বাংলা ভাষায় কবি শব্দটির সঙ্গে স্যাটায়ারসূচক জুড়ে দেওয়া বহুল উচ্চারিত শব্দ সম্ভবত কাক। শিল্প-সাহিত্যে ‘কাক’ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে নানা মাত্রায়। জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত অনেক চিত্রকর্মে কাকের প্রাণবন্ত উপস্থিতি তো রীতিমতো তারকাতুল্য! ঢাকা শহর তো বটেই, সারা-পৃথিবীতে অবাধ বিচরণশীল আকাশচারী এই প্রাণীটি মানুষের নিকটতম প্রতিবেশী হয়ে আছে যুগ-যুগ ধরে। নাটকের মঞ্চেও উঠে আসা সরস সংলাপ, ‘শাহবাগের কাকেরাও কবি’। কাক একজন কবির জীবনে কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে, তা এই বাক্যে অনায়াসে উপলব্ধি করা যায়!
বাঙালিমাত্রই প্রেমে পড়ার প্রারম্ভিক পর্যায়ে ভাষার পরিশিলিত রূপটি নিয়ে ভাবিত হন। ছন্দবদ্ধ কথার জাদুতে প্রেমিক আত্মা সর্বদাই উদ্বেল হয়। কাকের সঙ্গে ‘কবি’ রূপক বা তুলনা অর্থে সম্ভবত যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা যায়।
বিপুলসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী তারুণ্যের শুরুতেই এক বা একাধিকবার কবিপ্রবণ হয়ে ওঠে। সন্দেহ নেই, এর পেছনে যে প্রেমঘটিত কারণটিই অন্যতম। (স্বভাব কবিরা ক্ষিপ্ত হবেন না। এ অনুধ্যান সর্বজনীন নয়)। এদের মাঝে কেউ কেউ রণে ভঙ্গ না দিয়ে দীর্ঘসংকুল পথে হাঁটার প্রস্তুতি নিতে থাকে। তবে সে জোছনার ফুল ধরা বা ছোঁয়াতো সহজ কথা না মোটেই। এ প্রসঙ্গে কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের একটি উক্তি ভারি মনে ধরে—‘এক একটি শতক পাঁচজন কবি সৃষ্টি করে যায়। বাকিরা অর্ধ বা আংশিক। অপ্রয়োজনীয়-অনাসৃষ্টিতো আছেই।’ আবার ‘শুধু দস্তুর মতো একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমতো এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেলো।
নজির অবশ্য আছে বটে—দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। কিন্তু সেটা ভগবত— লীলার অঙ্গ’।
তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসের শুরুটা এমন। নিতাই-এর সেই যে বাজার (পৃথিবী) ঘুরে দেখার দীপ্ত বাসনা। সঙ্গে তো কেউ নেই, কিছু নেই। একখানা বাড়তি পাঞ্জাবি। জীবনে যেখানেই সে গিয়েছে, এক-দুইখানা বই সে কিনেছে। সংখ্যায়ও তা এখন কম না। বসন ঘরে নাই, বের হয়ে পড়লেই হয়। পড়ে থাক বসন, পড়ে থাক ঘর। পড়ে থাক মায়া! কিন্তু বইগুলো ফেলে সে কোথায় যাবে! তবু অনিবার্য হয়ে ওঠে তার প্রস্থান। প্রস্থানই সত্য। ‘বাজার ঘুরিয়া দেখিতে হইবে’।
ত্রিশের দশকের শুরুতে, কালজয়ী কিশোর উপন্যাসিক দেখিয়েছেন জীবনের অবশ্যম্ভাবী এক ভিন্নতর পর্যবেক্ষণ— বছরের পর বছর কনু পুঁতে এক মাটিতে পড়ে থাকা এ-কোনো কাজের কথা নয়, এতে মানুষের মন বড় বেশি সংকীর্ণ হয়ে যায়।
চিরন্তন এই বোহেমিয়ানিজমই কি মানুষের বিকাশকে ত্বরান্বিত করছে?
হুমায়ূন আহমেদ সম্ভবত তারাশঙ্করের এন্টিলজিক দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁর কবি উপন্যাসে। কবিতার সহযাত্রীরা ধীরে ধীরে দলছুট হয়ে যাচ্ছে। কেউ সংসারী, কেউ নেশাগ্রস্ত। কেউবা মৃত্যুপথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবিতাই হয়ে উঠলো আতাহারের পরম আরাধ্য। বহুদিনের স্বপ্ন, কবি দেশ ছেড়ে যাবে। অনেক কষ্টে একটি পশ্চিমা দেশের ভিসার ব্যবস্থাও হলো। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে হঠাৎ কবি সিদ্ধান্ত পাল্টে বলে উঠলো, কবিরা হলো দেশের আত্মা, আত্মা কী করে দেশ ছেড়ে যায়!
হুমায়ূন আহমেদ আতাহারের মধ্যে দিয়ে যেমন নিতাইয়ের এন্টিলজিক দাঁড় করিয়েছেন, তেমনি সমকালীন তরুণ সমাজকে দেশ ও জাতীয়তাবোধের প্রতি মনোযোগী হওয়ারও প্রয়াস দেখিয়েছেন।
জাতীয়তা বোধ প্রশ্নে ফরাসি কবি রেনে শার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে কি? পাঠপ্রবণ বন্ধুরা চলুন ঘুরে আসি ইউরোপ থেকে।
সুররিয়ালিজম নিয়ে তখন ইউরোপজুড়ে বইছে তুমুল হাওয়া। বিশেষ করে প্যারিসেই যার উৎপত্তি এবং সুররিয়ালিস্টদের অন্যতম প্রবক্তা সে সময় রেনে শার। দশককালের মধ্যে অবশ্য সে ঢেউ প্রবল বেগেই টের পেয়েছিল বাংলা কবিতা। বিশেষ করে বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে ও অমিয় চক্রবর্তী। রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক বাংলা কবিতায় এই পাঁচ কবিকে আলাদা করে তখন চিনতে হয়েছিল। সুররিয়ালিজমের সঙ্গে অবশ্য আন্দোলন শব্দটি যুক্ত আছে, ফলে সহজেই অনুমেয়—কোনো একটি নতুন ধারণা যা সমাজে প্রতিষ্ঠার সামষ্টিক বা সংঘবদ্ধ জোরালো প্রয়াস ছিল, সেটি।
১৯৩৭ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আভাস। ২৪ বছরের রেনে শার দেশ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন অস্ত্র হাতে। অসমসাহস ও চৌকশ যোদ্ধা হিসেবে রেনে শারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো। সাত বছর রণাঙ্গনে কাটিয়ে বীরদর্পে ফিরলেন প্যারিসে। প্রবল জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত তখন ফরাসি জাতি। জাতীয় বীরের মর্যাদায় বরণ করা হলো রেনে শারকে। সাতটি বছর কাটিয়েছেন যুদ্ধে, তখনো থেমে থাকেনি কবিতার কলম। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সাহিত্যের কাছে তাঁর দায়বদ্ধতার প্রশ্নে জীবনভর থেকেছেন অবিচল। শিল্প-সাহিত্যকে দেখেছেন অন্যতর উচ্চতায়। যা অনুভব করেছেন আত্মিক ও আন্তর্জাতিক রূপে। কবিতাকে কোথাও কখনো দেশ বা জাতীয়তাবোধের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে তোলেননি। শিল্পের কনসেপ্টকে লালন করেছেন বিশ্বমানবতা ও প্রকৃতিঘনিষ্ঠরূপে। উদ্দেশ্যমূলক তো নয়ই, এমনকি কবিতা প্রকাশের বেলায় নিজের নামটি পর্যন্ত কখনো-কখনো আড়াল করে রেখেছেন এই মহাত্মা।
শারের মতবাদ ছিল, একজন মানুষ বেঁচে থাকায় দেশ ও সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে পারে কিন্তু কবিতা তাঁর নিজস্ব বোধ-প্রসূত আত্মার আরাধনা। ফলে রেনে সচেতনভাবেই কবিতায় যুদ্ধ বা দেশাত্মবোধ কোনোটিরই প্রকাশ ঘটাননি কখনো। আলবেয়ার কামু জোর দিয়ে বলতেন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফরাসি কবি রেনে শার।
বোহেমিয়ানিজমকে কবিতায় সবচে সরল সংজ্ঞায়িত করে গেছেন শার্ল বোদলেয়ার। আর নৈরাশ্যের চূড়ান্ত উম্মেষে তো জার্মান কবি হাইরিখ হাইনে কিংবদন্তি হয়ে আছেন আজও। সুররিয়ালিজম বা পরাবাস্তববাদের তুখোড় প্রবক্তা বোদলেয়ার অপ্রচলিত দৃশ্যকল্প ও আশ্চর্যকর সব রূপকল্প দ্বারা বস্তুর অন্তর্জগতকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছেন। আত্মা ও আধ্যাত্মিকতাকে অনুভব করাতে চেয়েছেন বস্তুর অন্তর্গত ভাব-বিবেচনাতেই। যার প্রকাশ ভূমিকায় বোদলেয়ার আজও অমলিন বিশ্বময় কবিতার আকাশে।
যদিও যে মাটিতে মানুষ বেড়ে ওঠে সে দেশ বা অঞ্চলের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করা চলে না কিছুতেই। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, গুন্টার গ্রাস, মিলান কুন্ডেরা, হোসে সারামাগো, লোরকা, হোর্হে লুইস বোরহেস, অ্যালেন গিন্সবার্গ, সালমান রুশদির মতো বিশ্বময় লেখকদের রচনাতে তা সুস্পষ্ট। সব লেখকই তাঁর সময়-দেশ-পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণকে বহু আঙ্গিকে প্রকাশ করে থাকেন।
বস্তুবাদ ও আধ্যাত্মবাদ প্রসঙ্গ টেনে ব্রহ্মপুত্রের তীরে বসতো আমাদের মতো ক্ষুদ্র প্রাণের বাহাসের পসরা। শালিকজংশনের ভূমিকায় যতীন সরকার লিখেছেন—‘‘সফেদ ফরাজী, সিদ্ধার্থ টিপু, বিল্লাল মেহদী, অতনু তিয়াস, চন্দন সাহা রায়—পাঁচটি নাম। পাঁচটি নামের মানুষ একত্রে মিলেছে। নানা স্থান থেকে তারা যাত্রা শুরু করেছিল। তাদের পথ হয়তো ভিন্ন ছিল, কিন্তু যাত্রার উদ্দিষ্ট ছিল অভিন্ন। সেই অভিন্ন উদ্দিষ্টের নাম ‘কবিতা’। সেই কবিতার মোহনায় এসে তারা একে অন্যেকে চিনে নিয়েছে, এবং চেনার সঙ্গে সঙ্গেই এক সঙ্গে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে গেছে।’’
কবিতা নামের এই মোহনায় এক সূত্রে আমরা বাঁধা পড়েছিলাম বটে। পাঁচ বা সাত নয়—এক ঝাঁক কবিতামনস্ক তরুণ। কিন্তু বাঁধ সাধলো নিজস্ব চিন্তা চেতনার গণ্ডি পেরোনোর সাহসটি ‘বাম-ডান’ কোনোদিক থেকেই অগ্রসর হলো না।
শাবিহ মাহমুদ তখন মাহামুদ মিলন নামে লিখতেন। তার প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘পরকীয়া রাত’ মাহামুদ মিলন নামেই প্রকাশিত। নিরেট কবিতা বিবেচনায় শাবিহ মাহমুদ, এহসান হাবীব, রীয়েল জাহিদ, সাদ্দু হাসান শালিকজংশনের জন্য অপরিহার্য নাম ছিল নিঃসন্দেহে। কিন্তু সংকট তৈরি হলো শাবিহ মাহমুদ ও এহসান হাবীবকে নিয়ে। কবিতায় তাঁরা অবশ্যই বিপুল উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তা ও মতাদর্শগত ভিন্নতা আমাদের এক মলাটবদ্ধ হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো। আমরা বলি শামসুর রাহমান, তারা বলে আল মাহমুদ। তারা-আমরা, আমরা-তারা এই নিয়ে সে ঝগড়াটা ছড়িয়ে পড়তো সবদিকে। শালিকের নির্ধারিত দুই কবির জোর আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত সংখ্যাটি পাঁচেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। একজনতো নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়ে বসলেন!
মন খারাপ নিয়ে আরও কিছুদিন অতিবাহিত হলো, যদি উভয় দিক থেকে একটা মতৈক্যে পৌঁছানো যায়। শাবিহ, এহসানকেও মন খারাপের কারণ ব্যাখ্যা করা হয় না। তবু মুখ খুলে একদিন শাবিহকে বলেই বসলাম, আমাদের মাঝে কোনো ভিন্নতা নেই। আমরা অভিন্ন চিন্তা-চেতনার পথযাত্রী। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ ও প্রগতির পক্ষে আমরা, আমাদের আর কোনো পক্ষ থাকতে পারে না। মোটাদাগে এ তিনটি বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত থাকে না, কিন্তু থেকে যায় আরও কিছু অবোধ্য অব্যক্ত জটিলতা। যার সমাধান মেলে না। যদিও শাবিহ আগে থেকেই জোর দিয়ে বলে আসছিল, সে এবং এহসান হাবীব তারা তাদের পূর্ব ধ্যানধারণা থেকে সরে এসেছে।
গাঙিনারপারের পার্শ্ববর্তী মালগুদামের বড়সড় নর্দমার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে রেল কোয়ার্টার। দক্ষিণ প্রান্তের ঘরটিতে কবি শাবিহ মাহমুদের বসবাস। সংকলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ময়মনসিংহের কবিতা, ১৯৪৭-২০০৭’। এই বিপুল শ্রমসাধ্য গ্রন্থটির সম্পাদনার কাজটিও কবি এ ঘরটিতে বসেই করেছিলেন। কে জানে হয়তো এই বাড়িটি একদিন ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠবে! ভরদুপুরে ওই ঘরে টিফিনক্যারিয়ার খুলে গরম ভাতে ভাগ বসিয়েছি কত! প্লেটে ভাত তুলে শাবিহ বলতো, ‘শুরু কর আমি চাপকল থেকে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে আসি।’
কবিতা নিয়ে উম্মুল সারাবেলা। এবার সম্পাদনার পালা। ইতোমধ্যে অনেকেই সম্পাদনার দায় কাঁধে তুলে নিয়ে বন্ধুর পথে হেঁটে চলেছেন। কখনোবা হোঁচট খেয়ে আবার সোজা পথে থেমে থেমে সে যাত্রা। ময়মনসিংহকেন্দ্রিক সাহিত্যপত্রিকাগুলোর মধ্যে সংখ্যাবিচারে এগিয়ে আছে সম্ভবত শাহিন লতিফ সম্পাদিত ‘মেঘ’। যদিও মেঘ এখন ঠিকানাসূত্রে ঢাকার আকাশে উড়ছে। কাঁটা ও কুয়াশামগ্ন পথে এই কবি হেঁটে চলেছেন দীর্ঘদিন। জীবনের নানা ব্যত্যয়কে মেনে নিয়েছেন অকপটে, তবু মেঘের যাত্রাপথটি নিষ্কণ্টক রাখতে তিনি সংকল্পবদ্ধ। অনিয়মিত প্রকাশনার মধ্যে তারাকান্দা থেকে সরকার আজিজ সম্পাদিত ‘ময়মনসিংহ জং’, নীহার বকুল সম্পাদিত ‘নীহারিকা’, শতাব্দী কাদের সম্পাদিত ‘বিবিধ’, মাসুক নন্দন সম্পাদিত ‘জ্বালামুখ’ ও অনুশীলন আড্ডার নিয়মিত প্রকাশনা ‘অনুশীলন’। মুক্তাগাছা থেকে কাজী নাসির মামুন সম্পাদিত ‘মেইন রোড’, গৌতম কৈরী সম্পাদিত ‘ঘুড্ডি’। ফুলবাড়িয়া থেকে বিল্লাল মেহদী সম্পাদিত ‘সুর্মারঙ’। শহরকেন্দ্রিক স্বাধীন চৌধুরী সম্পাদিত ‘সাঁতার’, অতনু তিয়াস সম্পাদিত ‘অথবা’, সফেদ ফরাজী সম্পাদিত ‘কালশুদ্ধি’, তপন বর্মন সম্পাদিত ‘অর্জন’, শাবিহ মাহমুদ সম্পাদিত ‘চর্যাপদ’ উল্লেখযোগ্য।
চলবে…