ছোটকাগজকে ঘিরে ছোটকাগজকর্মীর যেমন আবেগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর লেখক-পাঠকবর্গেরও। তাই ছোটকাগজ প্রসঙ্গটি একটি আবেগঘন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ছোটকাগজ কল্লোল যুগের মতো কোনো তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছে কি না, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। সঙ্গে এই প্রশ্নও তোলা অসঙ্গতা হবে না—এই কালখণ্ডের ছোটকাগজগুলো নিরঙ্কুশ সাহিত্য চর্চার প্রযত্ন হতে পেরেছে কি না।
প্রশ্ন উত্থাপনের যৌক্তিক-সঙ্গত কারণ রয়েছে—ছোটকাগজকর্মী ও এর লেখকেরা ছোটকাগজকে সাহিত্যের সূতিকাগার বলে প্রায় দাবি করেন। তাদের দাবির সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করা যায় না। কারণ, সুসম্পাদিত হলে, একটি ছোটকাগজই একটি নতুন যুগের প্রবর্তক হয়ে ওঠে। তার প্রমাণ, প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজ পত্র’, বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতাপত্রিকা’, সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’, আব্দুল্লা আবু সায়িদ সম্পাদিত ‘কণ্ঠস্বর’। এই কাগজগুলোর সঙ্গে আরও যুক্ত করা যেতে পারে ফজল শাহাবুদ্দিন সম্পাদিত ‘কবিকণ্ঠ’, ফারুক সিদ্দিকী সম্পাদিত ‘বিপ্রতীকী’ এবং আনোয়ার আহমদ সম্পাদিত ‘কিছুধ্বনি’ ও ‘রূপম’-এর নামও। যদিও এই কাগজগুলো পূর্বোক্ত কাগজগুলোর মতো মোটাদাগে কোনো যুগের স্রষ্টা হয়ে উঠতে পারেনি। তবে যেটুকু করেছে, তার গুরুত্বও কম নয়। নতুন লেখক সৃষ্টিতে এসব কাগজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই অর্থে অনস্বীকার্য—এসব কাগজে লিখেই অনেক কবি-কথাকার নিজেদের হাত পাকিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে।
_________________________________________________________________________________________________
মতান্তরবাদীদের মধ্যে অগ্রসর চিন্তার কেউ-কেউ নিজেকে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে নবায়ন করে নিয়েছিলেন। ফলে নতুন চিন্তাবিশ্বেও তারা নিজেকে মিলিয়ে নিতে পেরেছিলেন, মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন অতীতের ভুলজনিত কলঙ্কতিলকও।
________________________________________________________________________________________________
এখন প্রশ্ন হলো—স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথমার্ধে সাহিত্যিক পরিস্থিতি কেমন ছিল? তবে, আজকের এ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তখনকার চিত্র পুরোপুরি কল্পনা কষ্টকর। ওই সময়ের ছোটকাগজ ও দৈনিকের সাহিত্য পাতাগুলো পর্যালোচনা করলে বিষয়টা অনুধাবন করা সহজ। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি জাতি নতুন উদ্যোমে নিজেকে আবিষ্কার করার লক্ষ্যে নতুন চিন্তা ও প্রপঞ্চ চর্চার চেয়ে পুরনো নিয়মকানুনেই সমর্পিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিঘাত শেষ হতে সময় নিয়েছে সাহিত্যমানস। তার কারণ, ইতোপূর্বে যারা রবীন্দ্রনাথকে বর্জনসহ পাকিস্তানবাদী সাহিত্য চর্চায় উজ্জ্বীবিত ছিলেন, তাদের মতান্তরও ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু হয়ে গিয়েছিল। তারা নতুন দেশে নতুন চিন্তায় নিজেদের নবায়ন করতে কলম ধরেছিলেন। মতান্তর আর নতুন মতের মধ্যে তেমন কোনো সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটেনি।
এর কারণ হয়তো এই, মতান্তরবাদীদের মধ্যে অগ্রসর চিন্তার কেউ-কেউ নিজেকে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে নবায়ন করে নিয়েছিলেন। ফলে নতুন চিন্তাবিশ্বেও তারা নিজেকে মিলিয়ে নিতে পেরেছিলেন, মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন অতীতের ভুলজনিত কলঙ্কতিলকও।
ওই সময়ের কবি-কথাকারদের নতুন চিন্তা ও কল্পনার স্ফূরণ প্রকাশ করার মতো অসংখ্য দৈনিকলগ্ন সাহিত্য পাতা ছিল না। মুদ্রণব্যবস্থাও ছিল না এখনকার মতো এত সহজ ও অনায়াসলভ্য। তাই ওই সময়ে ছোটকাগজই সাহিত্য, জ্ঞান, দর্শনচর্চার অন্যতম বাহন হয়ে উঠেছিল।
ছোটকাগজ সম্পর্কে একটি অভিন্ন ধারণা প্রচলিত—ছোটকাগজ মাত্রই সাহিত্যশ্লিষ্ট। বিজ্ঞান-ধর্ম-দর্শন ও শিল্পকলার অন্যান্য কোনো প্রপঞ্চের আশ্রয় ছোটকাগজও যে হতে পারে, সাধারণত বিষয়টা নিয়ে ভাবতে চান না কেউ কেউ। হয়তো এ কারণে আজও শিক্ষানীতি-সমাজচিন্তা নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজের প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এর কারণ অনুসন্ধান করলে কতগুলো বিষয় অস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। এরমধ্যে, সাহিত্য নিয়ে কবি-কথাকারের মধ্যে আবেগের যে পরিমাণ প্রাচুর্য রয়েছে, জ্ঞানচর্চা ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে সে পরিমাণ নেয়। বিশেষত কবিরা যেভাবে আবগ প্রকাশ করেন, ধর্মচিন্তক, সমাজচিন্তক, রাষ্ট্রচিন্তক কিংবা দার্শনিক সেভাবে করেন না। তাদের মধ্যে নিজেকে বিজ্ঞপিত করার চেয়ে অন্যকে বোঝার বিষয়টা অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। ফলে তারা যতটা শ্রোতা-পাঠক, ততটা বক্তা বা লেখক নন। এছাড়া, সমাজ কবিকে ভালোবাসে মাত্র, কিন্তু চিন্তককে করে সম্মান। আর কবি-কথাকারকে যতই ভালোবাসুক, সংকটে, সংশয়ে পরামর্শ চায় চিন্তকের কাছে, দার্শনিকের কাছে। ফলে ধর্মচিন্তক, সমাজচিন্তক, রাষ্ট্রচিন্তক কিংবা দার্শনিক সাধারণত কবি-কথাকারের মতো আত্মপ্রচারে নেমে পড়েন না।
এর আরও একটি কারণ হলো, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যে হারে কবিতা চর্চা হয়েছে, সেহারে সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চর্চা হয়নি। চিন্তাজগতের বিভিন্ন প্রপঞ্চ সম্পর্কে বাঙালি প্রায় নীরব থেকেছে। এর ফলে প্রচুর সাহিত্যবিষয়ক ছোটকাগজ প্রকাশিত হয়েছে। তবে নাট্যকলা, চলচ্চিত্র নিয়ে দুয়েকটি কাগজ যে, একেবারেই প্রকাশিত হয়নি, তা নয়। প্রবণতা হিসেবে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ছোটকাগজগুলো অধিকাংশই সাহিত্যনির্ভর।
________________________________________________________________________________________________
কেউ-কেউ সেনাশাসক-স্বৈরশাসকের পক্ষে কলম ধরলেও, স্বাধীনচেতা কবি-সাহিত্যিকরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। ফলে ওই সময় সাহিত্য আন্দোলন শুরু হয় ছোটকাগজকেন্দ্রিক। একদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত দৈনিকের সাহিত্যপাতায় তথা-রাজনৈতিক কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম বিশেষভাবে প্রকাশিত হতে থাকে, অন্যদিকে বিশুদ্ধবাদীরা নিজেদের সাহিত্যিক শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য শুরু করেন ছোটকাগজ আন্দোলন।
________________________________________________________________________________________________
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে শুরুতে যারা ছোটকাগজ চর্চায় এগিয়ে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই আজ সাহিত্যজগতে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত। কী ছোটগল্পে, কী কবিতায় ছোটকাগজকর্মীরা যে উদ্যোম ও উৎসাহ নিয়ে ছোটকাগজের প্রকাশনাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার গুরুত্ব ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যবহ।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর এদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে কবি-সাহিত্যিকদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ-কেউ সেনাশাসক-স্বৈরশাসকের পক্ষে কলম ধরলেও, স্বাধীনচেতা কবি-সাহিত্যিকরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। ফলে ওই সময় সাহিত্য আন্দোলন শুরু হয় ছোটকাগজকেন্দ্রিক। একদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত দৈনিকের সাহিত্যপাতায় তথা-রাজনৈতিক কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম বিশেষভাবে প্রকাশিত হতে থাকে, অন্যদিকে বিশুদ্ধবাদীরা নিজেদের সাহিত্যিক শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য শুরু করেন ছোটকাগজ আন্দোলন।
১৯৯০ সালের পরই বিশ্বরাজনীতিতে শুরু হয়, উপসাগরীয় যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের ভয়াবতা বাংলাদেশের সাহিত্যিক পরিমণ্ডলকেও প্রবাহিত করে। এ সময় বাংলাদেশেও স্বৈরশাসকেরও পতন ঘটে। ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হয় নতুন করে। নতুন উন্মাদনা ও বিশ্ববীক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন মূলত কবিরাই। এর কারণ হয়তো, কবিরা সংবেদনশীল, কথাসাহিত্যিকরা বুদ্ধিবৃত্তিক। তাই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর ধরনে যতটা আগ্রহী কবিরা, ততটা কথাশিল্পীরা নন। কথাশিল্পীরা একটি বিষয়কে আত্মস্থ করে, তার শৈল্পিক রূপান্তরের জন্য একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত অপো করেন। তখন কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি তাদের ভেতর সহজে একটি চিত্র আঁকার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু কবিরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বলে, অনেক সময় মূল বিষয়কে সুদূরপ্রসারী করে তুলতে ব্যর্থ হন।
তবু এ সময় বাংলাদেশের ছোটকাগজ চর্চায় একটি প্রবাহ শুরু হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অবাধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কবিদেরই বেশি আন্দোলিত করে। স্বাভাবিকভাবেই কবিতা চর্চাই এ সময় প্রকট হয়ে ওঠে।
_______________________________________________________________________________________________
দৈনিকলগ্ন সাহিত্যপাতাগুলো উপযুক্ত ক্ষেত্র নয়। ফলে সাহিত্যিকদ্রোহ প্রকাশের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে নতুন-নতুন ছোটকাগজ প্রকাশনা। এ সব ছোটকাগজে সাধারণত কবিতা, জ্বালাময়ী বক্তৃতাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, ছোটগল্প কিংবা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু রাজনীতি সচেতন, সমাজমনস্ক চিন্তককুল তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, প্রকাশ করতে থাকেন রাজনীতিশ্লিষ্ট ছোটকাগজও। এসব কাগজে প্রকাশিত হতে থাকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্ম-উদ্যোগ ও কর্মসূচি।
_______________________________________________________________________________________________
পৃথিবীব্যাপী ধর্মের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে, বিশেষত বিশ্বাসীরা বার বার নিরাশ হয়েছেন। বিশ্বাসীদের সামনে অলৌকিক শক্তির চেয়ে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের শক্তিই প্রবল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ফলে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এই বিভ্রান্তি তাদের মনকে শঙ্কিত করে তুলছে, তারা আসলে কোনপথে? ঐশী মতবাদের প্রতি আস্থা রাখা তাদের পে কঠিন হয়ে পড়ছে। এটা বিশেষত ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের ক্ষেত্রে ঘটছে। কারণ, বিশ্বব্যাপী ইসলামী মতবাদীদের সন্ত্রাসী হিসেবে শনাক্ত করে তাদের নির্মূল করার মিশন আমেরিকা শুরু করেছে। এর ফলে উপসাগরীয় যুদ্ধের ফল হিসেবে স্বাধীনরাষ্ট্র ইরাককে ধূলিস্যাৎ করে, ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসীরা দেখলেন, ঐশীশক্তি এখানে মানবিক শক্তির কাছে পরাভূত। প্রকৃত পক্ষে মানুষের নাশকতামূলক আবিষ্কারের কাছে মানুষের সুকুমারবৃত্তিগুলো সবসময় নিগ্রহের শিকার, নিষ্পেষিত। বিষয়টা মানুষ উপলব্ধি করতে দেরি করে মাত্র। সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের ভূমিতে এই যে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হলো, তার রেশ সাহিত্যিকসমাজেও প্রভাব ফেলেছে সহজে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যে প্রতিবাদ রাষ্টযন্ত্রের সঙ্গে জড়িতরা করতে অক্ষম, সে প্রতিবাদ সাহিত্যিক সমাজ করেন দ্বীগুণ উৎসাহ-আগ্রহে। এর জন্য দৈনিকলগ্ন সাহিত্যপাতাগুলো উপযুক্ত ক্ষেত্রে নয়। ফলে সাহিত্যিকদ্রোহ প্রকাশের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে নতুন-নতুন ছোটকাগজ প্রকাশনা। এ সব ছোটকাগজে সাধারণত কবিতা, জ্বালাময়ী বক্তৃতাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, ছোটগল্প কিংবা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু রাজনীতি সচেতন, সমাজমনস্ক চিন্তককুল তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, প্রকাশ করতে থাকেন রাজনীতিশ্লিষ্ট ছোটকাগজও। এসব কাগজে প্রকাশিত হতে থাকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্ম-উদ্যোগ ও কর্মসূচি।
এরপরও কঠিন সত্য—বাংলাদেশের ছোটকাগজগুলো দৈনিকলগ্ন সাহিত্যপাতার চেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তার কারণও স্পষ্ট—এসব ছোটকাগজ যারা সম্পাদনার দায়িত্বপালন করেছেন, তারা নিজেরা সবাই সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে সমান জ্ঞানার্জনে সমর্থ নন। সাহিত্যের মূল স্রোত মূলত দৈনিকলগ্ন সাহিত্যপাতাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
বিশেষত দৈনিকলগ্ন সাহিত্যপাতা যখন সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে নির্মাণ ও নিরন্তর চর্চার আশ্রয় হয়ে ওঠে তখন, ছোটকাগজের গুরুত্ব আপাতত স্লান হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে আহসান হাবীব দৈনিক বাংলায়, রণেশদাস গুপ্ত দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়, আবু হাসান শাহরিয়ার দৈনিক মুক্তকণ্ঠ-এর খোলা জানালায়, শামীম রেজা দৈনিক আজকের কাগজ-এর সুবর্ণরেখায় সাহিত্যের পরিচর্যা করেছেন যেকোনো ছোটকাগজের চেয়ে অনেক বেশি। এই সাহিত্য সম্পাদকদের সময়ে ছোটকাগজের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল দৈনিকের সাহিত্যপাতা।
ছোটকাগজের বিপণন কম, পাঠকবর্গও কম। ফলে ছোটকাগজে প্রকাশিত লেখা দীতি পাঠকবলয় ও ছোটকাগজকেন্দ্রিক লেখকগোষ্ঠী ছাড়িয়ে সাধারণ পাঠকবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। সঙ্গতকারণে ছোটকাগজের লেখা সাধারণ্যে পৌঁছাতে পারে না। এমনকি দীতিপাঠকও যথাসময়ে প্রকাশিত লেখা পাঠবঞ্চিত থাকেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত পাঠকপ্রতিক্রিয়া উপযুক্ত সময়ে মেলে না।
ছোটকাগজের প্রধান দোষ—ছোটকাগজকর্মী ও লেখকদের মধ্যে গোষ্ঠীবদ্ধতা-গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রাবল্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক মতবাদ, ধর্মীয় বিশ্বাস সাহিত্যিক সততা ছাপিয়ে প্রকটরূপ ধারণ করে। ফলে শুরু হয় মতবাদ ও গোষ্ঠীচর্চা। গোষ্ঠীচর্চার ইতিবাচক-নেতিবাচক—দুই দিকই রয়েছে। ইতিবাচক এই অর্থে যে, সমমনা ও একই আদর্শে উদ্বুদ্ধ সাহিত্যিকেরা একত্র হয়ে একই রকমের একটি ধারা সৃষ্টি করতে পারেন। এর ফলে সৃষ্টি হতে পারে এক বা একাধিক সাহিত্যিক আন্দোলনের ধারা। পরবর্তী কালে ওই ধারা বা মতবাদের অনুসারীও গড়ে ওঠে। ‘হাংরি’, ‘বিট’, ‘ইমেজিস্ট’, ‘সুরিয়ালিজম’ থেকে শুরু করে বাংলার ‘শ্রুতি আন্দোলন’ ও ‘কল্লোল গোষ্ঠী’ এ ধরনের আন্দোলনের ফসল। এদিক থেকে বাংলাদেশে দুটি ছোটকাগজ তত্ত্বনির্ভর। প্রথমটি এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত ‘লিরিক’। কাগজটিকে উত্তরাধুনিকতার চর্চায় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। দ্বিতীয়টি আবু হেনা আব্দুল আউয়াল সম্পাদিত ‘পরাবাস্তব’। পরেরটিতে পরাবাস্তব তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে দেখা গেলেও প্রকাশিত গদ্য-কবিতায় এর সুস্পষ্ট কোনো স্বাক্ষর নেয়। পরন্তু এ দুটি কাগজ তত্ত্বনির্ভর হলেও কাগজদুটিকে ঘিরে কোনো গোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি।
________________________________________________________________________________________________
এ ধরনের গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে সাহিত্য চর্চার ফলে স্তাবকগোষ্ঠী লালনের প্রবণতাও দেখা যায়। ফলে এসব গোষ্ঠীবদ্ধ কাগজে বৃত্তের ক্ষুদ্রকে বৃহৎ, আর বৃত্তের বাইরের বৃহৎকে ক্ষুদ্রজ্ঞানে তাচ্ছিল্য করা হয়। এভাবে কিছু কাগজ গোষ্ঠীপ্রীতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে প্রায়ই। এ প্রবণতার ফলে অপোকৃত দুর্বল লেখকদের মধ্যে পরশ্রীকাতরতার জন্ম নেয়। অন্যের সাফল্য দেখে তাঁরা আঁতকে ওঠে। নিজেদের লেখার প্রভাব পাঠক-সমাজে পড়ে না বলে, ক্রোধোন্মত্ত হয়েও ওঠে তাঁরা। শুরু করে বিভিন্ন ধরণে চাতুর্য প্রদর্শন।
_______________________________________________________________________________________________
মতবাদ বা তত্ত্ব চর্চার নেতবাচকও আছে। এই অর্থে নেতিবাচক যে, গোষ্ঠীবদ্ধ লেখকদের চিন্তা-কল্পনা প্রায় বৃত্তের বাইরে যেতে চায় না। এর ফলে গোষ্ঠীর কম মেধাবীকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু বৃত্তের বাইরের শক্তিমান লেখককেও তারা উপক্ষা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মতবাদ ও তত্ত্ব আশ্রিত হয়ে গোষ্ঠীবদ্ধতার কারণে, মতের বিরুদ্ধের কেউ হলে তার সাহিত্যকর্মের মূল্যায়নেও সাধারণত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে করা হয়। সঙ্গত কারণে সাহিত্যাঙ্গনে সুস্থ সমালোচনার ধারা অনেক সময় ব্যাহত হয়। বিপরীতে শুরু হয় স্তুতি কিংবা নিন্দার ঝড়। এছাড়া এ ধরনের গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে সাহিত্য চর্চার ফলে স্তাবকগোষ্ঠী লালনের প্রবণতাও দেখা যায়। ফলে এসব গোষ্ঠীবদ্ধ কাগজে বৃত্তের ক্ষুদ্রকে বৃহৎ, আর বৃত্তের বাইরের বৃহৎকে ক্ষুদ্রজ্ঞানে তাচ্ছিল্য করা হয়। এভাবে কিছু কাগজ গোষ্ঠীপ্রীতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে প্রায়ই। এ প্রবণতার ফলে অপোকৃত দুর্বল লেখকদের মধ্যে পরশ্রীকাতরতার জন্ম নেয়। অন্যের সাফল্য দেখে তাঁরা আঁতকে ওঠে। নিজেদের লেখার প্রভাব পাঠক-সমাজে পড়ে না বলে, ক্রোধোন্মত্ত হয়েও ওঠে তাঁরা। শুরু করে বিভিন্ন ধরণে চাতুর্য প্রদর্শন।
গোষ্ঠীপ্রীতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হলো—তাদের কাছে নিজেদের চর্চাকাল হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কালখণ্ড। বাদবাকি কাল-মহাকালে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই, থাকলে তার বিপুল পরিমাণ ভুলত্রুটি নির্দেশ করে সম্পাদকীয়-নিবন্ধ প্রকাশ করেন তাঁরা। এর ফলে শুরু হয়, দশকনির্ভর সাহিত্যচর্চাও। এতে বৃত্তের শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিক হিসেবে নিজের নামটি সবার আগে প্রচার করার সুযোগটিও কেউ কেউ নিতে চান। এ ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সৃষ্টি করেন অনুসারী গোষ্ঠী। এই অনুসারী গোষ্ঠীর প্রধান কাজ হলো, গোষ্ঠীপ্রধানের গুরুত্ব বর্ণনা করে ‘প্রবন্ধ’ রচনা করা। আর এ ধরনের প্রবন্ধের মুখ্য উদ্দেশ্য—দলের প্রধানকে বিশেষ দশকের বিশিষ্ট কবি বা সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
তবে, এ ধরনের প্রবণতা সমগ্র ছোটকাগজ চর্চার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। কিছু সংখ্যক ছোটকাগজের ক্ষেত্রে সত্য। বেশির ভাগ ছোটকাগজকর্মীই ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর’ কাজ করেন। সাধনা করেন, নিজের ও সমমনাদের কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ-নিবন্ধকে একত্রে একই মলাটবন্দি করতে।
ছোটকাগজের মূল দায়িত্ব—নতুন লেখকের পরিচয় করিয়ে দেওয়া, তার বিকাশের পথ খুলে দেওয়া, সর্বোপরি প্রকৃত সাহিত্যের পরিচর্যা করা। সঙ্গে পরস্পরের ভাবনাবিনিময়ের সেঁতুবন্ধ তৈরি করা। সৎ-সমালোচনার ধারা তৈরিতে ছোটকাগজই বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
_________________________________________________________________________________________________
বড় কাগজের মুখ্য উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। তাই যে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে বড়কাগজের ভালো কাটতির সম্ভাবনা, বড়কাগজ সে দিকেই ঝোঁকে। গণরুচির উপাচারের জোগান দেয় বড় কাগজ। সমকালীন ঘটনাপুঞ্জকে পুঁজি করে জনমনে প্রভাব বিস্তার করার মতো উত্তাপ ধারণ করার সামর্থ্য বড়কাগজের রয়েছে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, বড়কাগজ সাহিত্যচর্চার দ্রুত কার্যকর মাধ্যম। কিন্তু প্রকৃত ছোটকাগজ কখনোই গণরুচির জোগান দেয় না। বরং রুচি নির্মাণে কাজ করে যায়।
_________________________________________________________________________________________________
অনেক ছোটকাগজকে দেখা যায়, প্রচল স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। কোনো একটি বিশেষ প্রবণতা শুরু হলে প্রায় বেশ কটি ছোটকাগজ সে দিকে ঝুঁকে পড়ে। এতে হয়তো, কোনো একটি বিশেষ প্রবণতার প্রতি পাঠকশ্রেণীকে আকৃষ্ট করা যায়। কিন্তু ওই প্রবাহের সঙ্গে ছোটকাগজের যুক্ত হওয়ার মধ্যে কোনো গর্ব নেই। প্রচল প্রবাহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে বড়কাগজের সাহিত্যপাতা। যেখানে সাহিত্যমূল্যের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বিষয়টির সংবাদমূল্য। অর্থাৎ পাঠক দৈনিকলগ্ন সাহিত্যপাতায় প্রকাশিত রচনা পড়ে সাহিত্যরসের চেয়ে, তথ্য আহরণই করবেন বেশি। এদিক থেকে দেখলে গত বিশ কি বাইশ বছরে প্রকাশিত কিছু কিছু ছোটকাগজের সম্পাদকীয় ও কিছু নিবন্ধ পড়লে করলে বোঝা যায়, এসব ছোটকাগজের মূল উদ্দেশ্য সাহিত্যচর্চা কিংবা সাহিত্যের পরিচর্যা নয়। বড় কাগজের সঙ্গে আদর্শিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া-ই মূল লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বড়কাগজ যা ধারণ করতে অক্ষম, ছোটকাগজ তারই প্রযত্ন। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাক্ষপট ও ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক কারণে বড়কাগজ সবসময় মুক্তচিন্তার পরিচর্যায় সক্ষম হয় না। সামাজিক মূল্যবোধের প্রশ্নে বড়কাগজ যে বিষয়কে আপত্তিকর বিবেচনা করে, ছোটকাগজ সে বিষয় প্রকাশে স্বতঃস্ফূর্ত। কোনো কোনো দীর্ঘ রচনা বড়কাগজের সৌন্দর্য হানি করে, ছোটকাগজের বাড়ায় শিল্পমান। ছোটকাগজ-বড়কাগজের সম্পর্ক বিরোধের নয়, ধারণক্ষমতার। বড় কাগজের মুখ্য উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। তাই যে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে বড়কাগজের ভালো কাটতির সম্ভাবনা, বড়কাগজ সে দিকেই ঝোঁকে। গণরুচির উপাচারের জোগান দেয় বড় কাগজ। সমকালীন ঘটনাপুঞ্জকে পুঁজি করে জনমনে প্রভাব বিস্তার করার মতো উত্তাপ ধারণ করার সামর্থ্য বড়কাগজের রয়েছে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, বড়কাগজ সাহিত্যচর্চার দ্রুত কার্যকর মাধ্যম। কিন্তু প্রকৃত ছোটকাগজ কখনোই গণরুচির জোগান দেয় না। বরং রুচি নির্মাণে কাজ করে যায়।
প্রকৃত ছোটকাগজ যেসব দায় পালন করে, সেগুলো প্রধানত নিম্নরূপ:
১। প্রথাগত রীতির বিপরীতে মৌলিক, যৌক্তিক ও নতুন চেতনার উদ্বোধন।
২। শিল্পমান অক্ষুণ্ন রেখে সাহিত্যের বিভিন্ন প্রকরণের নিরীক্ষাকে প্রণোদিত করা।
৩। সত্য, সুন্দর ও শিল্পের প্রশ্নে আপসহীন থাকা।
৪। চাতুর্য ও ভাবালুতার বিপরীতে প্রজ্ঞা ও মনীষার পথে পরিভ্রমণ করা।
৫। হঠাৎ চিন্তার ঝলকানি নয়; ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ চিন্তা ও মননের পরিচর্যা।
৬। যেকোনো রকমের সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে অবস্থান।
৭। গোষ্ঠীপ্রীতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিপরীতে ঔদার্যের স্বার থাকা।
৮। অপরিচিতকে পরিচিত এবং নতুনের আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেওয়া।
৯। লেখক নয়, লেখার পরিচর্যা করা।
এই দায়গুলো পালনে সব ছোটকাগজ সফল না হলেও বেশ কিছু ছোটকাগজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এখানে প্রতিটি কাগজের নাম উল্লেখ করে কোন কাগজের কী ভূমিকা তা বর্ণনা করা বাহুল্য মনে হওয়ায়, ছোটকাগজগুলোর কেবল প্রবণতাও বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো। পাশাপাশি দৃষ্টান্ত স্বরূপ কিছু নামও দেওয়া হলো। এর মধ্যে মাহমুদ কামাল সম্পাদিত ‘অরণি’, ফারুক সিদ্দিকী সম্পাদিত ‘বিপ্রতীক’, আনওয়ার আহমদ সম্পাদিত ‘কিছুধ্বনি’, ‘রূপম’, খোন্দকার আশরাফ হোসেন সম্পাদিত ‘একবিংশ’, সাইফুল্লা মাহমুদ দুলাল সম্পাদিশ ‘প্রচ্ছদ’, ‘সূচিপত্র’ রিফাত চৌধুরী সম্পাদিত ‘ছাঁটকাগজের মলাট’, আকতার হোসাইন সম্পাদিত পঙ্ক্তিমালা, কমলেশ দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘অন্তরীপ’, ‘কবিকৃতী’, অরুণাভ সরকার সম্পাদিত ‘ঈষিকা’ হাফিজ রশিদ খান সম্পাদিত ‘সমুজ্জ্বল সুবাতাস’, নিতাই সেন সম্পাদিত ‘কালধারা’, শিহাব শাহরিয়ার সম্পাদিত ‘বৈঠা’ সালাম সালেহ উদ্দিন সম্পাদিত ‘অরুন্ধতী’ হেনরী স্বপন সম্পাদিত ‘জীবনানন্দ’, নাজিব ওয়াদুদ সম্পাদিত ‘নন্দন’, রহমান হেনরী সম্পাদিত ‘পোয়েটট্রি’, ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ‘শালুক’, অনিকেত শামীম সম্পাদিত ‘লোক’, আবু মকসুদ সম্পাদিত ‘শব্দপাঠ’, শহীদ ইকবাল সম্পাদিত ‘চিহ্ন’, শাকের উল্লাহ সম্পাদিত ঊষালোকে, রনজু রাইম সম্পাদিত ‘কবিতা সংক্রান্তি’, আযাদ নোমান সম্পাদিত ‘চর্যাপদ’ চন্দন চৌধুরী সম্পাদিত ‘বেহুলাবাংলা’, আমিনুর রহমান সুলতান সম্পাদিত ‘অমিত্রাক্ষর’, জয়দুল হোসেন সম্পাদিত ‘সাহিত্য একাডেমি পত্রিকা’, বীরেন মুখার্জী সম্পাদিত ‘দৃষ্টি’, আবদুল মান্নান স্বপন সম্পাদিত ‘ধমনি’, ইসলাম রফিক সম্পাদিত ‘দোআঁশ’, রবু শেঠ সম্পাদিত ‘পুনশ্চ’, এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত ‘লিরিক’, মনিরুল মনির সম্পাদিত ‘খড়িমাটি’, আক্তার হোসাইন সম্পাদিত ‘পঙক্তিমালা’, মামুন রশীদ সম্পাদিত ‘দ্বিবাচ্য’ শামীম হোসেন সম্পাদিত ‘নদী’, মনজু রহমান সম্পাদিত ‘টোঙ’, গাজী লতিফ সম্পাদিত ‘দূর্বা’ প্রভূতি।
সাহিত্যের নিবিড় চর্চায় এসব ছোটকাগজের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে যে কয়টি ছোটকাগজের নাম উল্লেখ করা হলো, এর বাইরে রয়ে গেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজ। ছোটকাগজ নানা রকম সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সাহিত্যের মূল ধারার স্রোতকে রেখেছে বেগমান। দিন দিন নতুন নতুন ছোটকাগজ আসছে। নিয়ে আসছে নতুন দিনের প্রত্যয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ছোটকাগজের অর্জন ইতিবাচক—এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
বি. দ্র. ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর, বগুড়া লেখকচক্রের সেমিনারে পঠিত।