতিবারই মনে হতো, সবাই কেন জানে না আমার জন্মতারিখ? কেন আমাকে অভিনন্দন জানায় না। কেন শুভেচ্ছা জানায় না? সময় যতো গড়াতে থাকে, বন্ধুর সংখ্যা-পরিচিত জনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বছর বছর নতুন শুভেচ্ছাবার্তা আসতে থাকে। সেইসঙ্গে কমতেও থাকে পুরনোদের শুভেচ্ছা জানানোর সংখ্যা। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে পরিচিত হলাম ফেসবুকের সঙ্গে। তখনো অন্তর্জালের অলি-গলি চিনিনি কিছুই। এর মাঝেই চলে আসে জন্মতারিখ। ওবে বাবা, ভার্চুয়াল বন্ধুদের শুভেচ্ছায় ভরে ওঠে আমার দেয়াল। ভরে ওঠে আমার মেসেজের ইনবক্স। কেমন লজ্জা লাগতে থাকে। আমি কুঁকড়ে যেতে থাকি লজ্জায়। দুই-এক বছর এমন যেতেই শিখে ফেলি—জন্মতারিখ লুকিয়ে রাখার কৌশল। তারপর একদিকে যেমন স্বস্তি নেমে আসে, তেমনি চাপা বেদনাও অনুভব করি। কারণ, দেখতে পাই, পরের বছরেই আর কারো মনে নেই। দেয়াল, ইনবক্স কোথাও কোন শুভেচ্ছাবার্তা দেখতে পাই না। বাবা-মা-বোনদের বাইরে মনে করার মতো বাইরের কোন শুভেচ্ছা আসে না।
দেখতে দেখতে চল্লিশের ঘরে পা দিয়েছি। চল্লিশ বছরের মধ্যে মনে করার মতো একটি জন্মতারিখ আমি কাটিয়েছি সিরাজগঞ্জে। ২০০৫ সাল। নানান অস্থিরতায় ঢাকা থেকে চলে গিয়েছি। বগুড়ায় বাড়িতে বসে থাকি। চাকরি আর করব কি না ভাবছি। এরমাঝে একদিন সিরাজগঞ্জ থেকে আমার বন্ধু জুয়েল ফোন করে। আমাকে জানায় জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় ওখানে একটি স্কুলে আছে। সেই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আমাকে আবেদন করার জন্য বলে। ওর কথায় পরদিনই একটি আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেই। এরপর ভুলে গেছি। একদিন সকালে হঠাৎ জুয়েলের ফোন। ‘কি রে, তুই পরীক্ষা দিতে আসবি না?’ আমি তো অবাক। ওকে বলি, ‘আমাকে তো ডাকেনি।’ ও ফোন রেখে দেয়। একটু পরে আবার ফোন করে জানায়, ‘তোর কার্ড পাঠিয়েছে, হয়তো কোনো কারণে তোর হাতে যায়নি। তুই এখনি চলে আয়। রওনা দে।’ ধুর, বগুড়া থেকে যেতে তো প্রায় দেড়ঘণ্টা লাগবে। আমার এ কথায় ও বলে, ‘তুই এখনি রওনা দে। পরীক্ষা শুরু হতে দেরি আছে। দুপুরের পরে হবে। চলে আয়।’ কী আর রওনা দিয়ে দেই। মধ্যদুপুরে পৌঁছে যাই সিরাজগঞ্জ। জুয়েলের অফিসে যেতেই, ও আমাকে নিয়ে চলে এলো স্কুলে। অধ্যক্ষের রুম থেকে আমার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে দিলো। এরপর যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। কি করে যেন আমি উতরেও গেলাম। পাঁচ-ছয়দিন পরেই যোগদিতে হলো।
বগুড়া থেকে চলে এলাম সিরাজগঞ্জ। জুয়েলের সঙ্গেই ওর ডরমেটরিতে থাকার প্রাথমিক ব্যবস্থা। প্রথম দিন স্কুলে— অনেক শিশু-কিশোর। ওদের মাঝে, নিজেকে খুব বড় বড় মনে হয়। সমাবেশে নতুন শিক্ষকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। এরপর, আস্তে-ধীরে ক্লাসে একজন-দুইজন করে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে পরিচয় হতে লাগলো। কি অদ্ভুত শিশু। তাদের মায়াময় মুখ। তাদের কতো কৌতূহল, আগ্রহ। তাদের অফুরন্ত জিজ্ঞাসার মাঝে আমি অস্থির বোধ করতে থাকি। এইসব মায়াময় নরম মাটির ঢেলাকে আমি কি করে সাজাবো? কি করে প্রস্তুত করে তুলবো আগামীর জন্য? আমি ক্লাসে যাই, পড়াতে পারি না। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ঢুকতে পারি না। বারবার মনে হতে থাকে, কী পড়াব? আমি তো জানি না। নিজের অক্ষমতা, নিজের না জানার সীমাবদ্ধতা আমাকে কুঁকড়ে দিতে থাকে। আমি ওদের সঙ্গে গল্প করি। কিন্তু পড়াতে পারি না। কিছুই পড়াই না। আমি ওদের মাঝে কোন স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে পারি না। আমি ওদের জীবনের জন্য প্রস্তুত করে দিতে পারি না। আমি অস্থির হয়ে উঠতে থাকি। এরমাঝে হঠাৎ হঠাৎ খেয়াল করি—যার সঙ্গে হয়তো আমার কথামালার বিস্তার ঘটছে, সেই প্রিয় ছেলেটিই নেই। হঠাৎ করেই সে স্কুল ছেড়ে দেয়। কেউ বাবার চাকরিতে বদলির জন্য,আবার কেউ অন্য কোন অজানা কারণে। প্রতিদিনই আমি একটি একটি করে মুখ হারিয়ে যেতে দেখি। আমি আরও অস্থির হয়ে উঠতে থাকি। মাত্র কয়েকদিনে এত মায়া কী করে জন্মে! আমি বিভ্রান্ত হতে থাকি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে ওঠে। এরমাঝে এগিয়ে আসে আগস্ট মাস। প্রথম দিন পেরিয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন— স্কুল ঢুকতেই, কেমন যেন অন্যরকম মনে হতে থাকে সব। ওপরের ক্লাসের ছেলেমেয়েরা আমাকে কিছুই বলে না। কিন্তু তাদের মুখ হাসিহাসি। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ে। আমি পাঠ দিতে এগিয়ে যাই। শ্রেণীকক্ষের দরজায় দাঁড়াতেই— সবাই সমস্বরে বলে ওঠে— ‘শুভ জন্মদিন স্যার।’ কবে যে কখন ওদের কোনো একজনকে বলেছিলাম, তার জিজ্ঞাসার জবাবে, আমি মনে করতে পারি না। কিন্তু ও মনে রেখে সবাইকে জানিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্লাসেই একই ঘটনা। একসময় স্কুল ছুটি হয়ে যায়। প্রতিদিনের মতো স্কুল ছুটির পর— আমরা টিচার্স রুমে বসে আছি। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা ফিরে যাচ্ছে। এরমাঝে একটি ছেলে আমাদের টিচার্স রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায়। আমার উদ্দেশে বলে, স্যার আপনি কি আমাদের শ্রেণীকক্ষে একটু আসবেন? অন্য শিক্ষকদের কৌতূহলী চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে আসি। ওর সঙ্গে যাই নির্ধারিত শ্রেণীকক্ষে। দরজায় দাঁড়াতেই দেখি, পুরো কক্ষ ভর্তি ছেলেমেয়ে। কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে। আমাকে দেখে সবাই সমস্বয়ে আবার চেঁচিয়ে ওঠে— ‘শুভ জন্মদিন স্যার।’ আমি শ্রেণীকক্ষের ভেতরে ঢুকি। বোর্ডে বড় বড় করে লেখা ‘শুভ জন্মদিন মামুন স্যার’। টেবিলে ওপরে একটি কেক, মোমবাতি। আমার চোখ জ্বালা করে আসে। কেক কাটা হয়, মোমবাতি জ্বালানো হয়, —ফুঁ দিয়ে নেভানো হয়। একে একে সবাই ফিরে যায়। আমিও ফিরে আসি টিচার্স রুমে। রাতে নিজের ঘরে ফিরে আমার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়— এ মায়ার বাঁধন আমার জন্য না। যেখানে আমি শেখাতে পারছি না নিজেরই অক্ষমতায়, সেখানে কী করে থাকি? কী করে এসব শিশুদের ভুলিয়ে রাখি?
পরের মাসেই ইস্তফা দিতে আমার আর কোনো দ্বিধা থাকে না।
চলবে…